মমতার কথা শুনে দেউচা উদ্বোধনে আসবেন না, প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করলেন বিজেপি নেতারা

বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বাংলায় নিমন্ত্রণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে মমতা জানান, বীরভূমের দেউচা পাচামি কোল ব্লকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন যাতে প্রধানমন্ত্রী করেন, সে জন্য তাঁর কাছে সময় চাওয়া হয়েছে।

কিন্তু তার পর চব্বিশ ঘন্টা না কাটতেই বিজেপি নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি নিয়ে সর্তক করলেন, তিনি যেন এই ফাঁদে না পড়েন। কারণ, আপনার নাম ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।

রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত বৃহস্পতিবার চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। সেই চিঠিতে তিনি সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সেগুলি বিবেচনা করতে বলেছেন।

সেগুলি হল:

১) জ্বালানি ক্ষেত্রে ভারতের স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে সেটা ভাল কথা। বীরভূমে যে প্রচুর কয়লা রয়েছে তা-ও ভাল ব্যাপার। কিন্তু দেউচা পাচামি প্রকল্প একেবারে শুরুর স্তরে রয়েছে। এ ব্যাপারে পরিবেশ সংক্রান্ত কোনও ছাড়পত্র এখনও মেলেনি।

২) যে খানে কয়লা ব্লক রয়েছে ওই এলাকায় প্রচুর আদিবাসী মানুষের বাস। তাঁদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে। এমনিতেই সেখানে কয়লা খননের ব্যাপারে আদিবাসীরা অনেক দিন ধরে আপত্তি জানিয়ে চলেছে।

৩) রাজ্য সরকার নিজেই স্বীকার করছে যে ওই এলাকার মানুষের জন্য পুনর্বাসন প্রকল্প তৈরির ব্যাপারে কোনও কাজই এখনও শুরু হয়নি।

৪) গত কিছু দিন ধরে বীরভূমের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ভাল নয়। সেখানে পুলিশের দাদাগিরি চলছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, বীরভূমে হিংসার ঘটনার নেপথ্যে জমি মাফিয়াদের হাত রয়েছে।

এই সব যুক্তি দিয়ে স্বপনবাবু বলেন, “এই পরিস্থিতিতে যদি আপনি কয়লা খনি উদ্বোধন করতে বাংলায় আসেন, তা হলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বার্তাই যাবে ওই প্রকল্প সব রকম ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে। আর তার পর আপনার নামকে সামনে রেখে বীরভূমে জমি মাফিয়ারা সক্রিয় হয়ে উঠবে। দুর্নীতি হবে। বেআইনি টাকার খেলা শুরু হয়ে যেতে পারে। তাতে আদিবাসীরা আরও বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে।”

রাজ্য বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, কৌশলগত ভাবেই স্বপন দাশগুপ্তকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিটি লিখিয়েছেন তাঁরা। স্বপন রাজ্যসভার সাংসদ। এবং বিজেপি-তে মোদী-অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত।

চিঠিতে স্বপন এ-ও লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন জাতীয় স্বার্থেই প্রয়োজন। কিন্তু তা স্বচ্ছতার সঙ্গেই করতে হবে।

দলীয় তরফে তৃণমূল অবশ্য এ ব্যাপারে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় দলের নেতারা বলেন, বাংলায় বিজেপি কোনও উন্নয়ন হতে দেবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে ওরা প্রশাসনিক ভাবে ব্যর্থ প্রমাণ করতে চায়। তাই বাধা দিচ্ছে সব কাজে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.