বাংলাদেশের যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার শ্রীধরপুর গ্রামের প্রাচীন জমিদারবাড়ি প্রাঙ্গণে অবস্থিত প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো দুইটি মন্দির রয়েছে। একটি শিবমন্দির অন্যটি শ্যামামন্দির। দীর্ঘকাল সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে এবং অযত্ন-অবহেলায় ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এই দুইটি মন্দির।
জমিদার বনমালী বসু আনুমানিক ১৭৫৬-১৭৫৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি থেকে এই অঞ্চলে এসে প্রায় ৫০ একর জমি ক্রয় করে সেখানে বসতবাড়ি, বৈঠকখানা, নাট্যশালা ইত্যাদি নির্মাণ করান এবং পাশাপাশি দুইটি বড় দিঘি খনন করিয়ে শানবাঁধানো ঘাট স্থাপন করেন। পরবর্তীতে পারিবারিক পূজার্চনার উদ্দেশ্যে সেই দিঘীর পাড়ে পাশাপাশি প্রতিষ্ঠা করেন শিবমন্দির ও শ্যামামন্দির। ইট ও চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত এই মন্দিরগুলি ছিল সেই সময়ে এই অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য। জমিদারী আমলে এই দুটি মন্দিরের নিত্যপুজা এবং বাৎসরিক পূজা ছিল এলাকার প্রজাদের জন্য মহাউৎসব। সারা বছর পূজা-পার্বন এবং ছোট-বড় নানা উৎসব-আয়োজনে মুখরিত থাকত এই মন্দিরগুলি। জমিদারবাড়ির সদস্যরা ছাড়াও এলাকার এবং দূরদূরান্তের নারীপুরুষ ও পুণ্যার্থীগণ অংশগ্রহণ করতেন সেইসব পূজার্চনায়। শঙ্খঘন্টার শব্দ এবং উলুধ্বনিতে নিত্য মুখরিত হয়ে উঠতো পুরো এলাকা।
জমিদারীপ্রথা বিলুপ্তির পরেও অনেক বছর এখানে পূজার জাঁকজমক বজায় ছিল। কিন্ত সময়ের সাথে সাথে এখন সেই ঐতিহ্য হারিয়ে এই দুইটি প্রাচীন স্থাপত্য ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে অগ্রসর হচ্ছে। জমিদার বাড়ির অধিকাংশ জমি আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। সেই জমিদারবাড়িও নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে কালের করাল গ্রাসে। শুধু রয়ে গিয়েছে দুইটি দিঘী এবং দিঘীর পাড়ে অবস্থিত প্রাচীন শিবমন্দির ও শ্যামামন্দির দুইটি।
স্থানীয় তিনটি পরিবার এখনো এই মন্দিরগুলিতে নিত্যসেবার কাজ কোনরকমে চালু রেখেছে। স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণে বার্ষিক শ্যামাপূজা এবং শিবপূজাও এখানে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্ত স্থানীয়দের এইসব প্রচেষ্টা প্রায় ২৭০ বছরের প্রাচীন দুইটি বিশাল স্থাপত্যকে ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট নয়।
স্থানীয়দের মতে এখানে একসময় আরও মন্দির এবং স্থাপনা ছিল। এইসব স্থাপনা ধ্বংস করে রাতের আঁধারে সেখানকার ইট এবং অন্যান্য সামগ্রী চুরি করে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন অবশ্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে এইসব প্রাচীন মন্দিরগুলি সংষ্কারের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে। তবে বাস্তব কোনও ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত গৃহীত হয়নি। অবিলম্বে সংস্কার করা না হলে প্রাচীন ঐতিহ্যের এইসব নিদর্শন অচিরেই কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
এই অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন অথবা সরকারি প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের সহযোগিতায় এই মন্দিরগুলি সংষ্কার পূর্বক প্রাচীন স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সংরক্ষণের দাবি স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এবং এলাকার সচেতন মহলের।