আস্ত ফরেস্ট চুরি নিয়ে বনদপ্তরের লিখিত অভিযোগ নিতে অস্বীকার পুলিশের। থানায় ঢুকে আইসিকে ধমক সুকান্তর। চলল সরকারি আধিকারিকের উপস্থিতিতে পুলিশ কর্তাকে আইনের পাঠ শেখানোর প্রক্রিয়াও। রবিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এই ঘটনাকে ঘিরে রীতিমতো ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকে। এদিকে এই ঘটনা নিয়ে বনদপ্তরের বিরুদ্ধে যোগসাজশের অভিযোগ তুলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে স্থানীয় পঞ্চায়েত।
জানা গেছে, তপন ব্লকের রামচন্দ্রপুর এলাকায় বেশ কয়েকদিন ধরে রীতিমতো তাঁবু খাটিয়ে হাজার হাজার সরকারি গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছিল দুষ্কৃতিরা। ঘটনার পিছনে নাম জড়ায় শাসক দলের বেশকিছু নেতা ও প্রশাসনের বেশকিছু লোকজনের। যা নিয়ে প্রতিবাদ জানায় স্থানীয় বাসিন্দারা। গাছ কাটার কাজ আটকে দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে এই ঘটনার পিছনে প্রথম থেকেই কিছুটা গড়িমসি ছিল তপন থানার পুলিশের। বিষয়টি নিয়ে বনদপ্তরের তরফে দায়ের করা কোনো লিখিত অভিযোগ জমা নেননি তপন থানার পুলিশ বলে অভিযোগ।
এদিকে জেলায় ফিরে এমন আস্ত ফরেস্ট চুরির ঘটনা জানতে পেরেই দলবল নিয়ে রবিবার এলাকায় হাজির হন বালুরঘাটের সাংসদ তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এলাকায় গিয়ে বনকর্মীদের সাথে কথা বলতেই তিনি জানতে পারেন, বনদপ্তরের তরফে করা লিখিত অভিযোগ পুলিশ নেয়নি। আর এরপরেই কিছুটা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। বনকর্মী ও আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে থানায় হাজির হন তিনি। আস্ত ফরেস্ট কেটে সাফ করবার পরেও কেন এখনো লিখিত অভিযোগ নেওয়া হয়নি তা নিয়েই আইসিকে ধমক দেন সুকান্ত।
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যে ঘটনার সাক্ষীও দিয়েছেন বন্দপ্তরের আধিকারিকরা। আর এরপরেই তড়িঘড়ি অফিসে বসিয়ে বনদপ্তরের তরফে দায়ের করা লিখিত অভিযোগ জমা নেন আইসি গৌতম রায়। সুকান্তর উপস্থিতিতে আইসিকে বেশকিছুক্ষণ আইনের পাঠও শেখান বনদপ্তরের ওই সরকারি আধিকারিক। ঘটনার মূল পান্ডা বাঘইটের গোপাল সরকার যেন এই ঘটনা থেকে কোনোভাবেই রেহাই না পায় তারও হুঁশিয়ারি এদিন আইসিকে দিয়েছেন সুকান্ত।
বনদপ্তরের আধিকারিক সৌগত মুখার্জি বলেন, নিরীহ শ্রমিকদের ধরে কোনো লাভ নেই। ঘটনার মূল পান্ডাকে ধরবার জন্য পুলিশের সহযোগিতা প্রয়োজন। কিন্তু পুলিশ কোনভাবেই অভিযোগ নিচ্ছে না। মূল অভিযুক্তর নাম দিয়ে বনকর্মীরা যখন অভিযোগ জানাতে যাচ্ছে, পুলিশ তখন অভিযোগ না নিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছে তাদের।
সাংসদ তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ঘটনার পিছনে তৃণমূল নেতা ও প্রশাসনের লোকজন জড়িত রয়েছে। রাজ্যের বনদপ্তর চাইছে এই ঘটনার তদন্ত এবং দোষীদের গ্রেপ্তার। কিন্তু পুলিশ কোনোভাবেই তাদের সহযোগিতা করছে না। রাজ্যের এক অফিসের অভিযোগ আর এক অফিস নিতে চাইছে না। এই ঘটনা নিয়ে শাসক দলের নগ্নরুপ সামনে এসেছে।
তপন থানার পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ পেয়েই ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।