যখন আমরা দীনদয়ালজীর চিন্তা, তাঁর বিশ্লেষণ, তাঁর সিদ্ধান্ত, ইত্যাদির কথা বলি তখন এই ‘তাঁর’ শব্দটি খুবই প্রতীকী। প্রকৃতপক্ষে দীনদয়াল উপাধ্যায়ের মতো মানুষের ভাবনা ও ব্যক্তিজীবনের মধ্যে কোনও পার্থক্য থাকে না। তাঁদের ব্যক্তিজীবন থেকে তাঁদের জীবন ও কর্মকে আলাদা করা প্রায় অসম্ভব। আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য তাঁদের মধ্যে দিয়ে ব্যক্ত হয়। যে আদর্শ ও সংস্কার এদেশে হাজার হাজার বছর ধরে অনুসৃত হয়েছে যে জীবনদর্শন সবরকম প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে সেই শাশ্বত সত্যকেই দীনদয়ালজী তাঁর গভীর প্রজ্ঞার মাধ্যমে আধুনিক যুগের উপযোগী করে সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেছেন, বাস্তব প্রয়োগের পথ দেখিয়েছেন। পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের মতো মনীষীরা আমাদের চিরায়ত জাতীয় দর্শনেরই আধুনিক ভাষ্যকার। তাঁরা যে মূলতত্ত্ব প্রচার করেছেন তা নতুন কিছু নয়। দেশের মানুষ যখন আত্মবিস্মৃতি দূর করে সচেতন হয়েছে আর দেশমাতৃকার সেবায় কটিবদ্ধ হয়েছে, তখন দেশবাসীর এই উদ্দীপনাই তাদের প্রেরণা যুগিয়েছে।
পণ্ডিতজীর জীবন যদি আমরা এই দৃষ্টিকোণ থেকে অবলোকন করি, তাহলে স্পষ্ট হবে যে, তিনি জন্মজাত তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী তো ছিলেনই, সেই সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের জাতীয়তাবাদী সংস্কার লাভ হয়েছিল। ১৯৩৭ সালে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সংস্পর্শে আসেন এবং ১৯৫১ সাল পর্যন্ত তিনি সম্পূর্ণভাবে সঙ্ঘকাজে নিমগ্ন ছিলেন। এই সময় তাঁর বিশ্লেষণ ক্ষমতা, চিন্তাশক্তি আর জীবনচর্যা একটি দৃঢ়ভিত্তির উপর স্থাপিত হয়। তিনি সঙ্ঘের সরসঘচালক শ্রীগুরুজীর সান্নিধ্যে আসেন এবং সঙ্ঘের আদর্শের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান। তিনি নিজেকে মাতৃভূমির জন্য সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে হিন্দুরাষ্ট্র চিন্তা আছে, সেটিই দীনদয়ালজীর মননের মূল উপজীব্য ছিল। তবে এই হিন্দুরাষ্ট্র এবং হিন্দুরাষ্ট্রের মূলনীতিগুলি আরএসএসের আবিষ্কার নয়। স্বামী বিবেকানন্দ যে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের ধারণা দিয়েছিলেন এবং স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছিলেন, সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা ডা. কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার তাকেই গ্রহণ করেছিলেন। শ্রীঅরবিন্দ, লোকমান্য তিলক, বীর সাভারকর এবং অন্যান্য মনীষীরাও এই সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রবাদেরই কল্পনা করেছিলেন। ক্ষেত্রীয় জাতীয়তাবাদ অনুসারে কল্পনা করেছিলেন। ক্ষেত্রীয় জাতীয়তাবাদ অনুসারে ভারত ভূখণ্ডে বসবাসকারীদের নিয়ে ভারতীয় জাতি তৈরি হওয়ার কথা। পৃথিবীর কোথাও কেবলমাত্র ভূখণ্ড ও তাতে বসবাসকারীদের নিয়ে রাষ্ট্র বলে মানা হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে পশ্চিমের লোকেদের উচ্চারণের সুবিধার জন্য তৈরি হওয়া ‘ইন্ডিয়ান’ শব্দটি কিছু বিপত্তির জন্ম দিয়েছে। ‘হিন্দু’ ও ‘হিন্দুস্থান’ শব্দ দুটির ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ভাবনা জলাঞ্জলি দিয়ে ‘ইন্ডিয়ান’ শব্দের অনুবাদ হয়ে গেল। তখন স্বাভাবিকভাবেই ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনালিজম’ শব্দবন্ধের অনুবাদও হিন্দিতে “রাষ্ট্রবাদ’ করা হল। