ছোটবেলা থেকে বাঙাল আর শহীদের মিল সংক্রান্ত জোকসটি শোনেনি এমন বাঙালি বোধহয় খুব কমই আছে। কিন্তু খুব কম জনাই বোধহয় এই জোকসের হাসির অন্তরে যে বুকফাটা হাহাকার আছে তা উপলব্ধি করেন বলার সময়।

এই হাহাকার তার উৎপত্তিস্থল বুঝতে গেলে বোধহয় একটু পিছিয়ে যেতে হবে। একটু খুঁড়ে দেখতে শিকড়। যেতে হবে একটু গোড়ায়। তবেই হয়ত উপলব্ধি করা সম্ভব হবে বাঙালির বুকফাটা হাহাকারের উৎস।

যদি প্রশ্ন করা হয় বাংলাদেশ আর পশ্চিমবাংলার মধ্যে মিল কোথায়, সমস্বরে সবাই উত্তর দেবেন আমাদের ভাষা এক, বাংলাভাষা। আমরা সবাই বাংলাভাষী।

এবার যদি প্রশ্ন করি, বলুন তো, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু আর পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘুর মধ্যে অমিল কোথায়?

একটু থমকে গেলেন তো। ভাবছেন এ আবার কিরকম প্রশ্ন? সংখ্যালঘু এটাই তো একটা মিল। এটা আবার প্রশ্ন করে জানার কি আছে।

বেশ কয়েকটা শুষ্ক তথ্য, পরিসংখ্যান তুলে ধরি আপনার সামনে।
১৯৫১ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ ছিল হিন্দু জনসংখ্যা। ২০২২ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৭.৯ শতাংশ হিন্দু জনসংখ্যা। পশ্চিমবঙ্গীয় কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন তারা বলেন বাংলাদেশের হিন্দুদের উপরে যা অত্যাচার করেছে তা করেছে উর্দুভাষী পাকিস্তানিরা। বাকী বৌদ্ধ, খৃষ্টান জনসংখ্যার কথা না তোলাই ভালো। কমতে কমতে তা আজ সে দেশের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশেরও কম।

অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গে দেখুন, ১৯৫১ সালে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল প্রায় ষোল শতাংশ, বর্তমানেও ৩০ শতাংশের কিছু বেশী। একইভাবে ভারতবর্ষের ক্ষেত্রেও ১৯৫১ সালে ৯.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে আজ প্রায় পনেরো শতাংশ। অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রেও বৃদ্ধির হার বজায় আছে।

কি এবার অমিল খুঁজে পাওয়া গেল কিছু। নাকি এখনও আপনার কানের কাছে বাজছে একদল সুবিধাবাদীর ডায়লগ, “সংখ্যালঘুরা দুই দেশেই অত্যাচারিত”?

এরাই এককালে আমাদের বোঝাতেন বাংলাদেশের থুড়ি পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের উপরে যে অত্যাচার হয়েছে তা সবই উর্দুভাষী পাকিস্তানিদের হাতে। ১৯৭১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের অপার সম্প্রীতি বিরাজ করছে। কিন্তু সংখ্যাতত্ত্ব একটু ঘাঁটলে দেখা যায় ১৯৭৪ সাল থেকে এযাবৎ বাংলাদেশের হিন্দু জনসংখ্যা কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে, ১৩.৫ শতাংশ থেকে কমে তা এখন ৭.৯ শতাংশ।

এই অপার শান্তির কাহিনীটি প্রথম ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয় তসলিমা নাসরিনের লেখায়। দেখা যায় যে শুধুই উর্দু ভাষী পাকিস্তানিরা নয়, “বাংলাভাষী” বাংলাদেশিরাও হিন্দুদের উপরে অত্যাচারে একই রকম সিদ্ধহস্ত।

