অবৈধ নির্মাণে ভরেছে হাওড়া শহর, পথে নেমে দেখল প্রশাসন

কোনও বহুতলের নির্মাণকাজ বন্ধের নোটিস দেওয়ার পরেও অবাধে কাজ চলছে। কোনও বহুতলের বেআইনি অংশ পুরসভা ভেঙে দেওয়ার পরেও তা মেরামত করে ফের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। আবার, কোনও কোনও বহুতলের বাইরে পুরসভার অনুমোদিত নকশার বোর্ড না-ঝুলিয়েই চলছে অবৈধ নির্মাণ।

হাওড়া পুর এলাকায় বহুতলগুলির নির্মাণকাজ নিয়ম মেনে হচ্ছে কি না, তা সরেজমিনে দেখতে বুধবার পথে নেমেছিলেন পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী-সহ পুর বিল্ডিং দফতরের ইঞ্জিনিয়ার ও হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা। মধ্য হাওড়া ও শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ১০টি নির্মীয়মাণ বহুতলের উপরে সমীক্ষা চালানোর পরে সামগ্রিক ভাবে চমকপ্রদ এই তথ্যই পুরসভা ও পুলিশ আধিকারিকদের সামনে এসেছে। যা দেখে পুরসভার কথা মতো পুলিশ ঘোষণা করেছে, সরকারি আদেশ লঙ্ঘন করলে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারায় মামলা করা হবে। পাশাপাশি, যে সব নির্মীয়মাণ বহুতল পুর বিধি মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেই পুলিশ নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের পর থেকে পুর নির্বাচন না-হওয়ায় হাওড়া পুরসভা পরিচালনা করছেন প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্যেরা। অভিযোগ, নির্বাচিত বোর্ড না থাকার সুযোগ নিয়ে গত পাঁচ বছরে শহর জুড়ে পুরসভার নথিভুক্ত বেআইনি বহুতল তৈরি হয়েছে পাঁচ হাজারেরও বেশি। বর্তমান প্রশাসকমণ্ডলী দায়িত্ব নেওয়ার পরে বেআইনি বহুতল রুখতে কয়েকটি সদর্থক পদক্ষেপ করে। যার অন্যতম হল, কোনও নির্মীয়মাণ বহুতলের বাইরের দেওয়ালে পুরসভার অনুমোদিত নকশা-সহ জমির মালিকের নাম ও নির্মাণকারী সংস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য লিখে রাখতে হবে। পাশাপাশি, অনুমোদিত নকশা না মেনে যে সব বহুতল তৈরি হয়েছে, অর্থাৎ তেতলার অনুমোদন নিয়ে পাঁচ বা ছ’তলা তোলা হয়েছে, সেগুলির তালিকা বানিয়ে ভাঙার কাজ শুরু হয়। তার জন্য ‘ডেমোলিশন টিম’ওবাড়ানো হয়।

কিন্তু এত কিছুর পরেও বেআইনি বহুতল তৈরি আটকানো যাচ্ছে না বলে বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরসভায় অভিযোগ আসতে শুরু করে। তাই পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে এ দিন পুলিশের সাহায্য নিয়ে পথে নামেন পুর চেয়ারপার্সন।

এ দিন পুর চেয়ারপার্সনের নেতৃত্বে বেলা ১১টা থেকে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিক এবং হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা ১৭, ২১, ২৩, ২৪ এবং ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে সমীক্ষা চালান।পরে চেয়ারপার্সন জানান, সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, ১০টি বহুতলের মধ্যেমাত্র দু’টি বহুতল পুরসভার অনুমোদিত নকশার বোর্ড ঝুলিয়ে জমির মালিকের নাম এবং জায়গার বিবরণ দিয়ে কাজ করছে। বাকি আটটি বহুতলসেই নিয়মের ধার ধারেনি। দেখা গিয়েছে, একটি বহুতলের বেআইনি অংশ ভেঙে ফেলার পরে ফেরমেরামত করে কাজ চলছে। আর একটি বহুতল কাজ বন্ধের নোটিস দেওয়া সত্ত্বেওতা মানেনি।

পুর চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘এ সব ক্ষেত্রে ফ্ল্যাটের ক্রেতাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। ফ্ল্যাট কেনার আগেসেটি বেআইনি কি না, তাখতিয়ে দেখতে হবে। ব্যাঙ্কগুলিকেও গৃহ ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।’’ চেয়ারপার্সন জানান, এমন অভিযান হাওড়া জুড়ে চলবে। কঠোর ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.