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান ইত্যাদি সবাইকে “রাষ্ট্রীয়’ (ন্যাশনালিজম) মেনে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে এদের সকলের রাষ্ট্রীয় ঐক্য স্থাপনের আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে। এসবের পরেও যদি ১৯২০ সালে গান্ধীজীর নেতৃত্বে কংগ্রেস খিলাফৎ আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে না যুক্ত করত তবে জাতীয়তাবাদ নিয়ে এতটা বিভ্রান্তি তৈরি হত না। কংগ্রেসের ভূমিকাতে তখনও মুসলমান তোষণ প্রবেশ করেনি। কিন্তু এরপর থেকেই একদিকে যেমন ইসলামী কট্টরপন্থী সাম্প্রদায়িকতা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে অন্যদিকে কংগ্রেসের নেতারা দেশহিতের চরম অবমাননা শুরু করেন। এই ইতিহাসের বিস্তৃত বিবরণ দেওয়ার জায়গা হয়তো এই আলোচনায় সম্ভব নয়। শুধু এটাই বলার যে, জাতীয়তাবাদের ভাবনা ১৯২০ থেকে ১৯৪৭ সালের মধ্যে স্বাধীনতা আন্দোলনে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল এবং এই বিকৃত ভাবনাকেই সঠিক জাতীয়তাবাদ হিসাবে চালানোর প্রয়াস বড় বড় নেতারা করে গেছেন। এর থেকে ভিন্ন ভাবনাকে সাম্প্রদায়িকার ছাপ লাগিয়ে দেওয়া হতে থাকল। হিন্দুভূমির ভূমিপুত্রদের তাদের নিজের দেশেই সাম্প্রদায়িক বলে চিহ্নিত করা হল।
এই মানসিক বিভ্রম থেকে দেশের ভবিষ্যতের জন্য কি ধরনের বিপদ আসতে পারে তা অনুমান করেই ডা. কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন—এটি হিন্দু রাষ্ট্র। আসন্ন বিপদ উনি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলেন। হিন্দুস্থানে হিন্দু সমাজই যথার্থ রাষ্ট্রীয় সমাজ হওয়ার জন্য তাদের সংগঠনই জাতীয় সংগঠন। সংগঠনের মধ্যে দিয়ে হিন্দু সমাজকে শক্তিশালী করতে না পারলে বিপদের এই চক্ৰবৃহ থেকে মুক্তির উপায় নেই, এটাই ছিল তার মূলমন্ত্র। রাষ্ট্রের পুনঃনির্মাণের জন্য উনি সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পণ্ডিত দীনদয়ালজী এই মতকে কেবল স্বীকারই করেননি, উনি এটিকে তার নিত্যদিনের স্মরণ, মনন, অধ্যয়ন ও প্রগাঢ় শ্রদ্ধার বিষয় বানিয়েছিলেন। উনি হিন্দুস্থানের ইতিহাস সিদ্ধ রাষ্ট্রপুরুষ, আর আভ্যন্তরীণ মূল্যবোধ, ভবিষ্যতে রাষ্ট্রনির্মাণের জন্য কর্তব্যের মতো বিষয়ের মূলে পৌঁছেছিলেন। সরসংঘচালক শ্রীগুরুজীর যুক্তিপূর্ণ উপস্থাপনের প্রভাবও তার মনে স্পষ্টতই ছাপ ফেলেছিল। জাতীয়তাবাদের বিষয়ে সঙ্ঘের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী দীনদয়ালজীর রক্তের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল। তাই শ্রীগুরুজীর ইচ্ছানুসারে যখন উনি রাজনৈতিক দলে কাজ করার দায়িত্ব পেলেন তখনও তিনি প্রাদেশিক জাতীয়তাবাদের মতবাদে ভেসে যাননি, স্বাভাবিকভাবেই হিন্দু জীবনধারাকেই রাষ্ট্রীয় জীবনধারা হিসাবে তুলে ধরেছেন। নিজের মতবাদের সত্যতার উপর তার সম্পূর্ণ বিশ্বাস ছিল।
