তিন সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার। বাংলা সফর সারলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত৷ ৩১ অগস্ট কলকাতায় আসেন তিনি। ফের আসেন ২১ সেপ্টেম্বর। দু’দিনের সফর শেষ হল আজ। সেই সফরের মধ্যে রাজ্যের সঙ্ঘ পরিবারের কর্তাদের নিয়ে দু’দিনের সমন্বয় বৈঠকে বসেন ভাগবত। শুধু বৈঠকও নয়, উলুবেড়িয়ায় সঙ্ঘের স্কুলে দু’দিন ধরে চলে প্রশিক্ষণ বর্গও। জানা গিয়েছে, এই কর্মসূচিতে মোট ৩৬টি সংগঠনের প্রধানরা ডাক পেয়েছেন। যোগ দেন উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গ মিলিয়ে ২৩৫ জন কার্যকর্তা।
সব সংগঠনের নেতাদের নিয়ে সঙ্ঘের সমন্বয় বৈঠক নতুন কিছু নয়। রাজ্য থেকে জেলা সব স্তরেই নিয়মিত এমন বৈঠক হয়ে থাকে। বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ঠিকঠাক রাখতেই এই ধরণের বৈঠক হয়। কিন্তু সেই বৈঠকে সঙ্ঘপ্রধান তথা সর-সঙ্ঘচালক উপস্থিত থাকাটা বেনজির। এর আগে এমন কোনও বৈঠকের কথা মনে করতে পারছেন না সঙ্ঘ কর্তারা।
এবারের বৈঠকে সব থেকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে সব সংগঠনের মধ্যে সমন্বয়ে। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচন। আর তার আগে সঙ্ঘ পরিবারের সব সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করে কর্মসূচি নেওয়া যে বিশেষ জরুরি তা এই বৈঠকে খুব স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেওয়া হয় বলে খবর। রাজ্য বিজেপির পক্ষে বৈঠকে ছিলেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সংগঠন সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু, মুকুল রায় প্রমুখ। দু’দিনের এই বর্গের শেষে রবিবার বক্তব্য রাখেন আরএসএস প্রধান তথা সর-সঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। তিনি সব সংগঠনকেই বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে এক যোগে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত করার পাশাপাশি বলেছেন, সকলকে এক সঙ্গে চলতে হবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যে ভাবে রুট মার্চের সময়ে সবার পা মিলিয়ে মিলিয়ে চলতে হয় ঠিক তেমন ভাবে সাংগঠনিক ক্ষেত্রেও চাই সমান পদ-সঞ্চালন। সেই ভাবেই লক্ষ্যের দিকে এগোতে হবে।
আরএসএস সূত্রে জানা গিয়েছে, মোহন ভাগবতের বক্তব্যে উঠে আসে এই রাজ্যের চিরকালীন সমস্যা সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়। অনুপ্রবেশ নিয়ে সব সংগঠনকেই কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেই প্রসঙ্গেই এসেছে এনআরসি-র কথা। মোহন ভাগবতের স্পষ্ট বার্তা, বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের এই দেশের নাগরিকত্ব দিতেই হবে। অসমে এনআরসি-র তালিকায় বহু হিন্দুর নাম বাদ গিয়েছে। জানা গিয়েছে, অসমের মতো পরিস্থিতি যাতে বাংলায় তৈরি না হয় তার জন্য এখন থেকেই লক্ষ্য স্থির করা প্রয়োজন বলেও বার্তা দিয়েছেন ভাগবত। এছাড়াও ভাগবতের বক্তব্যে উঠে আসে নারী সশক্তিকরণ ইস্যু। তিনি বলেন, বাংলায় নারী পাচার, নির্যাতন, ধর্ষণের মতো নিন্দনীয় কাজ বন্ধ করতেই হবে। একই সঙ্গে চাই নারীকে দক্ষ করে তোলা, সামাজিক কাজে মর্যাদা দেওয়া।
এই বৈঠকে রাজ্য বিজেপি নিয়ে আলোচনায় আরও একটি বিষয় ওঠে। যাঁরা অন্য দল থেকে বিজেপিতে আসছেন তাঁদের প্রতি কেমন মনোভাব থাকবে তা নিয়ে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের মধ্যে মতান্তর চলছে। এদিন তার মীমাংসা করে দিয়ে সঙ্ঘ প্রধান বলেন, যাঁরা আসছেন তাঁদের স্বাগত জানাতে হবে। এটাই সঙ্ঘের আদর্শ। তবে যাঁরা আসছেন তাঁদের ধীরে ধীরে সঙ্ঘের অনুশাসনে নিয়ে আসতে হবে।