ছেলের সামনে গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল, বিদায় বেলায় কেঁদে ফেললেন সানিয়া

টেনিস জীবনের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় দিয়ে শেষ করতে পারলেন না সানিয়া মির্জা। মিক্সড ডাবলস ফাইনালে হারের পর আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না তিনি। টেনিস জীবনের কথা বলার সময় কেঁদে ফেললেন সানিয়া।

পিছনের দিকে তাকালে ভারতীয় টেনিসের নিরিখে সানিয়ার যাত্রা নিঃসন্দেহে বর্ণময়। ভারতীয় মেয়েরাও যে বিশ্বমানের টেনিস খেলতে পারে, সর্বোচ্চ পর্যায় সমানে সমানে লড়াই করতে পারে, তা প্রমাণ করেছে সানিয়ার র‌্যাকেট। কোর্টে প্রতিপক্ষকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে না চাওয়া সানিয়া শেষ বেলায় শুধু কাঁদলেনই না, তাঁর অসংখ্য অনুরাগীদেরও কাঁদালেন। কথা বলার সময় বার বার চোখের জল মুছেছেন। বার বার তাঁর গলা বুজে এসেছে। তবু স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেছেন। পারেননি।

২০০৯ সালে সানিয়া অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে মিক্সড ডাবলস খেতাব জিতেছিলেন মহেশ ভূপতিকে নিয়ে। খেলোয়াড় জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা সানিয়া চেয়েছিলেন সপ্তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব নিয়ে থামতে। রোহন বোপান্নাকে নিয়ে মিক্সড ডাবলসের ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেও শেষ রক্ষা হল না। ফাইনালে তাঁরা ব্রাজিলের স্টেফানি-মাতোস জুটির কাছে হারলেন ৬-৭ (২-৭), ২-৬ ব্যবধানে। সত্যিই কি হারলেন? ৪২ বছরের বোপান্নাকে নিয়ে ৩৬ বছরের সনিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল খেলা কম কৃতিত্বের কী!

খেলোয়াড় জীবনের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যামে ভারতীয় টেনিসের মান আরও এক বার বুঝিয়ে দিয়েছেন সানিয়া। ফাইনালের পর সানিয়া বলেছেন, ‘‘আমি কাঁদছি। এটা আসলে খুশি অশ্রু। চোখের এই জল দুঃখের নয়। চাইলে আরও গোটা দুয়েক প্রতিযোগিতা খেলতেই পারতাম। ২০০৫ সালে মেলবোর্ন থেকেই টেনিস যাত্রা শুরু করেছিলাম। তখন আমার বয়স ছিল ১৮। সেরিনা উইলিয়ামসের সঙ্গে খেলেছিলাম। আমার জীবনে রড লেভার এরিনার আলাদা জায়গা রয়েছে। গ্র্যান্ড স্ল্যাম কেরিয়ার শেষ করার জন্য এর থেকে ভাল জায়গা আমার কাছে নেই।’’

ফাইনালে কোর্টের পাশে স্বামী শোয়েব মালিক ছিলেন না। তিনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ খেলতে ব্যস্ত। দু’জনের সম্পর্কও আর আগের মতো নেই। তাঁর কথা বললেনও না। চার বছরের ইজ়হান মির্জা মালিক কিন্তু মাকে ফাইনালে সারাক্ষণ উৎসাহিত করেছে। ম্যাচের পর সানিয়ার মুখে শোনা গিয়েছে ছেলের কথা। সানিয়া বলেছেন, ‘‘আমার পরিবারের সকলে এখানে রয়েছে। কখনও ভাবিনি ছেলের সামনে গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল খেলতে পারব। সেটাও হল।’’

ম্যাচের পর ছেলে ইজ়হানের সঙ্গে সানিয়া।

সানিয়া পারলেন। সানিয়া পেরেছেন। চাইলে হয়তো আরও কিছু দিন পারতেন। তবু থামলেন। আরও একটা প্রতিযোগিতা খেলার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। গ্র্যান্ড স্ল্যাম নয় আর নয়। খেলোয়াড় জীবনের একটা অধ্যায় মেলবোর্ন পার্কেই শেষ করে দিলেন ভারতীয় টেনিসের এক মাত্র মহিলা তারকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.