স্বদেশী ভাবনার অভাব
১৯৪৭ সালে খণ্ডিত দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা পাওয়ার পরে যেসব কুপ্রবৃত্তি ক্রমশ: পুষ্ট হচ্ছিল, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে উনি সঙ্ঘের মতবাদরেই বাস্তব উদাহরণ দেখতে পেলেন। তিনি স্পষ্ট দেখতে পেলেন যে আমাদের সংবিধান, অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থার মধ্যে যে বৈভবশালী রাষ্ট্র তৈরির মত, পথ তার কোনও কিছুর মধ্যেই কোথাও স্বদেশী ভাবনা, খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। ভারতবর্ষ হাজার হাজার বছরের ইতিহাস সম্পন্ন এক প্রাচীন দেশ। এদেশের মহান ও নিঃস্বার্থ মনীষীরা ব্যক্তি ও সমাজ দু’দিক থেকেই মানব জীবনের বিভিন্ন প্রকাশের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন। এই তপোলব্ধ জ্ঞান থেকেই আমাদের ভবিষ্যতের পথ খুঁজে পাব—এই বোধ আজ কোথাও দেখা যায় না। এই বেদনাকে পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেছেন। ওনার ভাষায় –
‘১৯৪৭ সালে আমরা স্বাধীন হয়েছি। ইংরেজ ভারত ছেড়ে চলে গেল। রাষ্ট্রনির্মাণের ক্ষেত্রে আমরা যাকে প্রধান বাধা মনে করতাম সেই বাধা দূরীভূত হল। তখন সকলের সামনে একটি প্রশ্ন উঠে এল এত কষ্টের দ্বারা প্রাপ্ত এই স্বাধীনতার গুরুত্ব কি? আমরা এখানে কি ধরনের জীবন তুলে ধরতে চাই? রাষ্ট্র হিসাবে ভারতের জীবনচর্যা ও জীবনদর্শন কি? কিন্তু রাষ্ট্রজীবনের বিশুদ্ধ রূপ না দেখার জন্য, আমরা এই স্বাধীনতার মাধ্যমে জাতীয় আদর্শকে নিজেদের জীবনে নামিয়ে আনতে পারিনি। অন্যের অনুকরণ করা ধাঁধায় পড়ে গেলাম। আমাদের স্বাভাবিক রাষ্ট্রীয় আদর্শকে তার মধ্যে প্রতিফলিত হতে দিই নি। বিদেশের স্বীকৃত সিদ্ধান্তকেই জোড়াতালি দিয়ে চালানোর মধ্যেই আমরা আনন্দ খুঁজে পেলাম। ফলে আমরা আজ পর্যন্ত সেই মূল প্রশ্নের উত্তরটা এখনও দিতে পারিনি যে আমরা কি ধরনের জীবনশৈলী রাষ্ট্র হিসাবে উপস্থাপন করব? সত্যের সম্যক ধারণা না থাকার জন্য আমরা নিজেদের পায়ে খাড়া হতে পারিনি। রাষ্ট্রীয় সমৃদ্ধির জন্য যত প্রচেষ্টাই হোক না কেন, সেখানে এই ধারণা কোথাও যায় না যে, রাষ্ট্রীয় সমৃদ্ধি বলতে আমাদের ধারনাটা কি আর তার স্বরূপটাই বা কি? এই প্রশ্নের উত্তর কতজনই দেওয়ার প্রচেষ্টা করেছেন কিন্তু ওই এক প্রশ্নই বারবার উঠে এসেছে। এনাদের দ্বারা খোঁজা উত্তর প্রায়শই ভারতবর্ষের বাইরের জীবনযাত্রার আধারে প্রস্তুত ছিল। কেউ সমাজবাদের উপর ভিত্তি করে এখানে সমাজ তৈরি করতে চেয়েছেন, কেউ বা ক্যুনিজমের ভিত্তিতে। অন্য কেউ কেউ সমাজবাদ ও ব্যক্তিজীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার প্রচেষ্টায় গণতান্ত্রিক সমাজবাদ আনার কথা বলেছেন। বিদেশে সৃষ্টি হওয়া মতবাদের উপর ভিত্তি করেই এইসব প্রয়াস হয়েছিল। আর্থিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে চিন্তার ভিত্তি বিদেশি ভাবধারাই