সত্যি প্রকাশের দাম তসলিমাকে যথেষ্ট চোকাতে হয়েছে। দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, এমনকি ভাষার টানে পশ্চিমবাংলায় থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো তথাকথিত “বাঙালির অভিভাবকরা” নিজেদের বিষাক্ত দাঁত, নখ বার করে তার উপরে আক্রমন করে বাধ্য করেছেন বাংলার মাটি ছাড়তে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যের মতো “সংস্কৃতিবান”, “রুচিশীল” মুখ্যমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় জেহাদী হাঙ্গামা হয়েছে কোলকাতায়। তাদের কারুর শাস্তি হয়নি। সরকার পাল্টেছে, কিন্তু নীতি একই থেকেছে। সেদিনের সেই হাঙ্গামাকারীদের নেতা আজকের সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন। বর্তমানের সরকার খুব “যত্নসহকারে” নিশ্চিত করেছে যাতে তসলিমা কোনভাবেই বাংলার মাটিতে পা না রাখতে পারেন।
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক একজন তসলিমাকে নিয়ে এতো হাঙ্গামা কেন?

কিছুদিন আগে বর্তমান সময়ের এক বিখ্যাত সাহিত্যকের একটি উপন্যাস পড়ছিলাম। বিষয় উদ্বাস্তু দুই মানুষের শেষ বয়সের কাহিনী এবং তাদের বর্তমান প্রজন্মের কথা। পড়তে পড়তে হটাত এক জায়গায় চোখ আটকে গেল। হিন্দুদের উপরে অত্যাচারের বর্ণনার সময়ে লেখা হয়েছে, “পাঞ্জাব থেকে আসা হানাদারেরা দাপাতে লাগল পদ্মা নদীর পাড়ে”। খুবই বিনীত প্রশ্ন করা যায় এক্ষেত্রে, গোলাম সারওয়ার কি পাঞ্জাব থেকে এসেছিল? নোয়াখালীর দাঙ্গা কি উর্দুভাষী পাকিস্তানিরা করেছিল?

এই যে ভন্ডামি, এটাই এখন সেকুলারিজিমের আধুনিক বাংলা মানে। এখানে সেকুলারিজিম মানে ধর্ম নিরপেক্ষতা নয়, সেকুলারিজিম মানে হোল ধর্ম বেছে বেছে মতামত দেওয়া। এরাই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অত্যাচারের নিন্দা না করলেও যখন প্রসঙ্গ একেবারেই এড়াতে পারেনা, তখন বলে, “দুই দেশেই সংখ্যালঘুরা অত্যাচারিত”।

এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে তথ্য অনেক সহজলঘ্য, ঘটনার বিবরণ অনেক বেশী প্রত্যক্ষ। তাই আমরা দেখতে পাই কিভাবে বাঙালির প্রধান উৎসব দুর্গোৎসবে বাংলাদেশের হিন্দুরা আক্রান্ত হচ্ছেন। কিভাবে প্রতিনিয়ত মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাদের ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিভাবে প্রতিদিন তারা দেশের মধ্যে থেকেও দেশ হারা হচ্ছেন।

অপরিকে দেখুন পশ্চিমবঙ্গের বা ভারতবর্ষের অবস্থা। মনে করুন সিএএ বিরোধী আন্দোলনের কথা, মনে করুন নূপুর শর্মা বিরোধী আন্দোলনের কথা। মনে করুন নিকিতা তোমরের কথা, মনে করুন শ্রদ্ধার কথা। মনে করুন বসিরহাট, দেগঙ্গা, ধূলাগড়, কালিয়াচকের কথা।

