সে ছবির ট্রেলার যখন প্রকাশিত হয়েছিল, তখন থেকেই মুগ্ধ হয়েছেন দর্শকেরা। তার পরে একে একে প্রকাশ পাওয়া গান জায়গা করে নিয়েছে অনেকের প্লে-লিস্টে। সোশ্যাল মিডিয়ার উন্মাদনা ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছে, ছবিটি দেখার জন্য অপেক্ষা করে আছেন বহু দর্শক। অথচ সেই ছবি, ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ রিলিজ় হওয়ার জন্য সিনেমাহলই পেল না কলকাতায়। আগামী কাল, ২০ তারিখ রিলিজ় হওয়ার কথা ছিল সিনেমাটি। শেষমেশ, ‘শর্তসাপেক্ষে’ পিছিয়ে দিতে হল ছবি মুক্তির তারিখ।
শর্ত এটাই, ২৭ তারিখ রিলিজ় করলে কলকাতা শহরের বড় সিনেমা হলে জায়গা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু প্রথম চার দিনের মধ্যে যদি প্রতিটা শো-তে যদি ৫০ শতাংশের বেশি ভিড় না হয়, তা হলে পাঁচ দিনের মধ্যেই, অর্থাৎ পুজোর সপ্তাহে ছবিটি উঠে যাবে হল থেকে। কারণ ঐ সময় একটি বিরাট হিন্দি ছবি আসছে এবং আরও বিভিন্ন বাংলা ছবি রিলিজ় আগে থেকেই ঠিক করা আছে। কলকাতা শহরের একটি মাল্টিপ্লেক্স চেনের প্রোগ্রামিং হেড এমনটাই জানিয়েছেন বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছেন রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত ছবির পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য।
শেষমেশ, আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেতে চলেছে এই ছবি।
বুধবার রাতে পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান, আসানসোল, শিলিগুড়ি, ত্রিপুরা এবং কলকাতার কাছে সোদপুর ও বারুইপুর– এ ছাড়া অন্য কোনও হলই পাওয়া যায়নি সিনেমা রিলিজ় করার জন্য। হলগুলির নামের একটি তালিকাও প্রকাশ করেন পরিচালক। সেই সঙ্গে তিনি ব্যঙ্গ করে লেখেন, রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত সিনেমা দেখার জন্য শোয়ের টিকিট না কেটে, দর্শকরা বরং আগরতলা বা কুচবিহারের টিকিট কাটুন। কারণ যে গুটি কয়েক হল পাওয়া গিয়েছে সেখানে কলকাতার কোনও হলের নাম নেই।
পরিচালক এই পোস্ট করার পরেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়া। সকলেই জানান, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের ছবি মুক্তির জন্য হল না পাওয়া– বাংলা সিনেমা জগতের লজ্জা। স্বাধীন ভাবে নির্মিত চলচ্চিত্রের তালিকায় এই সিনেমা একটি মাইলস্টোন হতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে। সেই সিনেমার এই অবস্থা দেখে অনেকেই প্রতিবাদে সোচ্চার হন টলিউডের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। বহু মানুষ প্রস্তাব রাখেন, পরিচিত হলে না হোক, ছোটখাটো যে কোনও জায়গায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে শো করার জন্য।
প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যর প্রথম ছবি ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ দেশে-বিদেশে বহু প্রশংসা কুড়িয়েছে। দ্বিতীয় এই ছবির কাজ নিয়েও উৎসাহী বহু মানুষ। তাই শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে পিছিয়েই দিতে হল ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’র মুক্তির তারিখ। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর, মহালয়া-র আগের দিন মুক্তি পাবে এই ছবি।
তবে বিশেষ কিছু ব্যানার ছাড়া অন্য নানা বাংলা সিনেমার হল না পাওয়ার বিষয়টি কলকাতা শহরে নতুন নয়। বারবার অভিযোগ উঠেছে, বড় হলগুলি জুড়ে একাধিপত্য চালাচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু প্রযোজনা সংস্থা। সে সংস্থা ছাড়া অন্য কোনও ব্যানারের বাংলা সিনেমা এলেই হলকর্তারা বিশেষ রাজি হন না, ছবি দেখাতে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ঋত্বিক চক্রবর্তী, রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, অপরাজিতার মত অভিনেতাদের নিয়ে নির্মিত এই ছবিটি ঘিরে যখন এত আগ্রহ রয়েছে, পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য যখন এর আগেও তাঁর দুর্দান্ত কাজের পরিচয় দিয়েছেন, সেখানেও এই টানাপড়েন কেন? সিনেমার নির্মাণ বা মেধা বা মানুষের আগ্রহের কি কোনও মূল্য নেই তা হলে?
প্রসঙ্গত, ২০ তারিখ অর্থাৎ আগামী কাল মুক্তি পাচ্ছে ‘গোয়েন্দা জুনিয়র’, ‘১৭ সেপ্টেম্বর’, ‘প্রস্থানম’, ‘দ্য জ়োয়া ফ্যাক্টর’, ‘র্যাম্বো: লাস্ট ব্লাড’-সহ মোট ১১টি ছবি। প্রতিটিই কম-বেশি হল পেয়েছে কলকাতায়। যার মধ্যে কয়েকটি বাংলা ছবি টাকা দিয়ে হল পেয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। সে জন্যই কি শিকে ছিঁড়ল না রাজলক্ষ্মীর কপালে?
আপাতত সে সব কোনও বিতর্কে না গিয়ে আগামী শুক্রবার, ২৭ তারিখে ছবিটি রিলিজ়ের দিকেই বেশি নজর দিয়েছেন প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য ও তাঁর টিম। ফেসবুকে একটি পোস্ট করে সকলকে পাশে থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২৭ তারিখে রিলিজ় হওয়ার পরে পর্যাপ্ত সংখ্যক দর্শক হলে না পৌঁছলে, চার দিন পরেই হল থেকে চলে যাবে ছবিটি।
দেখুন, তাঁর ফেসবুক পোস্ট।