Dog and Indian Prohibited – ইউরোপিয়ান ক্লাবের বাইরের ফলকে এই লেখাই বুকে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশের (Bangladesh) চট্টগ্রামে তখন স্বাধীনতা আন্দোলনের আঁতুরঘর। মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে তৈরি হচ্ছে বাহিনী। মাস্টারদার সেই সৈন্যবাহিনীর মধ্যে উজ্জ্বলতম তাঁর ‘রানি’ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার(Pritilata Waddedar)। প্রীতিলতার দুঃসাহসিক কার্যকলাপ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা। সে ইতিহাস বাঙালি জাতির হৃদয়ে গাঁথা। কিন্তু যখন সেই স্মৃতি বিজড়িত স্থানে সশরীরে হাজির হওয়া যায়, তখন যেন গা শিউড়ে ওঠে। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে সেখানকার উন্নয়নমূলক কাজকর্ম দেখতে এসে সুযোগ মিলল চট্টগ্রামের ইতিহাস সাক্ষ্যস্থলে পা রাখার। সে অভিজ্ঞতা বটে! ব্রিটিশ বিরোধী আগুন যে আজও এই প্রজন্মের বুকেও জ্বলছে, তা টের পাওয়া গেল ইউরোপিয়ান ক্লাবের অন্দরে পা রেখে।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। নামেই পরিচয়। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রথম শহিদ কন্যা হিসেবে আমরা চিনি তাঁকে। গত শতকের তিনের দশকে পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের মূল নেত্রী সাহসী প্রীতিলতা। মাস্টারদার কাছে তিনি ছিলেন ‘রানি’। যিনি পুরুষের ছদ্মবেশে সে অর্থ সশস্ত্র সংগ্রামে নেমেছিলেন। হামলা চালিয়েছিলেন ব্রিটিশদের অতি পছন্দের ইউরোপিয়ান ক্লাবে। চট্টগ্রামে (Chittagong) এসে এই ক্লাবের পা রাখামাত্রই যেন সেই দিনটা জীবন্ত হয়ে ওঠে। ইতিহাসের ঘটনাগুলো যেন ঘটতে থাকে চোখের সামনে।
দিনটা ছিল শনিবার। সন্ধেবেলা ইউরোপিয়ান ক্লাবে (Europian Club) প্রায় জনা চল্লিশেক মানুষ। ক্লাবের বাইরে লেখা ‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’! পানোল্লাসে মত্ত ইংরেজদের কানের ভিতরে বেজে উঠেছিল গুলি-বোমার তীব্র শব্দ। বন্দুকের গুলিতে নিভে যায় ক্লাবের সমস্ত আলো। ঘটনাস্থলে থাকা ব্রিটিশ অফিসারদের কাছে থাকা বন্দুকও মুহূর্তের মধ্যে গর্জে ওঠে। শুরু হয় গুলি-পালটা গুলির লড়াই। আহত হন ইংরেজদের উপর আঘাত হানা সংগ্রামী নারী প্রীতিলতা। যদিও তাঁর ছদ্মবেশ ছিল পুরুষের। গুলির মাঝে পড়ে পালিয়ে যান তাঁর সতীর্থরা। রক্তাক্ত রণাঙ্গনে প্রীতিলতা তখন একাকী। ব্রিটিশদের হাতে ধরা দেবেন না, এই ছিল মরণপণ। রক্তাক্ত প্রীতিলতা নিজের গলায় ঢেলে দেন পটাশিয়াম সায়ানাইড (KCN)। মুহূর্তে থমকে যায় শরীরের রক্তপ্রবাহ। ঘটনার পরদিন ক্লাব থেকে ১০০ গজ দূর থেকে উদ্ধার হয়েছিল তাঁর মৃতদেহ।
এক ঝটকায় সম্বিৎ ফিরল। এটা তো আজকের চট্টগ্রাম, স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু চোখের সামনে এখনও জ্বলজ্বল করছে সেই ফলক, যেখানে ইতিহসের সংক্ষিপ্তসার লিখতে গিয়ে অবধারিতভাবে চলে এসেছে – Dog and Indian Prohibited’এর উল্লেখ। ইউরোপিয়ান ক্লাবের অন্দরের ইট-পাথরে আজও প্রতিধ্বনিত হয় গুলি-বোমার শব্দ, এখনও পুরুষবেশী প্রীতিলতার আক্রমণ ফিরে ফিরে আসে। ইতিহাস ভেসে ওঠে চোখের সামনে।