আসলে কি জানেন পশ্চিমবঙ্গে কোন সংখ্যালঘু নেই। এখানে আছেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে আমাদের সহনাগরিকরা। অপরদিকে বাংলাদেশের চিত্র প্রতিদিন যা আমরা দেখছি তাতে যদি বলি সেদেশের সংখ্যালঘুরা সেখানে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক, তাহলে মনে হয়না অত্যুক্তি করা হবে। তবে হ্যা আমাদের দেশে বা বিশেষত আমাদের রাজ্যে সংখ্যালঘু না থাকলেও কিছু সংখ্যাঘুঘু অবশ্যই আছেন। সেই সংখ্যাঘুঘুরা কারুর কারুর জন্য “দুধেল গোরু”, তাই তাদের হুকুম তারা যেহেতু দুধেল গাইয়ের দুধ পাচ্ছেন, আমাদের অর্থাৎ সাধারন হিন্দুদের তাই লাথ খেতে হবে। তেহট্টে সরস্বতী পুজো বন্ধ, দুর্গা পুজোর বিসর্জনের নির্ঘন্ট পালনে বাধা সেরকমই এক একটা লাথ। এদের দাবী আমাদের সেই লাথ খেতে হবে। আর লাথ খেতে না চাইলেই আমরা সাম্প্রদায়িক।

এই “সেকুলার সমাজসেবকরা” আমাদের বোঝাতে চান, এসবের পরেও আমাদের ভাষার টানে সব ভুলে যেতে হবে। বুকে জড়িয়ে নিতে হবে সবাইকে। ভাষার টান? কিরকম ভাষা? একটু উদাহরন দিই।

“ফজরে উঠিয়া আমি দিলেদিলে কই,
হররোজ আমি যেন শরিফ হইয়া রই।
মুরুব্বিগন যাহা দেন ফরমান,
খিদমত করি তার করি সম্মান।”

বলুন তো এর মধ্যে বাংলা কোথায়?

আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন এগুলোকেও নাকি আমাদের বাংলা বলে মেনে নিতে হবে, কারন তাতে নাকি ভাষার সমৃদ্ধি ঘটবে। বেশ কথা, তাহলে পিতাজী, মাতাজি, ভাইয়াজি, বহেনজি, এগুলোকেও বাংলা বলে মেনে নেওয়া হোক। পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক দুরাবস্থার কারনে, আজকে বহু বাঙালি কর্মসূত্রে ভিন রাজ্যে যায়। সেখানে এই শব্দগুলি তারা বহুল ব্যবহার করেন। তাই আব্বা, আম্মা যেমন বহু “বাঙালি” বলেন, এই শব্দগুলোও বহু বাঙালি প্রতিনিয়ত বলতে বাধ্য হন। সেক্ষেত্রে এগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হোক আগ্রাসনের থিয়োরী না দিয়ে।

আসলে এটাই আগ্রাসন। প্রথম আগ্রাসন হোল হিন্দুদের সে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা। হিন্দু জনসংখ্যা কমতে কমতে নগণ্য হয়ে যাওয়া। এই আগ্রাসনের পরের ধাপ হোল, অনুপ্রবেশ। সেই অনুপ্রবেশকেই স্বাভাবিকতা দেওয়ার জন্য এই ভাষার আগ্রাসন। যাতে সাধারন মানুষের অস্বাভাবিক না লাগে। সেই কারনেই মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলছেন “ওপার থেকে যারা এসেছে তারা সযত্নে এই শব্দগুলিকে রক্ষা করছে, তাই মান্যতা দিতে হবে”। ওপার থেকে কারা এসেছে? বাঙালি হিন্দুরা। কোন বাঙালি হিন্দুকে আপনি কোনদিন শুনেছেন নিজের মাকে আম্মা বলে ডাকতে বা বাবাকে আব্বা বলতে? জল তেষ্টা পেলে বলতে শুনেছেন, পানি দাও। তাহলে? মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে এই চল আছে নাকি? না যে বুদ্ধিজীবীরা মুখ্যমন্ত্রীকে সমর্থন করছেন তাদের বাড়িতে চল আছে?

তাহলে কাদের আসার কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী? অনুপ্রবেশকারীদের? আসলে কি এভাবেই ভাষার আড়ালেই অত্যাচারিত আর আর অত্যাচারীর মধ্যের ফারাক গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি?