ছিল। এইসব দেখে মনে হয়, আমাদের প্রাচীন সভ্যতায় এইসব বিষয় কখনো আলোচনাই করা হয়নি অথবা আমাদের সভ্যতা মাত্র কয়েকবছর আগে তৈরি হয়েছে। বিদেশ থেকে ধার করা মতবাদে আমাদের দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতি প্রতিভাত হয় না। তাই দেশবাসীর মনজগৎকে তা স্পর্শ করতে পারে না। এই বিদেশি মতবাদ থেকে ভারতবাসী ত্যাগ, পরিশ্রম, এবং বলিদানের প্রেরণা পায় না। এই কারণেই আজ দেশের মধ্যে হতাশার বাতাবরণ প্রকট হচ্ছে। দেশের আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেছে। কাজ করার প্রেরণা শেষ হয়ে গেছে আর কোটি কোটি মানুষের এই দেশ পরমুখাপেক্ষী হয়ে বেঁচে আছে।
(রাষ্ট্রজীবন কী দিশা : পৃ. ১৮৪-৮৫)
সাংস্কৃতিক ঐক্যের সূত্র
পণ্ডিত দীনদয়ালজী তাঁর রচনায় বা ভাষণে কখনো আমাদের প্রাচীন রাষ্ট্র ভারতের ঐতিহ্যময় জীবনদর্শন’, ‘বহু বছরের সাধনায় উৎপন্ন আমাদের জীবনদর্শন’, ‘জাতীয় আত্মত্যাগ এবং “জাতীয় চরিত্র’ এইসব কথা বলার সময় দ্বিধাগ্রস্ত হতেন না। সর্বোপরি তিনি আমাদের জাতীয়তাবাদের বিষয়ে এক পরিষ্কার ও যুক্তিগ্রাহ্য ধারণা দিয়েছেন। এবিষয়ে ওনার চিন্তাভাবনাকে সঠিকভাবে অনুধাবন প্রয়োজন। কারণ রাষ্ট্রের পুনর্জীবনের জন্য এদেশের জাতীয় জীবনের আদর্শই ভিত্তি হতে পারে। কিন্তু ব্রিটিশ শাসকদের প্রয়োজনে প্রবর্তিত শিক্ষা, কায়েমি স্বার্থে প্রচারিত অপসংস্কৃতি এবং এসবকে চোখ বন্ধ করে মেনে নেওয়ার প্রবৃত্তি আমাদের দেশের শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ছিল। এর সঙ্গে কংগ্রেস নেতাদের দ্বারা পরাধীন ভারতে প্রচারিত নীতি আর স্বাধীন ভারতে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার তাগিদে প্রচলিত বিকৃত রাষ্ট্রবাদকে সমর্থনের ফলে, সাম্প্রদায়িকতা এবং রাষ্ট্রবাদের (কমুনালিজম ও ন্যাশনালিজম) অর্থই তালগোল পাকিয়ে গেছে। দেশের জনসাধারণকে এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে রাষ্ট্রের পুনরুজ্জীবনের আশা সকলের মনে সঞ্চারিত করা রাষ্ট্র নির্মাণের প্রথম ধাপ ছিল। দেশের প্রতি সচেতনতার দুটি আঙ্গিক আছে। প্রথমত:, রাষ্ট্রহিতের জন্য উপলব্ধি, দ্বিতীয়ত:, রাষ্ট্রীয় জীবনের বিবিধ ক্ষেত্রে উন্নতির সঠিক দিকের সন্ধান। রাষ্ট্রের গুণাবলীকে সংহত করে তার মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার সুখ ও সমৃদ্ধিপূর্ণ ভবিষ্যতের পথ খোঁজা যাতে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে এক যোগসূত্র স্থাপিত হয়।
মোদ্দা কথা হল পণ্ডিত দীনদয়ালজী ভারতের হাজার বছরের ইতিহাসকে মাথায় রেখে ‘সাংস্কৃতিক ঐক্যকে আমাদের রাষ্ট্রজীবনের ধারক হিসাবে তুলে ধরেছেন। একে আর্য সংস্কৃতি বলা হোক, ভারতীয় সংস্কৃতি বলা হোক, বৈদিক সংস্কৃতিরূপে বর্ণনা করা হোক আদতে সেটি হিন্দু সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির বিকাশ এখানে হিন্দু নামে পরিচিত প্রাচীন সমাজই করেছে। ভারতের মাটিতে রাজনৈতিক ক্ষমতা বহুবার পরিবর্তন হয়েছে, গড়েছে ভেঙেছে অসংখ্য শাসন ব্যবস্থা, একচ্ছত্র সম্রাটের সাম্রাজ্য যেমন ছিল তেমন ছোট ছোট রাজ্যও