অবশেষে সিবিআই জালে বাগদার রঞ্জন ওরফে চন্দন মণ্ডল। গ্রুপ সি নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার চন্দন। এদিন চারদিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই দিনে চন্দন-সহ ধৃত আরও ছয়জন। নিয়োগ দুর্নীতি মামলা বিপুল টাকা নেওয়ার অভিযোগে বাগদার রঞ্জনকে গ্রেফতার করলো তদন্তকারী সংস্থা। চন্দনের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে। তার কাছ একাধিক নথি চায় সিবিআই কিন্তু চন্দন তা দিতে পারেনি।
গ্ৰুপ সি নিয়োগ দুর্নীতিতে অন্যতম মিডিল ম্যান রঞ্জন। কুন্তলের সঙ্গে তার যোগ রয়েছে। উপেন বিশ্বাস অনেক আগেই অভিযোগ করেছিল চন্দনের বিরুদ্ধে। চন্দনের একাউন্টে লক্ষ লক্ষ টাকা ট্রানজেকশন হয়েছে। শুধু বাগদাতে নয় উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গা থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রচুর টাকা তুলেছে বলে দাবি। সিবিআই তলব করার পর কিছু প্রশ্ন চন্দনকে করা হয় কিন্তু তার সদুত্তর না পেয়ে এবং অসহযোগিতার জন্য শুক্রবার তাকে গ্রেফতার করে আলিপুর জর্জ কোর্টে পেশ করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে ইডির কাছে দেওয়া বয়ানে এক সাক্ষী জানান, তাঁর স্ত্রী বর্তমানে রাঘবপুর, নদিয়া একটি বেসিক প্রাইমারি স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। তাঁর স্ত্রী চন্দন মন্ডল নামক এজেন্টের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষকের এই চাকরি পেয়েছিলেন ৭.৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে। যে চন্দন মন্ডল উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার বাসিন্দা। এলাকায় যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে। নির্ধারিত টাকার বিনিময়ে ওই এলাকার ব্যক্তিদের প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি দিতেন চন্দন।
বয়ানে তিনি আরও জানান যে, চন্দন মন্ডল তাদের গ্রামে থাকতেন এবং তাঁর গ্রামের অনেক লোক তাঁকে একজন এজেন্ট হিসেবে চিনতেন। যিনি যথেষ্ঠ জনপ্রিয় এবং বেশ কিছু প্রভাবশালী লোকেদের সঙ্গে যোগ ছিল চন্দনের। ২০১১ সালে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরির জন্য চন্দন মণ্ডলের কাছে গিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী এবং চন্দন মণ্ডল তাঁর স্ত্রীকে চাকরি দেওয়ার জন্য আশ্বাস দেন। সেই সঙ্গে চন্দন তাঁকে জানান, সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য নগদ ৭.৫ লাখ টাকা নগদে দিতে হবে। প্রথমে তাঁর স্ত্রী তাতে রাজি ছিলেন না। কারণ শিক্ষকের চাকরির জন্য এত বড় অঙ্কের টাকা ছিল না।
তিনি আরও জানান যে চাকরির জন্য রেট নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের চাকরির জন্য চন্দন মণ্ডল প্রার্থী প্রতি ৭.৫ লাখ টাকা করে নিতেন। টাকা দেওয়ার পর ওই অভিযুক্ত জানিয়েছিলেন, কেবলমাত্র প্রশ্নের উত্তর যা তিনি পুরোপুরি জানেন সেগুলি লিখতে এবং বাকি প্রশ্নের ক্ষেত্রে তার স্ত্রীকে ফাঁকা রেখে ওএমআর শিট জমা দিতে বলেন।
তবে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি যে চার্জশিট দিয়েছিল সেখানে চন্দনের এই রোলের কথা তুলে ধরেছিলেন তদন্তকারীরা। অন্যদিকে পুরো ঘটনায় আক্ষেপের সুরে মন্তব্য বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বাগদার রঞ্জনকে গ্রেফতার করে কী হবে? কিছুই হবে না। সাত-আট মাস ধরে অনেক কিছুই চলছে। এখন গ্রেফতার করেছে।