পবিত্র পাপী সঙ্গমে চোকসি, মাল্য এবং আরও অনেকে

প্রয়াত অরুণ জেটলি সংসদে বিরোধী কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সম্পর্কে হতাশা ব্যক্ত করে বলেছিলেন তাঁর পাটিগণিতের বুনিয়াদি জ্ঞানই নেই। তাঁর যে রাষ্ট্রনীতি, কূটনীতি ইত্যাদি বিষয়েও ভাঁড়ার শূন্য তা তিনি অজ্ঞানেই জাহির করে ফেলেন। ২০১১ সাল থেকে চলতে থাকা গীতাঞ্জলি জুয়েলার্সের মালিক মেহুল চোকসির পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের সঙ্গে চোদ্দো হাজার কোটি টাকা জালিয়াতি করে ভেগে পড়ার দায় তিনি বালখিল্যের মতো বিজেপির ঘাড়ে চাপিয়ে মূর্খামির ধারাকেই বজায় রেখেছিলেন। জানুয়ারী ২০১৮-তে জালিয়াতি ধরা পড়ার গন্ধ পেয়ে চোর পালায়। ফেব্রুয়ারিতেই অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত হয়। একই সঙ্গে রেড কর্নার নোটিশও জারি হয়ে যায়। পিএনবির ধরপাকড় শুরু হয়, বহু রুই কাতলা এখন জেলে। পূর্বতন হাল্লা রাজার আমলে এরা ভালোই করে খাচ্ছিলো। এসব ঘাগু মাল ধরতে সরকারকে আটঘাট বেঁধে এগোতে হয়। তাই দেরি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে এক নির্বাচনী বক্তৃতায় বলেছিলেন দুহাজার চোদ্দোতে জিতে এসে ভ্রষ্টাচারীদের তিনি জেলের দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছেন, এবার সুযোগ দিলে তাদের স্বস্থানে পাঠিয়ে দেবেন। আগামী বছরের মাঝামাঝি শুভ মহরত সমাসন্ন হওয়ার পূর্ব লক্ষণ নজরে আসছে। আধুনিক ভারতের সর্বাপেক্ষা প্রজ্ঞাবান হিন্দুর জাতিশত্রু শ্রী চিদাম্বরম জেল কুঠুরী প্রবেশের মহরত ইতিমধ্যেই করে দিয়েছেন।
দেশে নতুন আইন বলে চোকসির বহু কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। খবর রাখলে এগুলো জানা যাবে। অতীতে কি তেমন শুনতেন। ইনি পালিয়ে আয়তনে মেদিনীপুরের মতো অ্যান্টিগা নামে একটি দেশে আড্ডা গাড়েন। কয়েকশো কোটি লুটের টাকা সে ছোট্ট দেশের ব্যবসায় ঢালবেন বলে নাগরিকত্ব কিনে ফেললেন। অ্যান্টিগা তাঁর কুকীর্তির কিছুই জানতো না। ভারত সরকার সব খোলসা করতেই গত বছর থেকেই তারা আইনি পথে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে। ভারত সরকার প্রতি খুঁটিনাটি তথ্য তাদের হাতে নিয়মিত তুলে দেয়। সদ্য প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী নিউ ইয়র্কে ক্যারিকমের (ক্যারিবিয়ান কম্যুনিটি অ্যান্ড কমন মার্কেট) এক বৈঠক চলছিল। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে হওয়া বৈঠকের পাশে পাশে ভারতে বরাবর প্রশ্রয়প্রাপ্ত চোর ব্যাবসাদারদের ধাত ছেড়ে যাওয়া খবরটি দেন অ্যান্টিগার প্রধানমন্ত্রী গ্যাস্টন ব্রাউনি। তিনি ওই বৈঠকের সভাপতি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে জানান যে অ্যান্টিগাকে তিনি চোর লুটেরাদের আবাসস্থল হতে দেবেন না। তাঁর নীতি ভারতে যে চোর, অ্যান্টিগাতেও সে চোরই থাকবে। তাই দেশের সংবিধান অনুযায়ী আইনি প্রক্রিয়াটা শেষ হলেই চোকসি সে দেশে অবাঞ্ছিত ব্যক্তি (পার্সোনা নন গ্রাটা) হয়ে যাবে। তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে। নাগরিকত্বের অপব্যবহার করে কাউকে দেশে থাকতে দেয়া হবে না। সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন প্রত্যর্পণ শুধু সময়ের অপেক্ষা। সাধু সাবধান। নীরব মোদি ব্রিটিশ জেলে আইনি পাক খাচ্ছে, মাল্যর মামলা বিলেতে খাবি খাচ্ছে। আসছে বছরের গোড়ায় দিন আছে। তবে চোর জাল কাটতে পারবে না বলেই জজ আর্বুথনাটের পর্যবেক্ষণ।
উল্লেখিত মহামানবরা অপেক্ষমান। মিশেল মামাতো ঢুকেই রয়েছেন। এসব জিনিস জানতে মাথা ঘামাতে হবে। রাহুলবাবুর ওপর চাপ পড়বে। তবে এদের মধ্যে মাল্য নামের একাধারে নারীলোলুপ মহামতি আবার দেশের জেলগুলির পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করায় ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যে জেলে মহাত্মা গান্ধী কাটিয়ে গেছেন সেখানে কি মাল্য তাঁর দূষিত দেহ মন রাখতে পারবেন না। যাই হোক, আন্দাজ করতে দোষ নেই দেশের কারাগারগুলি শীঘ্রই বিশেষ স্বচ্ছতা অভিযানে নামবে। ভেদাভেদ ভুলে এতগুলি দিশি, আন্তর্জাতিক পুণ্যাত্মার এক ছাতার তলায় আসা তো চাট্টিখানি কথা নয়। সে এক পবিত্র পাপী সঙ্গম এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।
সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.