গৌতম-ভাবনার কার্যকরী পদক্ষেপে বিবেকানন্দ শিশু-বিদ্যা মন্দির

মিলন খামারিয়ার প্রতিবেদন। ১লা জানুয়ারিকে কল্পতরু দিবসের মতো ১৪ ই ফেব্রুয়ারিকে ভারতীয়করণ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন কল্যাণ গৌতম। তিনি বেশ কয়েকবছর ধরেই সভা-সমিতিতে, প্রবন্ধ-নিবন্ধে দিনটির নবতর ব্যাখ্যা করে আসছেন। এই নব্য ন্যারেটিভের ফলশ্রুতিতে মালদায় অনুষ্ঠিত হল মাতৃ-পিতৃ পূজন উৎসব । আয়োজন করেছিলেন বিবেকানন্দ শিশু/বিদ্যা মন্দিরের কার্যকর্তা ও সদস্যরা। আজ অনুষ্ঠিত হল সেই কার্যক্রম।

গত ২০২০ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারি ঋতম বাংলায় একটি নিবন্ধে কল্যাণ গৌতম ‘পিতৃমাতৃ পূজন দিবস” হিসাবে ১৪ ই ফেব্রুয়ারিকে পালনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তাঁর পরামর্শ ছিল দেহবাদ সমন্বিত প্রেমের দিবস হোক ১ লা ফাল্গুন, যা বসন্ত উৎসবের শুরুর দিন। ঘটনাচক্রে ২০২৩ সালে ১৪ ই ফেব্রুয়ারি ও ১৪২৯ বঙ্গাব্দের ১ লা ফাল্গুন একই দিনে পড়েছে। নিবন্ধটি পড়লে পরিস্কার হবে কল্যাণ গৌতমের চিন্তা-ভাবনার স্রোত। নিবন্ধে শ্রী গৌতম লিখছেন, “সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের দিনটিকেও অতিক্রম করে সনাতনী পরত মাখিয়ে দিন। কে আছেন সাংস্কৃতিক-জাতীয়তাবাদী কার্যকর্তা? যে ভালোবাসা চিরন্তন, যে ভালোবাসা হতে পারে নিখাদ, হতে পারে নিঃস্বার্থ — তাই ১৪ ই ফেব্রুয়ারি জুড়ে বসুক ভারতবর্ষে, পিতৃমাতৃ পূজন দিবস হিসাবে। আর দেহবাদের ভালোবাসার দিনটি হোক ১ লা ফাল্গুন। ১৪ ই ফেব্রুয়ারিকে আমরা অস্বীকার না করেই দিকে দিকে ছড়িয়ে দিতে পারি পিতামাতার স্নেহাশীর্বাদের অকৃত্রিমতা। ভালোবাসার জয় এভাবেই হোক ভারতীয় রীতিতে। পিতামাতাকে ভালোবাসার দিন; পুত্র-কন্যা, পৌত্র-পৌত্রীকে ভালোবাসার দিন হোক ১৪ ই ফেব্রুয়ারি। ঔপনিবেশিকতার পরাজয় এভাবেই ঘটুক। তার পরই ১ লা ফাল্গুন অশোক ফুলের মঞ্জরী দিয়ে পালিত হবে ভারতীয় প্রেমের দিবস, বসন্তোৎসব।”
দেখা যাচ্ছে, ১৮৮৬ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে খ্রীস্টিয় ক্যালেণ্ডারে প্রথম দিনটিকে শ্রীরামকৃষ্ণদেব হিন্দুত্ববাদের পরত মাখিয়ে দিলেন। হিন্দুত্বের জয় সাধিত হয়েছিল। ১ লা জানুয়ারি তাই যত না খ্রিস্টীয় উৎসব, তার চাইতেও কল্পতরু-র সুগন্ধি প্রকটিত। ১৮৮৬ সালে এই দিনটি তিনি কল্পতরু হয়েছিলেন। নিঃশব্দে একটি ধর্মীয় বিপ্লব এনে দিলেন তিনি খ্রিস্টীয় দুনিয়ায়। এর যে কতটা শক্তি, তা আগামী দিনে খ্রিস্ট-সমাজ বুঝতে পারবে, ততদিনে ধর্মনদী ধর্মতলা পেরিয়ে অনেক দূরে বয়ে যাবে। একইভাবে ১৪ ই ফেব্রুয়ারিকে ভারতীয় ঘরানায় পিতামাতার প্রতি সন্তানের ঈশ্বর জ্ঞানে পূজার আয়োজন ঘটতে দেখা যাবে। পাশ্চাত্যে বৃদ্ধ বাবা-মাকে ওল্ড-এজ হোমে পাঠিয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ভারতবর্ষেও তা ক্রমাগত জাঁকিয়ে বসছে। কল্যাণ গৌতমের লেখার মূল উদ্দেশ্য ছিল ১৪ ই ফেব্রুয়ারিকে ব্যবহার করে বৃদ্ধ মা-বাবাকে পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে বাঁধা। ভারতের মানুষ জানতেন পিতাকে দেবতা জ্ঞানে পূজা করতে, মাতাকে দেবতা জ্ঞানে মানতে, আচার্যকে দেবতা জ্ঞানে সম্মান করতে, অতিথিকে দেবতা জ্ঞানে সেবা করতে। স্কুলের আচার্যেরা আজ তাই শিশু পড়ুয়াদের সেই পাঠ আবার নতুনভাবে দিলেন। দিনটি স্মরণীয় হয়ে রইলো। সনাতনী সংস্কৃতির জয় হল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.