শেষ কবে বাংলায় এমন হয়েছে কেউ মনে করতে পারছেন না। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে উদ্ধার করতে গেলে ছাত্র বিক্ষোভের মুখে পড়ে গেলেন খোদ রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও।
এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে রাজ্যপালের গাড়ির মধ্যেই বসে রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। আর তাঁদের গাড়ির পথ আটকে রয়েছে কয়েক’শ ছাত্রছাত্রী। কেউ বসে পড়েছেন গাড়ির সামনে, কেউ বা শুয়ে পড়েছেন। সব মিলিয়ে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি গোটা ক্যাম্পাস জুড়ে। পুলিশের তরফে ছাত্রদের বলা হয় রাজ্যপাল বয়স্ক মানুষ। তাঁর গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হোক। সঙ্গে সঙ্গেই জবাব আসে, “ওঁনাকে কেউ এখানে আসতে বলেননি।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীনবরণ উৎসবে যোগ দিতে সেখানে গিয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ তথা এবিভিপি আয়োজন করেছিল ওই অনুষ্ঠান। কিন্তু বাবুল ক্যাম্পাসে পৌঁছতেই তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে দেন বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীরা। যাঁরা মূলত নকশাল বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও কারও হাতে কোনও ছাত্র সংগঠনের পতাকা বা ব্যানার ছিল না।
দুপুর থেকে এক টানা বাবুলকে ক্যাম্পাসে আটকে রাখার পরই এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তিনি উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে ফোন করে বলেন, কেন আগে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতি তৈরি হতে দেওয়া হল কেন? একই সঙ্গে রাজ্যপাল ফোন করেন মুখ্য সচিব মলয় দে-কে। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তাঁকে নির্দেশ দেন তিনি। তার পর ৬৮ বছর বয়সী রাজ্যপাল নিজেই গাড়ি নিয়ে রওনা হয়ে যান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে।
ওদিকে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস তার আগেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু রাজ্যপাল গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়েন ক্যাম্পাসে। তার পর তাঁর দেহরক্ষী ও পুলিশের সাহায্য নিয়ে বাবুলের কাছে পৌঁছে যান। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এসি ক্যান্টিনের সামনে বাবুলকে আটকে রেখেছিলেন বিক্ষোভকারীরা। রাজ্যপাল হেঁটে সেখানে পৌঁছে বাবুলকে তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে আসতে বলেন। তিনি আগলে নিয়ে বাবুলকে নিজের গাড়িতেও তোলেন।
কিন্তু এর পরেও শেষ রক্ষা হয়নি। একদিকে বিক্ষোভকারী ছাত্ররা রাজ্যপালের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁরা বলেন, গাড়ি নিয়ে বেরোতে গেলে তাঁদের চাপা দিয়ে যেতে হবে। অন্যদিকে ক্যাম্পাসের মধ্যে ও বাইরে এবিভিপি-র সদস্যরা তাণ্ডব শুরু করে দেন। তাঁরা ইউনিয়ন রুমের কম্পিউটার থেকে ক্যারাম বোর্ড সব ভাঙচুর করেন। ক্যাম্পাসের চার নম্বর গেটের বাইরে আবার দেখা যায় বিজেপি কর্মী সমর্থকরা বাঁশ, লাঠি ইত্যাদি জড়ো করে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। গোটা ইউনিয়ন রুমের দেওয়ালে লাল রঙ দিয়ে ‘এবিভিপি’ লিখে দেওয়া হয়েছে। ভাঙা হয়েছে পাখা, চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ। তছনছ করে দেওয়া হয়েছে গোটা ইউনিয়ন রুম। পড়ুয়াদের অভিযোগ, মাত্র কুড়ি মিনিটে বাইরে থেকে লোক ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে ইউনিয়ন রুমে।