কলকাতা, ২১ সেপ্টেম্বর: বাবুল সুপ্রিয়কে সাড়ে ৬ ঘণ্টার ধরে বন্দি করে নিগ্রহের প্রতিবাদ করায় হুমকি দেওয়া হচেছ জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক, গবেষক ও কর্মীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাপা আতঙ্কের পরিবেশ। লাঠি হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে দুষ্কৃতীরা। হস্টেলের ছাত্রদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সাঁটা হয়েছে হুমকি পোস্টার! এমনটাই অভিযোগ উঠছে।
অভিযোগ উঠেছে, যাদবপুরে গেরুয়া শিবিরের উত্থানকে ঠেকাতে বাম-মাওবাদী-তৃণমূল ছাত্র সংগঠনগুলি পরিকল্পিত ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্র অধ্যাপক গবেষক এবং কর্মীদের বিভিন্ন সময়ে টার্গেট করে নানা কটূক্তি করে, অপপ্রচার চালায়। এতদিন বিষয়গুলি সেভাবে সামনে না আসলেও বাবুলের নিগ্রহের প্রতিবাদ করায় এবার সরাসরি আক্রমণের তির বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদীদের উপর। শুধু কটুক্তি নয়, এবার সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া করার হুমকি দিয়ে পোস্টার ফেলা হয়েছে এক অধ্যাপকের ঘরের দরজায়, উঠছে ক্লাস বয়কটের ডাক!
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমনকল্যাণ লাহিড়ীর ঘরের দরজায় বাংলা ও হিন্দিতে হুমকি দিয়ে পোস্টার মারা হয়েছে। কিন্তু এই পোস্টারে কোনও সংগঠনের নাম নেই। পোস্টারে লেখা হয়েছে, “জব ছাত্র কো মারা জা রহা থা, আপ কেপি বসু মে থে। ফ্যাসিস্ট পার্টি ইয়া ছাত্র – কিসকা সাথ হ্যায় আপ’, ‘যাদবপুরের মাটিতে দালাল শিক্ষকের ঠাঁই নেই’, ‘স্টুডেন্ট বিরোধী শিক্ষক আইকেএল-কে জানাই ধিক্কার’, ‘আইকেএল তুমি ছাত্রদরদি না ছাত্ৰ-বিরোধী? জবাব চাই, জবাব চাই।’
বিষয়টি নিয়ে ইমনকল্যাণবাবু বলেন, ‘আমি এখন ফ্যাসিস্ট! এই প্রথম রাজনৈতিক কারণে আমায় অপমান করা হল। অভিযোগ করে তিনি বলেন, উপাচার্যকে কি জানাব? উনি হাসপাতালে, কাকে জানাব? যে কোনও সময় আমায় শারীরিক নিগ্রহ করাও হতে পারে। আগে তো মুখ খুলতে পারিনি। এবার মুখ খুলে এই অবস্থা। এর পিছনে অতিবাম-তৃণমূল রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী পরিষদের সম্পাদক তথা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী পলাশ মাজির দাবি, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাব বেড়েছে আমাদের। আর এর জন্য অধ্যাপক ও কর্মচারীদের আগেও মাঝে মাঝে হুমকি দেওয়া হত। হেনস্থা করার চেষ্টাও হত। এবারের ঘটনায় ওঁরা ব্যাকফুটে। তার জন্যই বাম-তৃণমূল সংগঠনগুলি ভয় পেয়েছে। আমার বিরুদ্ধে শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। বলা হয়েছে, ওই ঘটনায় আমি ছাত্রদের মেরেছি। আমার ল্যাবে বিজেপির মিটিং হয়।’
গবেষক উৎসব চক্রবর্তীর অভিযোগ, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। তিনি বলেন, সেদিন আমায় ও গবেষক শর্মিষ্ঠা বসুকে মাটিতে ফেলে পেটানো হয়েছিল। আমরা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম বলে। এখন অতিবাম ছাত্ররা ক্যাম্পাসে লাঠি নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অধ্যাপকদের টার্গেট করে তাদের ক্লাস বয়কটের প্রচার চলছে। হস্টেলে থাকা ছাত্রদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দিচ্ছে না।’
জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক সংঘের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক অধ্যাপক পবিত্র পাল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পোস্টার পড়েছে এতে শিক্ষকমহল আতঙ্কিত। যে কোনও সময় তাঁরা আক্রান্ত হওয়ার ভয় পাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষকে এর দায়িত্ব নিতে হবে। যদি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ক্যাম্পাসে ফিরে না আসে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষৎ ভালো হবে না।’
বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন ডিন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “যারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের পিছনে বড় মাথা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকও আছেন। পরিকল্পনা করেই হচ্ছে। এখানে ভিন্ন মতের কোনও স্থান নেই। কেউ ভিন্ন মতের কথা বললেই ফেউ লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে পাওয়া যেত। এইসব অপকর্ম করবে বলেই সিসিটিভি লাগাতে দেওয়া হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
যাদবপুরের প্রাক্তন অধ্যাপক তথা শিক্ষবিদ অচিন্ত্য বিশ্বাসের অভিযোগ বাম আমল থেকেই এই সংস্কৃতি চলছে। তিনি বলেন, “আমি ওই বাম আমলেও মানসিক ভাবে অত্যাচারিত হয়েছি। এখন আমার স্কলারদেরও অত্যাচার করা হয়। বৃহস্পতিবার আমার ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল। গেলে আমাকে ওরা হেনস্থা করতই।”
রক্তিম দাশ
2019-09-23