ভাষা একটি মিল বটে। কিন্তু ঘৃণা ভরে বলি উর্দু অনুসরণকারী, নিজেকে খাঁটি প্রমান করতে চাওয়ার তাগিদে বলা এই খিচুড়ি আমার ভাষা নয়। এ আমার বাংলা নয়। আমার বাংলা হোল যা বীরভূমের রাঙা মাটিতে বলা হয়, আমার বাংলা যা পুরুলিয়ার পাথুরে জঙ্গলে বলা হয়, আমার বাংলা যা আজ থেকে মাত্র ৭৫ বছর আগে চট্টগ্রামের বলা হোত, নোয়াখালী বা বড়িশালে বলা হতো।

কথার মধ্যে শুধুমাত্র কিছু করি, খাই, যাই জুড়ে দিলেই তা বাংলা হয়ে যায়না। তাহলে “আমি তোমাকে ভালোবাসে”, একেও বাংলা বলে মান্যতা দিন।

বাঙালি হোল সেই যার বাড়িতে ধানের মড়াইতে মঙ্গল চিহ্ন আঁকা থাকে। বাঙালি সে নয় যে প্রতিবেশী হিন্দুটির জমি দখল করে নেওয়ার জন্য ধর্ম অবমাননার অছিলায় তার বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। বাঙালি হোল সে যে দুর্গা পুজোয় শত কাজ ফেলে নিজের শিকড়ে ফেরে। বাঙালি সে নয় যে অষ্টমীতেই দুর্গা মূর্তি ভাঙায় মত্ত হয়ে ওঠে। বাঙালি হোল সে সরস্বতী পুজোয় হলুদ শাড়ি অথবা পাঞ্জাবী পরে অঞ্জলি দিতে যাবে। বাঙালি সে নয় যে ধর্মনিরপেক্ষতার অজুহাতে সরস্বতী পুজো বন্ধের জন্য হাঙ্গামা খাড়া করবে।

ফজরে উঠিয়া, গোসল করিয়া, নাস্তা করিয়া, আপার বাড়িতে দাওয়াতে খেতে যাওয়ার মধ্যে নকলনবিশী থাকতে পারে, কিন্তু বাঙালিয়ানা নেই।
একে এক করতে চাওয়ার মধ্যে অত্যাচারিকে আড়াল করতে চাওয়ার ভন্ডামি থাকতে পারে, কিন্তু সততা নেই।

বাঙালির একটা তুলসী মঞ্চ থাকবে, সন্ধ্যের শাঁখ থাকবে, লাল পাড় সাদা সাড়ি থাকবে, শিবরাত্রির দিনের স্নিগ্ধ সাজ থাকবে, তুসু, ভাদু থাকবে। ইতুর পুজো থাকবে। এগুলো বাঙালির ধর্ম নয় শুধুমাত্র, এগুলো বাঙালির ঐতিহ্য, উত্তরাধিকার। এবাদ দিয়ে বাঙালি হতে পারেনা, হওয়া সম্ভব নয়। বাঙালির সন্তান থাকবে দুধে ভাতে, গোস্ত বিরিয়ানীতে নয়।

এই ঐতিহ্য, উত্তরাধিকারকে রক্ষা করতে চাওয়ার জন্য যারা দেশ ছেড়েছেন তারা আমার মানুষ। আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য তাদের দেশ দেওয়া।