ছিল। বৈদেশিক আক্রমণও হয়েছে। কিন্তু সত্যিকারের জীবনবোধের কোনও পরিবর্তন হয়নি। এবং সত্যাসত্য নিয়ে সমাজে কোনও ভ্রান্ত ধারণাও ছিল না। এমনকী যখন হিন্দুরা বৈদেশিক শত্রুর অধীনে চাকরি করেছে তখনও সর্বক্ষণ মনের মধ্যে এই বোধ ছিল যে তারা বৈদেশিক শত্রু। অর্থাৎ আজ এক নতুন রাষ্ট্র বানাতে হবে বা এক নতুন রাষ্ট্র তৈরি হচ্ছে এই দুটি ধারণাই ভুল। ভারতবর্ষ কেবল একটা ভূমিখণ্ড আর তার উপর বসবাসকারী কতিপয় মানুষের সমষ্টি নয়। ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বসবাসকারী সকলের একটি রাষ্ট্র এই ভ্রান্তধারণার প্রচার কংগ্রেস করেছে। বিশ্বের কোনও সমাজই একে স্বীকার করেনি। ভারতবর্ষের মতো সুপ্রাচীন দেশের ক্ষেত্রে তার প্রশ্নই ওঠে না।
বিকাশের রূপভেদ
আধুনিক কালে মানে বিগত ৪০০ বছরে পশ্চিমী অনেক রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রবাদের কোনও তুলনা চলে । তেমনই, তাদের বিকাশের পথের সঙ্গে ভারতবর্ষের বিকাশের কোনও তুলনা হয় না।
পাশ্চাত্ত্য রাষ্ট্রের উদাহরণ ভারতের বিষয়ে দিতে গেলে আগে ভারতবর্ষ সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। প্রথমত, ভারতে দেশপ্রেম, একতা, একাত্মতা এসবের জন্ম কোনও বিশেষ পরিস্থিতি বা প্রতিক্রিয়ার ফলে তৈরি হয়নি। তৈরি হয়েছে অপার জ্ঞানের অধিকারী অনুভবী প্রাচীন ঋষি, মহর্ষিদের গভীর চিন্তা, ভাবনা, মননের মধ্যে থেকে। পাশ্চাত্ত্য দেশের বিকাশের উপর দৃষ্টি রাখলে দেখা যায়, সেটি ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলেই তৈরি হয়েছে। প্রথমত:, ইউরোপে খ্রিস্টান মতাবলম্বী মানুষের একটি সমাজ ছিল। তাদের রাষ্ট্রচেতনা বিকশিত হয়নি। পোপের আধিপত্য ছিল সর্বত্র। পশ্চিমের পরিভাষায় বললে ধর্ম বা ধর্মসংস্কার দ্বারা নির্মিত ব্যবস্থাই ইউরোপে প্রভূত্ব করছিল। কিন্তু নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজে এবং উপাসনায় পোপের হস্তক্ষেপ ধীরে ধীরে জনগণের কাছে অপ্রিয় হতে লাগল। জনগণের কাছে পোপ ধীরে ধীরে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণত হল। এই পোপ বিরোধী প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দেশ ও দেশাত্মবোধের ধারণা প্রবল হতে থাকল। এই কারণে বলা হয় যে ইউরোপীয় রাষ্ট্রবাদ প্রতিক্রিয়াধর্মী। এই দেশাত্মবোধ পোপের ক্ষমতাকে অস্বীকার করেছিল। এই প্রতিক্রিয়াধর্মী জাতীয়তাবাদের জন্যে সৃষ্টি হয়েছিল অন্তঃরাষ্ট্রীয় অসহিষ্ণুতা এবং অস্তিত্বের লড়াই। সে ছিল স্বার্থপর এবং অহংকারী। এই একটি রাষ্ট্রের সমাজ ও তাতে ঘটা বিপর্যয়ের জন্য শোষক ও শোষিত শ্রেণী তৈরি হয়েছিল। যান্ত্রিক সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রবৃত্তি আরও বেড়ে উঠেছিল। ছোটরাও এর থেকে নিস্তার পেল না। এই বিপর্যস্ত, অসহিষ্ণু অপসংস্কৃতি মূলক রাষ্ট্রবাদের বিরুদ্ধে একটি প্রতিকার মূলক ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। সেই প্রতিরোধ থেকে জন্ম হল কমিউনিজমের। এই মতবাদ ধর্ম, জাতীয়তাবাদ ও রাষ্ট্রের ধারণাকেই অস্বীকার করেছিল। শ্রেণী সংঘর্ষের উপর স্থাপিত অন্তঃরাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থা ও পদ্ধতি ভারতের জন্যও সঠিক সেটা মেনে নেওয়া কতটা ন্যায়সঙ্গত হবে? বিশ্বে যখন রাষ্ট্রের ধারণাই ছিল না, তখনও ভারতে রাষ্ট্রবাদ শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে বিস্তার লাভ করেছিল। সেই ভাবনার মধ্যে মানুষের স্বাধীনতা এবং অগ্রগতির পথ খোঁজার প্রয়াস ছিল।
