নতুন কর ব্যবস্থা সঞ্চয় এবং বিমায় বাধা হবে না, বললেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা

বাজেটে করের দ্বিতীয় বিকল্পটিকে প্রধান হিসাবে তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছিলেন, একে ‘আকর্ষণীয়’ করা হয়েছে করদাতাদের লাভের কথা ভেবেই। যাতে আগের তুলনায় কম কর গুনতে হয়। কিন্তু বিমা শিল্প ও বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, নতুন ব্যবস্থা সঞ্চয়ের পাশাপাশি বিমাকেও নিরুৎসাহ করবে। ফলে কর বাঁচলেও, ঝুঁকি তৈরি হবে মধ্যবিত্তের আর্থিক সুরক্ষা নিয়ে। বাজেট নিয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক বৈঠকে শনিবার নির্মলার দাবি, তেমন কোনও আশঙ্কা নেই। আয়কর সংক্রান্ত প্রস্তাব বিমার প্রসারে বাধা সৃষ্টি করবে না। নতুন কর ব্যবস্থা সঞ্চয়েও কোপ ফেলবে, এই অভিযোগ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘কর কমে যাওয়ায় হাতে থাকা টাকা দিয়ে করদাতা খুশি মতো সঞ্চয় প্রকল্প বাছবেন। আর করছাড়ের সুবিধা পেতে পুরনো প্রকল্প তো রইলই।’’

বাজেটে নতুন আয়কর কাঠামোয় ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় পুরোপুরি করমুক্ত। করের হারও কমেছে। রয়েছে ৫০,০০০ টাকা স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন। তবে জীবন বিমা, স্বাস্থ্য বিমা, বাড়ির ঋণের সুদ-সহ কোনও করছাড়ই মিলবে না। জীবন বিমায় বছরে ৫ লক্ষ টাকার বেশি প্রিমিয়ামেও ছাড় নেই। শিল্পের একাংশের দাবি, দেশবাসীর মন পেতে বাজেটে আয়করের ‘তাস’ খেলেছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু প্রিমিয়ামে করছাড় না পেয়ে অনেকেই হয়তো বিমা করবেন না। আর্থিক সুরক্ষা নষ্ট হবে তাঁদের। এসবিআই লাইফের প্রাক্তন এমডি এবং এনপিএস ট্রাস্টের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অতনু সেন বলেন, এই সুরক্ষা বৃদ্ধিই সেগুলিতে করছাড়ের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। হালে কোভিড বুঝিয়ে গিয়েছে স্বাস্থ্য এবং জীবন বিমা কতটা জরুরি। তাঁদের কথায়, “ভারতে গ্রাহকদের নিজে থেকে বিমার পলিসি কেনার ঝোঁক কম। সংস্থার প্রতিনিধিরাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের কাছে গিয়ে বুঝিয়ে পলিসি বিক্রি করেন। করছাড় বাড়তি উৎসাহ দেয়। তাই নতুন ব্যবস্থা বিমা সম্প্রসারণের পথ আটকাতে পারে।’’

এ দিন নির্মলা অবশ্য বলেছেন, ৫ লক্ষ টাকা প্রিমিয়াম আসলে বিত্তবানদের এক ধরনের করফাঁকি। এর সঙ্গে বিমার সম্প্রসারণের সম্পর্ক নেই। তবে বছরে ৫ লক্ষ টাকার কম প্রিমিয়ামের পলিসি সম্প্রসারণের প্রধান হাতিয়ার। পুরনো কর ব্যবস্থায় করছাড় বহাল রয়েছে তাতে।

স্বাস্থ্য বিমা বিশেষজ্ঞ এন বাঞ্চুরের মতে, কেন্দ্র স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আরও বেশি মানুষকে আনতে চাইছিল বলেই করছাড় দিচ্ছিল। কিন্তু লোকে এখন কম হারে করের ব্যবস্থায় আকৃষ্ট হবেন। সেখানে করছাড় না থাকায় বিমা করার উৎসাহ কমবে। একই আক্ষেপ ন্যাশনাল ইনশিওরেন্সের প্রাক্তন ডিরেক্টর সিদ্ধার্থ প্রধানের। তাঁর মতে, কোভিড কাটার ফলে জীবন এবং স্বাস্থ্য বিমা কেনায় ভাটা পড়ছে। এখন উৎসাহ দরকার ছিল। কেন্দ্রের পদক্ষেপ বিমা শিল্পের ক্ষতি করতে পারে বলে আশঙ্কা বজাজ অ্যালিয়াঞ্জ লাইফ ইনশিওরেন্সের এমডি-সিইও তরুণ চুঘের-ও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.