বর্তমানে স্বার্থান্বেষী কিছু মহল ভারতমাতার দুই সুযোগ্য সন্তান নেতাজি আর ডাক্তারজিকে নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাইছে। এই দুই দেশপ্রেমিক আর প্রায় সম মনোভাবাপন্ন দেশনেতাকে বিকৃত ইতিহাস প্রচারের দ্বারা মুখোমুখি দাড় করাতে সচেষ্ট হয়েছে তারা। যা আদতে হীন আর নোংরা রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই না। আরও উল্লেখযোগ্য যে নেতাজিকে নিয়ে এই বিকৃত ইতিহাসচর্চা করছে তারাই‚ যারা তাঁর জীবদ্দশায় তাঁকে দল থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করেছিল কিংবা তোজোর কুকুর ইত্যাদি বলে নোংরা আক্রমণ করেছিল। আজ তারাই নেতাজীপ্রেমী সেজে ভারতবাসীর মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে চাইছে।

মঙ্গলবার কলকাতায় একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখার সময় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) একজন বরিষ্ঠ স্বয়ংসেবক‚ অজয় ​​কুমার নন্দী, সংঘচালক, পূর্বাঞ্চল জানিয়েছেন যে –


“নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) কোনো ‘সমালোচক’ ছিলেন না।” সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের পশ্চিমবঙ্গ সফরের বিষয়ে জানানোর সময়েই কথা প্রসঙ্গে উক্ত মন্তব্যটি করেন সংগঠনটির প্রতিনিধি। তিনি বলেন যে নেতাজি যে সঙ্ঘের সমালোচনা করেছিলেন‚ এটার কোনো ঐতিহাসিক সূত্র নেই এবং এই কথা বলার সময় কেউ কোনো তথ্যসূত্রও দিতে পারে না। এছাড়াও নেতাজি এবং সংঘের প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের মধ্যে সম্পর্কের কথাও তিনি তুলে ধরেন।

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রতিষ্ঠাতা ডাক্তারজি হেডগেওয়ারের সাথে নেতাজির সম্পর্ক ইতিহাসের নতুন কোনো তথ্য নয়। ডাক্তারজির সাথে ১৯২১ সালেই কংগ্রেসে কলকাতা অধিবেশনে নেতাজির প্রথম দেখা হয়েছিল। বাংলার সাথে দুজনেরই গভীর সম্পর্ক আছে। হেডগেওয়ার তার ডাক্তারী পড়াশোনা করেছিলেন কলকাতায়। ১৯১৪ সালের জুন মাসে তিনি ডাক্তারী পাশ করেন। এছাড়াও এই বাংলাতেই তিনি বিপ্লবী দল অনুশীলন সমিতির সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং তার পরবর্তী সাংগঠনিক জীবনের জন্যে প্রস্তুতি নেন।

পরবর্তীতে কংগ্রেসের নীতি আর কর্মপদ্ধতি মানতে না পেরে নেতাজি আর ডাক্তারজি দুজনকেই কংগ্রেস ত্যাগ করতে হয়। নেতাজি এবং ডাক্তারজি উভয়েই বিশ্বাস করতেন যে জাতীয় আদর্শে অনুপ্রাণিত একটি সুশৃঙ্খল সংগঠনই ভারতের স্বাধীনতা অর্জন ও তাকে রক্ষা করতে পারে। তাই নেতাজি ব্রিটিশ বিরোধিতা জোরদার করার জন্যে আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্বের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন আর অন্যদিকে ডাক্তারজিও ১৯২৫ সালে দেশকে স্বাধীন আর স্বনির্ভর করার স্বপ্ন নিয়ে আরএসএস এর প্রতিষ্ঠা করেন।

নেতাজি আরএসএস এর সংস্পর্শে আসেন একটু অভিনবভাবে। নাগপুরের মধ্যে দিয়ে ট্রেন ভ্রমনের সময়‚ একটি চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে তিনি প্রথমবারের জন্যে সঙ্ঘের স্বেচ্ছাসেবকদের ইউনিফর্ম ( গনবেশ) পরে মিছিল করতে দেখেন আর নিজেও রেজিমেন্টেড মানসিকতার হওয়ায় সঙ্ঘ সম্পর্কে কৌতুহলী হয়ে পড়েন।

খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন যে এই স্বেচ্ছাসেবকরা ছিলেন আরএসএসের ছিল এবং সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন তাঁরই প্রাক্তন কংগ্রেস সহকর্মী। খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ তিনি ডাক্তারজির সাথে দেখা করতে চান। এরপর ১৯৪০ সালে তার নাগপুর সফরের সময় ডাক্তারজির সাথে দেখা করতে যান। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ডাক্তারজি সেইসময় গুরুতর অসুস্থ থাকায় তাদের দেখা করা সম্ভব হয় নি। ডাক্তারজি সেই সময় ঘুমিয়ে থাকায় নেতাজি তাঁকে জাগিয়ে বিরক্ত করতে চাননি। ঘুম ভেঙ্গে ওঠার পর তা জেনে হেডেগেওয়ার খুব দুঃখিত হন। আর এর পরের দিনই তাঁর মৃত্যু ঘটে।

আগামী ২৩ শে জানুয়ারি নেতাজির জন্মজয়ন্তীতে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত কলকাতায় হাওড়া এবং কলকাতা খন্ডের স্বয়ংসেবকদের দ্বারা আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এছাড়াও সেদিন সারা দেশ জুড়েই বিভিন্ন পথ সঞ্চালকের আয়োজন করবে স্বয়ংসেবকরা।

©সৌভিক দত্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.