ভিশন ২০৪৭, ভারতীয় ফুটবলের উন্নতিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা AIFF-এর, রয়েছে বহু চমক

 চার বছর পর, কিংবা আট বছর পর বিশ্বকাপ খেলার ঘোষণা নয়। দেশের স্বাধীনতার শতবর্ষে ভারতীয় ফুটবলের ২৪ বছরের ‘ভিশন’ ঘোষণা করল ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন (AIFF)। তবে নতুন কমিটির প্রথম চার বছরের জন্য শুরুতে একটি স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনাও থাকছে। যেখানে চার বছরের মধ্যে ভারতীয় ফুটবলের মূল লক্ষ্য হল, পুরুষ এবং মহিলা ফুটবলে ভারতীয় দলকে থাকতে হবে এশিয়ার প্রথম দশের মধ্যে। এছাড়া ঘরোয়া ফুটবলে এই চার বছরের মধ্যে ১৪টি দলকে নিয়ে প্রথম এবং দ্বিতীয় ডিভিশন লিগও অনুষ্ঠিত হবে।

কোন পথে চলবে ভারতীয় ফুটবল। কল্যাণ চৌবের (Kalyan Chaubey) নেতৃত্বে নতুন কমিটি ফেডারেশনে আসার পর থেকে সেক্রেটারি জেনারেল সাজি প্রভাকরণের সঙ্গে আলোচনা করে একটা লক্ষ্য মাত্রা তৈরির কাজ অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। এদিন দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবে এবং সেক্রেটারি জেনারেল সাজি প্রভাকরণ ‘ভিশন ২০৪৭’ (Vision 2047) এর মধ্য দিয়ে ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যত রূপরেখা তুলে ধরেন। বলা হয়েছে, ২০৪৭’এ ভারতের স্বাধীনতার শতবর্ষে ভারতীয় ফুটবল (Indian Football) হবে এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী ফুটবল দেশ।

এদিন, সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই কল্যাণ চৌবে বলেন, ‘আগের ফেডারেশন কর্তারা যা করেননি, দেশের রূপরেখা ঠিক করতে গিয়ে আমরা সেটাই করেছি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেখানে যেখানে ফুটবল হয়, সেখানে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলেছি। বেশ কিছু বছর ধরে ভারতীয় ফুটবল গোয়া, কেরালা, বাংলার মধ্যে আটকে রয়েছে। আমরা চাইছি, সারা ভারতে ছড়িয়ে দিতে। শেষ কয়েক বছরের জাতীয় দলে দেখা যাবে, নির্দিষ্ট কিছু ফুটবলারের মধ্যে থেকেই জাতীয় দল (Indian Football Team) নির্বাচিত হচ্ছে। অথচ দেশজুড়ে বহু ফুটবল প্রতিভা রয়েছে। তাঁদের ফুটবলের মূলস্রোতে ফেরাতে হবে। ১৯৫০-৬০-এ ভারতীয় ফুটবলের সোনালি দিনগুলি ফের ফেরাতে হবে।’ আর এই সোনালি দিন ফেরানোর পরিকল্পনা করতে গিয়ে যে ভিশন ২০৪৭ তৈরি হয়েছে, তার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাজি প্রভাকরণ বলেন, ‘২০৪৭ এর মধ্যে ফেডারেশন অন্তত এই ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে চায় যে, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মিলে প্রতিবছর ফুটবলাররা যাতে কম করে ৫৫টি ম্যাচ খেলতে পারবে।’ শুধুই দেশের স্বাধীনতার শতবর্ষ নয়। ২০৩৬-এ ফেডারেশনের শতবর্ষেও কিছু লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ফেডারেশন। সাজি প্রভাকরণ বলেন, ‘২০৩৬-এ এশিয়ার প্রথম সাতটি দেশের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী ফুটবল দেশে হয়ে উঠতেই হবে। একই সঙ্গে সেই সময় বিশ্বকাপে (FIFA World Cup) যোগ্যতা অর্জন করার জন্য ভারতীয় ফুটবল অন্যতম একটি দল হয়ে উঠবে।’ আর এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে গিয়ে গ্রাসরুট ফুটবলের সঙ্গে সঙ্গে মহিলা ফুটবলের উপরেও ভীষণভাবে ভাবে জোর দিতে চাইছে ফেডারেশন। একই সঙ্গে বাড়াতে চাইছে দেশজুড়ে পেশাদার ক্লাবের সংখ্যা। জোর দেওযা হবে ফিফার (FIFA) গাইডলাইন মেনে প্রচুর আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম। আপাতত ফেডারেশনের লক্ষ্য হল, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ১০০টি গ্রাম থেকে ২০২৬-এর মধ্যে সাড়ে তিন কোটি বাচ্চাকে গ্রাসরুট পোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত করা। একই সঙ্গে স্কুলের মাধ্যমে আড়াই কোটি বাচ্চাকে ফুটবলের পাঠ দেওয়া।

২০২৬-এর মধ্যে বিভিন্ন লিগের পরিকাঠামো ঘোষণার পাশাপাশি ১০ দল নিয়ে মহিলা লিগের কথাও বলা হয়েছে। এরকম বহু লক্ষ্য মাত্রার কথা বলা হয়েছে ফেডারেশন থেকে প্রকাশিত ৯৪ পাতার ‘ভিশন ২৪৭’ প্রকল্পে। ফেডারেশন সভাপতি এবং সচিব এই প্রকল্প ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় ফুটবল সমর্থকরা আশান্বিত হয়ে উঠেছেন, ভারতীয় ফুটবল ঘিরে ভাল কিছু হওয়ার আশায়।

‘ভিশন ২০৪৭’ যা যা বলা হয়েছে:

‘ভিশন ২০৪৭’-এর প্রথম পর্ব চলবে ২০২৬ পর্যন্ত
প্রথম পর্বে গ্রাসরুট প্রোগ্রামে বাড়তি জোর
’২৬ সালের মধ্যে সেন্টার অফ এক্সেলেন্স চালু
দুই বিভাগেই অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন
২০৩৬ সালের মধ্যে এশিয়ার সেরা ৭-এ আসবে ভারত
১৪টি করে দল নিয়ে আইএসএল ও আই লিগ
৫০ হাজার কোচ, সাড়ে ৪ হাজারের এএফসি ‘সি’ লাইসেন্স
প্রতি জেলায় ৫০টি ভাল ফুটবল মাঠ তৈরি
৩০টি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম এবং ১২টি স্মার্ট স্টেডিয়াম তৈরি
প্রতি রাজ্যে সেন্টার অফ এক্সেলেন্স চালু
প্রতি রাজ্যে ৫০ ক্লাবের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা
বিদেশের মতো ভারতেও ফুটবল পার্ক তৈরি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.