শুধু ভারত (India) কেন, গোটা দুনিয়ার ভ্রমণবিলাসী মানুষদের প্রিয় ডেস্টিনেশন এই ভেনিস (Venice)। ইতালির (Italy) এই ঐতিহ্যবাহী খালে বলিউড থেকে টলিউড, কত অভিনেতা-অভিনেত্রী ক্যামেরার সামনে পোজ দিয়েছেন। সেই ভেনিসের খালে (Venice Canals) এখন আর জল নেই। শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। ইতালির এই ঐতিহাসিক শহরে এখন আর বৃষ্টি হয় না। তাছাড়া হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডা, ভাটা ভেনিসের এই খালগুলোকে শুকিয়ে দিয়েছে।
ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় শহর ভেনিস জুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য খাল। এই খালের ভেনিস পর্যটকদের কাছে যেন স্বর্গরাজ্য। খালে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য পর্যটকরা ভিড় করত। কিন্তু খালগুলোয় এখন আর জল নেই। চারিদিকে শুধু কাদার পাঁক। সেই কাদায় আটকে রয়েছে একাধিক নৌকা। যেগুলোকে স্থানীয় ভাবে বলা হয় ‘গন্ডোলা’।
শীত, ভাটা এবং বৃষ্টির অভাবের কারণে শুকিয়ে যাচ্ছে এসব খাল। শীত যত বাড়ছে ভেনিসের গন্ডোলা ব্যবসায়ীদের চিন্তা আরো বাড়ছে। শীতের সঙ্গেই খালে পাল্লা দিয়ে নামছে জলের স্তর। যদিও বিবিসির প্রতিবেদনের দাবি, “ভেনিসজুড়ে এমন পরিস্থিতির জন্য উচ্চচাপ, পূর্ণচন্দ্র ও সমুদ্রস্রোতসহ কিছু কারণ রয়েছে।
ভেনিস সিটি কাউন্সিলের স্রোতসংক্রান্ত বিভাগে প্রধান আলভিস পাপা জানান, খরার কারণে হ্রদ ও নদীতে জল কমে গিয়েছে। ভূমধ্যসাগরে উচ্চচাপসহ এমন একটি পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যার প্রভাবে বৃষ্টি কম হচ্ছে। ভাটা পড়ছে। তবে ভেনিসের বড় বড় খালগুলোতে এখনও কোনওরকম জলের জোগান স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। শহরের অপেক্ষাকৃত ছোট খালগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত, জোয়ারের টানে ভেনিসের খালগুলো জলে ভরে থাকে। কিন্তু এবারের শীতে ভাটার টানে জল কমে গিয়েছে। এরমধ্যে আবার বৃষ্টি নেই।
ভেনিসে গন্ডোলা চড়ার সবচেয়ে নামী জায়গার নাম ‘সেন্ট মার্কস স্কোয়ার’। সেখানেও একের পর এক গন্ডোলা কাদায় আটকে আছে। শহরটির জরুরি স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান পাওলো রোসি বলেন, “বেশির ভাগ জায়গায় আমরা অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। হেঁটে রোগীদের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে।”
লিগামবিয়েন্তে নামে একটি পরিবেশবাদী গোষ্ঠী জানিয়েছে, ইতালির নদী-নালাগুলো প্রচণ্ড জলের অভাবে ভুগছে। বিশেষ করে দেশটির উত্তর দিকের অবস্থা খারাপ। ইতালির সর্ববৃহৎ নদী ‘পো’, যেটি আল্পস থেকে বয়ে উত্তর-পূর্ব দিকের আদ্রিয়াকের দিকে বয়ে গিয়েছে। সেই পো নদীতে এখন সাধারণ সময়ের চেয়ে ৬১ শতাংশ কম জল রয়েছে বলে জানিয়েছে লিগামবিয়েন্তে।
খরা পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারণ করার পর গত বছর পো নদীর আশপাশের অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। ওই পো নদীর ওপর নির্ভর করেই ইতালির এক তৃতীয়াংশ কৃষি পণ্য উৎপাদিত হয়। গত বছর পো নদীতে গত ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা দেখা যায়। ইতালির বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বর্তমান এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ইতালিতে অন্তত ৫০ দিন মুষলধারে বৃষ্টির প্রয়োজন।