মহিলাদের পরিস্থিতি – DRISHTI এর দ্বারা করা একটি বিবরণী

২০১৭-১৮ সালে ভারতের ৫ টি অঞ্চলের ২৯ টি রাজ্য ‚ ৫ টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল এবং ৪৬৫ টি জেলা জুড়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিলো।এর ভেতর আন্তর্জাতিক সীমান্তের সাথে যুক্ত ১৭ টি রাজ্যের ১০৬ টি জেলার মধ্যে ৭০ টি জেলাকে ( ৬৬.০৪%) নিয়ে এই পর্যালোচনাটি চলেছিলো। ১৮ বছরের ঊর্ধে মোট ৪৩২২৫ জন মহিলাকে সামিল করা হয়েছিল এই প্রকল্পে।

  • অপর একটি অনুসন্ধান চালানো হয়েছিল ১৮ বছরের নীচে নাবালিকা মেয়েদের নিয়ে। দেশের ৫ টি অঞ্চলের থেকে ২৫ টি রাজ্য ‚ ২ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ভেতর ২৮৩ টি জেলাতে চলেছিল এই অনুসন্ধান! যেখানে অংশ নিয়েছিল ৭৬৭৫ জন ছাত্রী!
  • এইসব গবেষণায় দেখা গেছে যে বেশিরভাগ মহিলাই বিবাহিতা। আর যারা অবিবাহিতা আছেন তাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ এর মধ্যে।
  • এই অনুসন্ধানে হিন্দু ‚ মুসলিম ‚ বৌদ্ধ ‚ খ্রিস্টান ‚জৈন এবং শিখ – সমস্ত ধর্মের মহিলারাই অংশ নিয়েছিলেন। শিক্ষা-২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে দেখা গেছে নারীদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৬৪.৬৩% । কিন্তু বর্তমান সমীক্ষাটিতে় মহিলা সাক্ষরতার হার ৭৯.৬৩% অর্থাৎ নারীদের মধ্যে শিক্ষার হার বেড়েছে। কিন্তু হার বাড়লেও, এর মধ্যে কয়েকজনই মাত্র স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে!
  • তপশিলী জাতি এবং বিশেষ পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর (OBC) মহিলাদের মধ্যে নিরক্ষরতা বেশি দেখা যায়। কিন্তু আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রের মহিলাদের মধ্যে নিরক্ষরতার হার অনেকটাই কম ।
  • দেখা গেছে যে বিবাহ এবং আর্থিক অসুবিধা হলো মহিলাদের মধ্যে শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হওয়ার প্রধান কারণ ।
  • এটি লক্ষ্য করা গেছে যে ‚ রিজার্ভেশন নীতি এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তাগুলো তফসিলি জাতি, তপশিলী উপজাতি, বিশেষ অনগ্রসর শ্রেণি এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মহিলাদের উচ্চ শিক্ষা অর্জনে বিশেষ সাহায্য করে থাকে!
  • এই গবেষণায় অংশ নেওয়া দুই তৃতীয়াংশ মহিলারা নিজেদের আগ্রহের ক্ষেত্রটি বলতে অক্ষম বলে মনে করেন , যা নির্দেশ করে যে, প্রাচীনপন্হী ধ্যানধারণার পাশাপাশি পারিবারিক কাজকর্মের চাপ এবং বাড়িতে একাধিক ভূমিকা পালন করার প্রবণতা মহিলাদের তার আগ্রহের ক্ষেত্র সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করতে বাধা দেয়। বেশিরভাগ উত্তরদাতারাই বলেছেন যে তারা তাদের আগ্রহের ক্ষেত্রটি সম্পর্কে ভাবেনওনি।
    -আরও যে লক্ষ্য করার মতো তা হলো , এক চতুর্থাংশেরও বেশি উত্তরদাতারা তাদের জীবনে কোনো অবসরকালীন সময় পাননা।

কর্মসংস্থান -দেখা গেছে যে নারী কর্মসংস্থানের হার তপশিলী জাতিদের মধ্যে সবথেকে বেশি ! আবার উল্টোদিকে মহিলা বেকারত্বের হার জেনারেল ক্যাটেগরিদের মধ্যে সর্বাধিক!