লিখিত ইতিহাস প্রথম থেকেই হিন্দুস্থানকে এক প্রকৃত রাষ্ট্র হিসাবে দেখে এসেছে। ইতিহাস বলে, এই মাটির সঙ্গে হিন্দু সমাজের মাতাপুত্রের সম্পর্ক। সময়ের সঙ্গে এখানে যতই উথাল-পাথাল হোক না কেন, সংস্কৃতির একই ধারা এখানে একইভাবে বয়ে চলেছে। এই স্রোতের ধারায় যেমন বেদ, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারতের মত সাহিত্য এসেছে, তেমন তপসা ও সাধনার দ্বারা ভারতভূমিকে তীর্থক্ষেত্রের পবিত্রতায় ভরিয়ে তোলার মত মহাপ্রাণও জন্মেছেন। পরাক্রমশালী রাষ্ট্রপুরুষদের স্ত্রীরাও এখানে স্থান করে নিয়েছেন, আর এই সবের সামূহিক প্রকাশ ঘটেছে রাষ্ট্রজীবনের আদর্শে। এই সবের সমন্বয়ের দ্বারা ভারতীয় সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। এমন এক সমাজ তৈরি হয়েছে যেখানে সংস্কৃতি আন্তরিকতা, ঐক্য ও আত্মীয়তার ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইতিহাসের কালপ্রবাহে যেসব মানুষ এসেছেন এদেশে, তিনি আধ্যাত্মিক সাধকই হোন আর পরাক্রমশালী বীর, মাতৃভূমির প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য তাদের একইরকম ছিল। তাই একটি রাষ্ট্র তৈরির জন্য যেমন একটি ভূখণ্ড প্রয়োজন, প্রয়োজন হয় তার উপর বসবাসকারী মানুষের জনগোষ্ঠী, তেমনই প্রয়োজন একটা আত্মিক যোগ, একটা জাতীয় অনুভূতির পরিচয় এবং জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে পারস্পরিক বোঝাপড়া, তা না হলে শুধুমাত্র একই ভূখণ্ডে বসবাস করার সুবাদে সকলে এক জাতির মানুষ হয়ে ওঠে না। দীনদয়ালজী একাধিক উদাহরণ সহযোগে এই ধারণার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন তাঁর ‘রাষ্ট্র প্রকৃতি ও বিকৃতি’ গ্রন্থে।
কিছু ঐতিহাসিক সত্য
তিনি বললেন, ‘একটা রাষ্ট্র কেবল একটি ভূখণ্ড নয়। রাষ্ট্রগঠনের প্রাথমিক সর্ত হল তার জনগণের দেশের প্রতি সীমাহীন ত্যাগের অনুভূতি। এই অনুভূতির জন্যই আমরা দেশকে মাতৃভূমি বলি। আমাদের মাতৃভূমির প্রতি অনুভূতির একটি প্রেক্ষাপট আছে। একই ভূমিতে আমাদের দীর্ঘদিন একনাগাড়ে থাকার জন্য তৈরি হয়েছে একাত্মবোধ, এসেছে গভীর ‘আপনজনের ভাবনা। ক্রমে একটি সাধারণ জাতীয় ইতিহাস তৈরি হয়েছে। কিছু কথা গৌরবের কিছুটা বা লজ্জার। গৌরবের কথা মনে করে আমরা আনন্দিত হই আবার লজ্জার কথায় সংকুচিত হয়ে পড়ি। মহম্মদ ঘোরী বা গজনীর মামুদের ভারত আক্রমণের কথা ভাবতে আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়। পৃথ্বীরাজ এবং অন্য দেশপ্রেমিকদের জন্য যদি আমরা আত্মীয়তা বা গর্ব অনুভব না করি আর যারা আক্রমণ করেছে তাদের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয় তবে বুঝতে হবে ওই ব্যক্তির মধ্যে দেশাত্মবোধের কোনও ভাব তৈরি হয়নি। যখন