একটা গ্রামে কেউ রান্নার কাজ শেখে, কেউ ফিটার, কেউ ছুতোর, কেউ কামার l কিন্তু সবাইকে প্রশিক্ষণ শেষে বলা হল কামারের কাজ করতে l বলা হল বাকী সব কাজ/পরিষেবা পাশের গ্রাম থেকে নেয়া হবে l কি হবে বাকীদের? সহজেই অনুমেয় l আয় কমবে, অসাম্য বাড়বে, গ্রামের সম্পদ পাশের গ্রামে চলে যাবে l
এই অবস্থায় মোদীজি দেশের দায়িত্ব নেন ২০১৪ তে l দেশে শুধু পরিষেবার কাজ অর্থাৎ IT আছে l খাওয়ার তেল, টিভি, মোবাইল, পুতুল সব বিদেশ থেকে আসে l ইংরেজী জানলে মাসে ২ লক্ষ, না জানলে ১০০ দিনের কাজ l ৬০% ভোজ্য তেল সবুজ বিপ্লবের ৫০ বছর পরেও আমদানি করতে হয় l যাদবপুর বা JNU এর ছাত্ররা পাশ করে বিদেশে যায়, অথচ মছলন্দপুরের চাষীর অধিকার নেই তার সবজি পাটনায় বেচার বা সরাসরি ম্যাকডোনাল্ডকে বেচার l প্রস্তাব দিলে আন্দোলনে নামবে সেই যাদবপুর, JNU এর ছাত্ররাই l দেশে দুই ডজন অপ্রত্যক্ষ কর l মুম্বাই থেকে সিঙ্গাপুর ব্যবসা করা সহজ, কলকাতায় ব্যবসা করা কঠিন l তার উপর প্রতিবেশী দেশ টাকা ছাপিয়ে আমাদের উগ্রপন্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছে আমাদের সম্পদ ব্যাবহারের জন্য l ব্যাংক জাতীয়করণের ৪৫ বছর পর দেশের ৫০% মানুষ ব্যাংকে খাতা খোলে নি l বীমা কি জিনিস দেশের মানুষ জানতো না l আর সরকারি ব্যাংকের হাতে কোন আইন ছিল না বড় ব্যাবসায়ীদের থেকে টাকা আদায় করার জন্য l কে এখানে উৎপাদন করবে?
মোদীজি শুরু করলেন সংস্কার l জনধন, বীমা, দুর্ঘটনা বীমা, চিকিৎসা বীমা, নোটবন্দি, IBC, RERA, GST, UPI, রূপে, শ্রমিক বিল কোডসহ ৭০০০ সংস্কার আনলেন সিস্টেমে l আর প্রতিটি সংস্কারের সঙ্গে গালি দেয়া শুরু করলো মিডিয়া, খান মার্কেট গ্যাং, JNU থেকে কলকাতার প্রেস l
শুরু হল ম্যানুফ্যাক্টয়ারিং l কৃষি বিল ফেরৎ নিতে হলেও সরকার চাষীদের স্বাধীনতা দিতে বধ্যপরিকর l কিন্তু দেশ পাল্টেছে l ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডকে ছাড়িয়ে পৃথিবীর পঞ্চম অর্থব্যাবস্থা ভারত l বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থসংস্থার মতে আগামী ৪ বছরে জাপান এবং জার্মানিকে ছাড়িয়ে তিননাম্বারে পৌঁছাবে ভারত l মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে l গত বছর জিডিপির ৬০% এসেছে এর থেকেই l GST বেড়েছে ১৫% l মানুষ ১০০ দিনের কাজ ছেড়ে স্বনিযুক্তি প্রকল্প শুরু করছে l ৩১ কোটি মুদ্রা লোনের মধ্যে মাত্র ৭% মানুষ NPA র আওতায় l অর্থাৎ ৯৩% মানুষ সফল l আট বছরে EPF এ নথিভুক্ত হয়েছে ১৩ কোটি মানুষ l অর্থাৎ গত আট বছরে ফরমাল সেক্টর এ ১৩ কোটি মানুষ কাজ পেয়েছে l দেশ রপ্তানি করছে মহাকাশ, প্রতিরক্ষা সরাঞ্জাম থেকে ইলেকট্রিক গাড়ী l পণ্য রপ্তানিতে রেকর্ড করছে দেশ l পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের জেনেরিক অসুধ পাঠাচ্ছে ভারত l ব্রাজিলের রাষ্ট্রপ্রধান একে তুলনা করেছেন ভগবান হনুমানের বিশল্যকরনীর সঙ্গে l
আবার শুরু করি ২০১৪ থেকে l মোদীজি যখন ক্ষমতায় আসেন, সারা ভারত দৌড়াচ্ছিল শুধু ইংরেজী শিখতে l বাবা মা আয়ের বড় অংশ খরচ করছিলেন বেসরকারি স্কুলে l কারণ ইংরেজী শিখলে IT তে চাকরি পাওয়া যাবে l শিক্ষাগত যোগ্যতা যাই হোক l ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার বা আইনের ছাত্র l না জানলে ১০০ দিনের কাজ l সে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার হোক বা ইতিহাস স্নাতক l
আর ২০২২? পরিস্থিতি আমূল পাল্টেছে l ব্রিটেনের সংসদে ব্রিটিশ সাংসদ গ্যারিথ থমাস বললেন, তাঁদের ভারতীয় ভাষা শিখতে হবে l কারণ ভারতই গন্তব্য l এটাই নতুন ভারত l
তবে একটা রাজ্যে এর কোন প্রভাব পড়ে নি l আমাদের পশ্চিমবঙ্গ l এখনো আমরা ১০০ দিনের কাজের জন্য কান্নাকাটি করি l গুজরাট মহারাষ্ট্রসহ পুরো দক্ষিণ ভারতে গাড়ী চালিয়ে বা রান্না করে ১০০ দিনের কাজের আড়াই থেকে তিনগুন আয় করে মানুষ l ওখানে টাকা ফেরৎ যাচ্ছে l আমাদের রাজ্যে ৫০০০ টাকার চাকরি দিলে ১০০০ স্নাতক কাজের জন্য দরখাস্ত করে l এখানে ১০০ দিনের কাজ দরকার l সারা দেশ যখন ৩৬৫ দিনের কাজের জন্য দৌড়াচ্ছে, আমরা ১০০ দিনের কাজের জন্য কাঁদছি l
সুদীপ্ত গুহ