  • চাকুরীজীবী নারীদের মধ্যে অনেকেই দাবি করেছেন যে তাদের কর্মস্থলে কোনো ক্যান্টিন, পরিবহন ব্যবস্থা এবং বিশ্রাম কক্ষের সুবিধা নেই। এদের মধ্যে ৬০ শতাংশেরও বেশি মহিলা লোন পাওয়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত!
  • সমীক্ষায় দেখা গেছে, খ্রিস্টান নারীদের মধ্যে কর্মসংস্থানের হার সবচেয়ে বেশি, তারপরে একের পর এক রয়েছে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, জৈন, শিখ নারীরা। স্বাস্থ্য ও পুষ্টি– সমীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রায় অর্ধেক মহিলারা দিনে দুবার খাবার পায় ‚ আর মাত্র ৩.৭ শতাংশ মহিলারা দিনে একবার মাত্র খাবার গ্রহণ করতে পারে। এবং আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রের মহিলাদের ক্ষেত্রে এই হার প্রায় দশমাংশ।
  • ১৮ বছরের কম বয়সের মেয়েদের মধ্যে, ঋতুস্রাবের সমস্যাটি সবচেয়ে বড় সমস্যা এবং তাদের 64 শতাংশেরও বেশি এতে আক্রান্ত হয়। তাদের হওয়া রোগের মধ্যে আর্থ্রাইটিস রয়েছে দ্বিতীয় নম্বরে এবং তাদের মধ্যে পনের শতাংশের বেশী এতে আক্রান্ত হয়। আর অদ্ভুতভাবে তাদের মধ্যে কয়েকজন রক্তচাপ (৫.২৮%), হার্টের সমস্যা (৩.০৭%), ডায়াবেটিস (১.৬২%) এবং ক্যান্সারে (০.৫২%) ভুগছেন।
    • গবেষণায় অংশ নেওয়া প্রায় চল্লিশ শতাংশ মহিলা গত দুই বছরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রের মহিলাদের মধ্যে এর পরিমাণ অনেক বেশি। ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার যথেষ্ট বেশী !
  • আরও দেখা যায় যে, যেসমস্ত মহিলারা স্বাস্থ্য সমস্যায় রয়েছেন তাদের বেশিরভাগই উপজাতি জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত ।
  • এই সমীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রায় আশি শতাংশ মহিলা সুখে রয়েছেন এবং তাদের সুস্থ থাকার হাত খুব বেশী ।আবার আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রের মহিলারা সমস্ত উত্তরদাতাদের মধ্যে সবথেকে বেশী সুখে আছে বলে জানিয়েছেন!
  • দেখা গেছে সুখে থাকা মহিলাদের মধ্যে বিবাহিতা মহিলাদের সংখ্যা সবথেকে বেশি যেখানে লিভ ইন রিলেশনশিপে রয়েছেন এমন নারীদের মধ্যে সুখে থাকারপরিমাণ সবচেয়ে কম!
  • নিজের কোনো পরিবার নেই ‚ এমনকি নিজের কোনো আয়ও নেই এমন নব্বই শতাংশের বেশি উত্তরদাতা অত্যন্ত সুখে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন যেখানে ১০,০০০ / – এর নিচে পারিবারিক উপার্জন রয়েছে এমন মহিলাদের সুখে থাকার হাত যথেষ্ট কম।
    এই ঘটনা এই ইঙ্গিতই দেয় যে সুখ এবং সুস্থ থাকার উপর আয়ের কোনও প্রভাব নেই।

প্রস্তাবনা
১- মহিলাদের মধ্যে ভোটার কার্ড সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
২. উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মহিলাদের আধার কার্ড পাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা উচিত!