আমরা রাণা প্রতাপ ছত্রপতি শিবাজী বা গুরু গোবিন্দ সিংহকে স্মরণ করি তখন আমাদের মাথা নিচু হয়ে আসে। আবার অন্যদিকে ঔরঙ্গজেব, আলাউদ্দিন, ক্লাইভ বা ডালহৌসির নাম সামনে আসতেই আমাদের মনে বিদেশি শক্রর প্রতি যে ভাব আসা উচিত তাই সচরাচর এসে যায়। এমনই একটি নির্দিষ্ট ভূমিতে বসবাসকারী এবং মাতৃভূমির উপর শ্রদ্ধাশীল মানুষদের দ্বারাই রাষ্ট্র নির্মাণ হয়। যাদের সকলের জীবনের প্রতি সমদৃষ্টি হবে, জীবনের লক্ষ্য ও আদর্শ সমান হবে, একই শত্রু ও সাধারণ মিত্র হবে, আর সেই সঙ্গে ঐতিহাসিক মহাপুরুষদের পরম্পরাও সমান হবে।
বাস্তবে ভারতবর্ষ আসলে হিন্দুরাষ্ট্র। এই বিষয়ে কারও মনে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। কোনও সমাজ আছে যে ভূমিকে মা বলে স্বীকার করে ? দেবতা রূপে মাতৃভূমিকে পূজা করে? ‘দুর্গাদশপ্রহরণধারিণী হিসাবে ধ্যান করে ? কোন সমাজ, ‘আপনার রাষ্ট্রপুরুষ কে? মহারাণা প্রতাপ না আকবর ? এই প্রশ্নের উত্তরে ‘রাণা প্রতাপ স্বাভাবিকভাবে উত্তর দেয়? এরকম অনেক প্রশ্নের সহজে একই উত্তর যে সমাজ থেকে আসবে, সেটি হিন্দু সমাজ। এটি একেবারে ইতিবাচক ধারণা। ইউরোপীয় জনসমাজ যখন বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়েছে, তখন ওখানকার পণ্ডিতেরা ‘রাষ্ট্র’ শব্দের বিশ্লেষণ করতে বসেন। একটি পূর্ণ রাষ্ট্রের একতার জন্য একই চিন্তা ও ভাবনা কোটি কোটি মানুষের মধ্যে নির্মাণ করবার জন্য কোন পদ্ধতির প্রয়োজন এটি স্পষ্ট করার প্রচেষ্টা হয়। এই বিষয়ের উপর অনেক গ্রন্থও লেখা হয়। পশ্চিমী পণ্ডিতদের মতে জাতীয়তাবাদ ফরাসি বিপ্লব ও তার থেকে উৎপন্ন পরিস্থিতির ফলস্বরূপ। বংশ, ভাষা, ধর্ম, ভূমি, পরম্পরা, একইরকম সংকটময় পরিস্থিতি, যুদ্ধ, সমান শাসনব্যবস্থা এসবকেই রাষ্ট্রকে সঠিক পথ দেখাবার উপজীব্য বলে মনে করেছেন পশ্চিমের দার্শনিকরা। বিশ্বের সমস্ত রাষ্ট্রের উপর কোনও একটিমাত্র নিয়মের কথা কেউই বলতে পারেন নি। বংশ, ভাষা বা ধর্ম জাতীয় উপাদান সকলের জন্য সমান হতে পারে না। সেটা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। ইউরোপে এক ধর্ম কিন্তু রাষ্ট্র অনেক। ভারতে ভাষার বৈষম্য আছে। কিন্তু রাষ্ট্র এক। অনেকগুলি জাতি গোষ্ঠী একত্রিত হয়ে রাষ্ট্র নির্মাণের উদাহরণও আছে (যেমন চেকশ্লোভাকিয়া)। কিন্তু এইসব বিশ্লেষণ কেবল পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলির মাধ্যমেই করা সম্ভব, ভারতবর্ষকে এই তত্ত্ব দিয়ে অনুভবই কথা যাবে না। আর একটা বিষয় হল ইউরোপে সবকটি রাষ্ট্রের নির্মাণ একই সময়, একই কারণ বা একই পরম্পরার জন্য হয়নি। এই প্রক্রিয়ার শুরু ১৬শ শতাব্দীতে বিশ্ব মানচিত্রে লক্ষিত হয়। বুলগেরিয়ার মতো নতুন রাষ্ট্র ১৯০৮ সালে পৃথিবীর মানচিত্রে দেখা যায়। যন্ত্র সংস্কৃতি ও সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট পশ্চিমের রাষ্ট্রধারণার সঙ্গে হিন্দুরাষ্ট্র ধারণার অনেক প্রভেদ আছে, এটা স্মরণে রাখা একান্ত প্রয়োজন। ইতিহাস, আন্তরিক অনুভূতি, পরম্পরা এবং সমাজের আশাআকাঙ্ক্ষা সবদিক দিয়ে বিচার করে এটাই বোঝা যায় যে হিন্দুস্থান হিন্দু সমাজেরই রাষ্ট্র। একই