রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের প্রধান শিষ্য তিনি। ভারতে হিন্দু নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃত্ এবং ব্রিটিশ ভারতে জাতীয়তাবাদী ধারণার অন্যতম প্রবক্তা। রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন তিনিই। কলকাতার এক বাঙালি পরিবারে জন্ম তাঁর।
ছেলেবেলা থেকেই আধ্যাত্মিক বিষয়গুলিতে বিশেষ আগ্রহ ছিল। গুরুর কাছে শিখেছেন, সকল জীবই ঈশ্বরের অংশ। তাই মানুষের সেবার মাধ্যমে ঈশ্বরের সেবা করে গিয়েছেন স্বামী বিবেকানন্দ। ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি জন্ম হয় তাঁর। ১৯৮৫ সাল থেকে ভারত সরকার তাঁর জন্মদিনে জাতীয় যুব দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
পড়াশুনায় ভালো হওয়া সত্ত্বেও ২৫ বছরেই গুরুর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন নরেন্দ্রনাথ। জাগতিক আসক্তি ত্যাগ করে সন্ন্যাসীর জীবন শুরু করেছিলেন। সন্ন্যাস গ্রহণের পর তাঁর নাম হয় বিবেকানন্দ। ১৮৯৭ সালে কলকাতায় রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। আবার অন্যদিকে বেলুড়ে রামকৃষ্ণ মঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৮৯৩ এর ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় ধর্ম সংসদের আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে অংশ নিয়েছিলেন তিনিও। বক্তৃতা শুরু করেছিলেন, ‘আমার আমেরিকার ভাই ও বোনেরা’ বলে। শিকাগোর আর্ট ইনস্টিটিউটে পুরো দুই মিনিটের জন্য তাঁর বক্তৃতায় হাততালি জানানো হয়। এই ঘটনা ভারতের ইতিহাসে সম্মানের হিসেবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
ভারত সরকারের মুখপত্রে বলা হয়েছে-
*স্বামীজীর দর্শন, জীবন ও কর্মপদ্ধতি যা তিনি অনুসরণ করেছেন, তা ভারতীয় যুব সমাজের জন্য অনুকরণীয়।
কেন ১২ জানুয়ারি যুব দিবস?
বলতে গেলে, একজন বিখ্যাত আদর্শবান প্রাণপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দ। যুবকদের কাছে অনুপ্রেরণামূলক ব্যক্তিত্ব তিনি। তাঁর কাজ শুধুমাত্র গল্পের ছলে বর্ণনার মতো বিষয় নয়। এই মহান পুরুষ মানুষের হয়ে খুব অল্প সময়ের জন্য কাজ করতে পেরেছেন। তাঁর জীবনে নেওয়া প্রতিটি পদক্ষেপ আমরা হয়তো গ্রহণ করতে পারব না, কিন্তু তাঁর কোনও অংশকে যদি ধারণ করে জীবনযাপন করতে পারি, তাহলে এর থেকে ভালো কিছু হতে পারে না। ১৯৮৪ সালে ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নেয় ১২ জানুয়ারি তারিখটিকে যুব দিবস হিসেবে পালন করা হবে ১৯৮৫ সাল থেকে। মূলত ভারত জাতির যুবসমাজকে স্বামীজীর দর্শন ও শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। লক্ষ্য, তাঁর দেখানো পথে যাতে যুবক-যুবতীরা এগোতে পারে।
এমনকি গান্ধীজি যুবসমাজে স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও শিক্ষা সমূহের গুরুত্বের কথা বলে এসেছেন। তাঁর শিক্ষা সমূহ যুব শক্তিকে সত্যের পথে এগোতে সঠিক দিশা দেখায়। এদিন সমগ্র ভারত জুড়ে যুব বয়সীরা তাঁদের আত্মিক মূল্যবোধের উন্মেষ ঘটানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে। শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন খেলাধুলা হয়, সভা-সমিতিতে বিবেকানন্দের শিক্ষা দ্বারা যুবশক্তিকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। অন্যদিকে রামকৃষ্ণ মঠে যুবসমাজের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। পাশাপাশি যুব দিবস উপলক্ষে উত্তরপ্রদেশের ভাতৃত্ব মিশন দু’দিন ব্যাপী বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। যাতে বিভিন্ন বয়সীরা নানারকম কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়। এছাড়া অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে দিবসটিকে উদযাপন করে থাকে।