৩-. উত্তর ভারতের মহিলাদের নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ব্যবস্থা করা উচিৎ! শহরের বস্তিতে থাকা মহিমা এবং উপজাতি মহিলাদের জন্য একই ব্যবস্থা করা উচিৎ যাতে তারা সরকারের বিভিন্ন স্কিমের দ্বারা উপকৃত হয়।
৪-আদিবাসী মহিলাদের ভেতর সাক্ষরতার হার বাড়াতে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন!
৫- তাদের পাঠ্যসূচিগুলি এমন ভাবে তৈরী করা উচিৎ করা উচিত যাতে তাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার সাথে তারা এর মিল খুঁজে পায়।
৬-পাঠ্যক্রমের বিষয়বস্তুগুলি জীবন দক্ষতা, শারীরিক সুস্থতা, মূল্যবৃত্তি, দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণের সাথে সম্পর্কিত হতে হবে এবং এটি শিক্ষাক্ষেত্রের সমস্ত স্তরে চালু করা উচিত।
৭- সরকার (কেন্দ্রীয় বা রাজ্য) এবং এনজিও গুলিকে জেনারেল কাস্টদের উচ্চ বিদ্যালয়ে ‚ সিডিউল কাস্টদের প্রাথমিক স্তরে এবং সিডিউল ট্রাইবদের মধ্য বিদ্যালয় স্তরে ড্রপআউট হওয়ার হার কমানোর কর্মসূচিতে মন দেওয়া উচিৎ!
৮- বেসরকারী সংস্থাগুলিকেও ( NGO ) সমাজে এবং পরিবারে লিঙ্গ সমতা আনার জন্য সচেতনতা কর্মসূচীর আয়োজন করতে হবে।
৯- মহিলাদের মধ্যে কম্পিউটার ব্যবহার করার হার কম এবং তারা পিএমকেভিওয়াই স্কিম সম্পর্কে সচেতন নয় । এছাড়াও এতে নিবন্ধকরণ প্রক্রিয়াটি অনলাইনে হওয়ায় তারা এই প্রকল্পটি থেকে উপকৃত হতে পারে না। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কম্পিউটার ব্যবহার শেখানোর জন্যে এবং স্কিমটির অফলাইন কোর্স পরিচালনা করার জন্য মহিলাদের আলাদা শাখা খোলা উচিৎ!
১০- বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যুক্ত দক্ষতা প্রশিক্ষণের কর্মসূচীগুলো আরও বেশি পরিমানে আয়োজন করতে হবে। এটি কর্মসংস্থানে মহিলাদের অংশগ্রহণ ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে!
১১- দক্ষতা প্রশিক্ষণ গুলো এমন হওয়া উচিৎ যাতে এগুলো মহিলা দের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে এবং তারা নিজেরাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে । দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম কেন্দ্রগুলি কর্মসংস্থান এজেন্সিগুলির সাথে সংযুক্ত করা উচিত।
১২- তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সাথে সম্পর্কিত প্রকল্পেগুলো সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে এবং এটি সম্পর্কে মহিলারা যাতে সচেতন হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
১৩- মহিলাদের জন্য অফলাইন প্রোগ্রাম করা উচিত।
১৪. জাতি-বর্ণ ও বৈবাহিক অবস্থা নির্বিশেষে, পরিষেবা খাতে সকল ধরণের মহিলাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স মাপদণ্ড শিথিল করতে হবে করতে হবে। বেশিরভাগ মহিলারাই বেকার এবং বিয়ের প্রথম পর্যায়েই দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ব গ্রহণের জন্যে তাদের অন্যত্র কাজ করার জন্যে যেতে হয়!
১৫- অসংগঠিত ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থান লক্ষ্য রাখার জন্য একটি মনিটরিং এজেন্সি থাকতে হবে। অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত এবং প্রশিক্ষণহীন নারী শ্রমিকদেরই বেশি শোষিত হতে দেখা যায়।
১৬- প্রতিটি স্তরে অভ্যন্তরীণ অভিযোগগুলো কার্যকর করার জন্যে কমিটি থাকা প্রয়োজন।
১৭ -স্কুল লেভেল থেকেই কর্মসংস্থানের লক্ষে দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। নিরক্ষর ও স্নাতকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত
১৮- সমস্ত শ্রেণীর মহিলা দের জন্যে ভরপেট খাবারের গুরুত্ব এবং ডায়েটের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত করা উচিৎ!
১৯- কিশোরী মেয়েদের জন্যে সচেতনতা প্রচারের কর্মসূচী নেওয়া উচিৎ! দেখা গেছে যে ৬০ শতাংশেরও বেশি কিশোরী ঋতুস্রাবজনিত সমস্যায় ভুগছেন।
২০- আর্থ্রাইটিস এবং রক্তচাপ প্রতিরোধের ও নিরাময়ের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্মসূচীর আয়োজন করা দরকার্।
২১- আদিবাসী মহিলাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা গ্রহণ করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.