ভূমির উপর বসবাসকারী কিন্তু পরস্পর বিরোধী জীবনপদ্ধতি এবং আশাআকাঙ্ক্ষা মিশ্রিত লোকের খিচুড়ি প্রকৃত রাষ্ট্রের সংজ্ঞা হতে পারে না। এটি একটি সহজ সরল এবং সর্বগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত। যেদিক থেকেই বিচার করা যাক না কেন হিন্দুস্থানে হিন্দুত্বই রাষ্ট্রীয়ত্ব। এই সিদ্ধান্তের কোনরূপ পরিবর্তন সম্ভব নয়। ইউরোপীয় রাষ্ট্রের তুলনায় নিজেদের জাতীয়তার প্রমাণ দেওয়া কোনও প্রয়োজন হিন্দু সমাজের নেই। আমাদের রাষ্ট্রীয় ধর্ম বা জাতীয়তাবাদ হাজার হাজার বছর ধরে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
বিকৃতির করাল ছায়া
ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বরূপ হিন্দু। এই তত্ত্ব সকলের গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী। এখানে এরকম সংগঠন সংস্থা বা ব্যক্তির উপর সাম্প্রদায়িকতার ছাপ দেওয়া হয় যাঁরা হিন্দুরাষ্ট্র এই সত্যকে রাষ্ট্রীয় চেতনায় তুলে ধরতে চায়। বিশ্বের অন্য কোথাও এমন হয় না। নিজের রাষ্ট্রের বিষয়ে সকলে একই জিনিস মেনে চলে। আর তাকে স্বীকার করে নিয়েই আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক মতবাদের ভিন্নতা প্রকাশ করা হয়। বিদেশী ইংরেজ শাসকদের দ্বারা আমাদের রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের উপর যে আবরণ ধূর্ততার সঙ্গে আরোপিত ছিল তাকে যেভাবেই হোক ছুঁড়ে ফেলতে হবে। বীর সাভারকরের লেখা ‘হিন্দুত্ব’ গ্রন্থেরও আট দশক পূর্ণ হয়ে গেল। ডা. হেডগেওয়ারও সর্বদা বলে এসেছেন আমাদের দেশ হিন্দুরাষ্ট্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এর জন্য কোন বিবাদের প্রয়োজন নেই। হিন্দু কে বা কারা এটা সবাই জানে, আর ভারতবর্ষই যে তাদের রাষ্ট্র সেটাও বিশ্ববাসী অবগত বরং স্বয়ং হিন্দুসমাজই আত্মবিশ্বাস শূন্য হয়ে এটাকে স্বীকার করতে পারছে না। শ্রী মাধব সদাশিব গোলওয়ালকর, গুরুজী এই সত্যকে জনমনে স্থাপনের জন্য দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে লাগাতার প্রচেষ্টা করেছেন। তিনি বুঝিয়েছেন এই বিশ্বাসের মধ্যে কতটা আত্মপ্রত্যয় লুকিয়ে আছে। হিন্দুরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিষয়ে উনি কখনো কোনও আপস করেন নি। তাকে সাম্প্রদায়িক বলে এক ঘরে করা হয়েছে কিন্তু তিনি তা গ্রাহ্য করেননি। পণ্ডিত দীনদয়ালজী শ্রীগুরুজীর সঙ্গে চিন্তাধারার আদান-প্রদান করতেন এবং তারা পরস্পরের ভাবনার গভীর সমর্থক ছিলেন। ভারতীয় জনসঙ্ঘের গঠন ও বিকাশের দায়িত্ব তিনি নিয়েছিলেন কিন্তু ভারতীয়ত্ব আসলে যে হিন্দুত্ব এই সমীকরণটি তিনি কখনো ভোলেন নি। এইজন্য দেখা যায়, জনসঙ্ঘের তাত্ত্বিক প্রতিষ্ঠার সময় বা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসাবে দেশের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার সময় উনি হিন্দু জীবনধারাকেই জাতীয় জীবনধারা বলতেন। ফলে তথাকথিত প্রগতিবাদী দলের প্রতিনিধিরা তাঁকে সাম্প্রদায়িক বলে আখ্যা দিয়েছিল। এই প্রবণতা এখনও সমানভাবে বিদ্যমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.