একসময় বামেরা বাংলাদেশের বিঘার পর বিঘা জমি, সমুদ্রের সমান পুকুর, এসব খুব লিখত সাহিত্যের নামে। এমন এক প্রাচুর্যের ছবি দেখানো হতো যা একেবারেই অবাস্তব। ফলে সে নিয়ে হাসাহাসির অন্ত ছিলনা। কিন্তু এর আড়ালে লুকিয়ে রাখা হতো সেই হতদরিদ্র মানুষগুলোর কথা, যাদের জমিজমা কিছুই ছিলনা, কিন্তু তারাও দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল শুধুমাত্র তারা নিজেদের ধর্ম ছাড়তে রাজী হয়নি বলে, নিজের ঘরের মেয়েটার মান সম্ভ্রম লুটিয়ে দিতে রাজী হয়নি বলে। বামেরা এদের নিয়ে রাজনীতি করেছে, পরবর্তীকালে মমতা ব্যানার্জীর অতিবাম সরকারও এদের নিয়ে রাজনীতি করেছে, কিন্তু এদের অধিকারের কথা কেউ বলেনি।

কেউ বলেনি ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ হয়েছে শুধুমাত্র সেদেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য। সেদেশের সংখ্যালঘুরা এখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতা পায়নি, তারা এখনও পূর্ব পাকিস্তানেই রয়েছে। সেখান থেকে অত্যাচারিত হয়ে তারা প্রতিনিয়ত নিজেদের ভিটে মাটি ছেড়ে, শিকড় ছিঁড়ে এসে হাজির হচ্ছে আমার উঠোনে। আমার দেশের মাটিতে। এরা আসলে আমাদের দেশহীন দেশবাসী। নাগরিকত্বহীন সহনাগরিক আমাদের। তাই এদের অধিকার সুনিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য। এদের মাটি দেওয়া, এদের উত্তর প্রজন্মকে শিকড় দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। ভাষা নয়, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, পরম্পরাই ভাতৃত্বের শিকড়। এগুলোই মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ।

ভাষার কথাই যদি বলা হয় তাহলে তো যারা এদের দেশ ছাড়া করেছে তারাও “মালাউনের বাচ্ছা দেশ ছেড়ে চলে যা” বলেই তাড়িয়েছে।

শহীদের সাথে বাঙালের তুলনা করে জোকস বানানো হয়, কিন্তু মনে করুন গনেশ ঘোষ, লীলা রায়ের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামী যারা দেশের জন্য নিজেদের সবটুকু উৎসর্গ করেছিলেন। যারা দেশের জন্য কালাপানি পার করে সেলুলার জেলে মনুষ্যতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়েছেন তারাও কিন্তু একই ভাবে উদ্বাস্তু হয়ে এদেশে এসেছেন “বাঙাল” পরিচয়ে।

ভাষা নয়, আমাদের ভাতৃত্ববোধই আমাদের সংযুক্ত করে। তাই আজ আমরা এদের নাগরিকত্বের দাবীকে সমর্থন না জানালে তা আমাদের অপরাধ হবে। আজ আমরা ভাষার উপরে এই আগ্রাসনকে মেনে নিলে কাল একইভাবে আমাদের দেশের মধ্যেই দেশহীন হয়ে উদ্বাস্তু হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। তাই নিজের ভাষাকে ভালোবাসুন, কিন্তু আরও বেশী ভালোবাসুন নিজের সহনাগরিকটিকে। যিনি আপনার মতো একই ভাবে বিশ্বাস করেন,

“সপ্তকোটীকন্ঠ-কল-কল-নিনাদকরালে
দ্বিসপ্তকোটীভুজৈধৃতখরকরবালে
অবলা কেন মা এত বলে
বহুবলধারিণীং
নমামি তরিণীং
রিপুদলবারিণীং
মাতরম্
ত্বং হি দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী
কমলা কমল-দলবিহারিণী
বাণী বিদ্যাদায়িণী
নমামি ত্বাং
নমামি কমলাম্
অমলাং অতুলাম্
সুজলাং সুফলাং
মাতরম্
বন্দে মাতরম্
শ্যামলাং সরলাং
সুস্মিতাং ভূষিতাম্
ধরণীং ভরণীম্
মাতরম্
বন্দে মাতরম্”

দীপ্তস্য যশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.