আর হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত নয়! বলিউডের সিনেমা, সিরিয়াল, নাটক বইয়ের উপর নজরদারি চালাবে ধর্মীয় সেন্সর বোর্ড

হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে এমন বিষয় যাতে সিনেমা, সিরিয়াল, নাটক বা বইতে না থাকে তার জন্য ধর্ম সেন্সর বোর্ড তৈরি হচ্ছে। ধর্মগুরু শংকরাচার্য স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই ধর্ম সেন্সর বোর্ড গঠনের কথা ঘোষণা করেছেন। তার কথায় হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগের ওপর আঘাত দিতে পারে এমন সিনেমা, সিরিয়াল, নাটক, বই সবকিছুর ওপর নজর রাখার জন্য একটি বেসরকারি সেন্সর বোর্ড তারা তৈরি করছেন।

ধর্ম গুরুর অভিযোগ, যখন কোনো সিনেমায় কোনো ধর্মকে খাটো করে দেখাতে হয় সেটা হিন্দু ধর্মকেই দেখানো হয়। আর অন্যান্য ধর্মগুলিকে ভালোভাবে চিত্রায়িত করা হয়। বলিউডের সিনেমা, টিভি সিরিয়াল, ওটিটি প্লাটফর্ম সব জায়গাতেই হিন্দু দেব দেবীর লাগাতার অপমান করা হচ্ছে। এটা আটকাতে ধর্ম সেন্সর বোর্ড তৈরি করা হচ্ছে। ধর্মগুরু জানিয়েছেন, এই সেন্সর বোর্ডে ১১ জন সদস্য থাকবেন। যাদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, ধর্মীয় গুরু, মিডিয়ার প্রতিনিধি, ইতিহাসবিদ এবং ফিল্ম জগতের মানুষও থাকবেন।

এই সেন্সর বোর্ড সিনেমা, সিরিয়াল, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম গুলিতে ধর্মীয় চরিত্র, সংলাপ, রঙ, তিলক আর স্ক্রিপ্ট পরীক্ষা করে দেখবে। যদি কোনো জায়গায় দেখা যায় হিন্দু ধর্ম, বেদ, পুরাণের বর্ণনার অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে, তাহলে এই সেন্সের বোর্ড প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। চলচ্চিত্র বা সিরিয়াল নির্মাতাদের কাছে ধর্ম গুরু আবেদন করেছেন, তারা যে কোনো ছবি বা সিরিয়াল তৈরি করার আগেই যেন এই বোর্ডের সাথে পরামর্শ করেন, যাতে পরবর্তী সময় কোনো সমস্যায় না পড়তে হয় তাদের।

এই বোর্ডটির পরামর্শদাতা হিসেবে রয়েছেন বলিউডের চিত্র পরিচালক তরুণ রাঠি। তাঁর দাবি, এই সেন্সর বোর্ড চলচ্চিত্র শিল্পকে সাহায্য করবে, কারণ কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করে সিনেমা বানানোর পর যদি দেখা যায় হিন্দু সমাজ সেটা বয়কট করছে তাহলে সেটা প্রযোজকেরই ক্ষতি। এই ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলা হচ্ছে।

কিন্তু সরকার নিয়ন্ত্রিত ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ড যেখানে আছে সেখানে এই ধর্মীয় বোর্ড কতটা যুক্তিযুক্ত? সে প্রশ্নের উত্তরে রাঠি বলেছেন, ভারতীয় সংবিধানে অধিকার দেওয়া আছে, এমন সংস্থা তৈরি করা যেতে পারে, যারা তাদের নিজস্ব ধর্মীয় বিষয়গুলি পরিচালনা করবে। ধর্ম সেন্সর বোর্ড ঠিক এটাই করতে চাইছে। তার অভিযোগ, সরকারি সেন্সর বোর্ড থাকা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে এমন অনেক সিন বা সংলাপ ছাড়পত্র পাচ্ছে যেগুলি হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেকে আঘাত করছে। তার কথায়, “এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল কারণ সবকিছু চুপচাপ মেনে নেওয়া হচ্ছিল কিন্তু আর চুপ করে থাকবে না হিন্দুরা। সংবিধানের অধিকার অনুযায়ী আমাদের ধর্মের সঠিক চিত্রায়ন হোক সেটাই আমরা চাই।”

শুধু বলিউডের সিনেমা সিরিয়াল নয় আঞ্চলিক ভাষার সিনেমা, সিরিয়াল, নাটক, বইগুলির ক্ষেত্রেও এই নজরদারি চালাবে ধর্মীয় সেন্সর বোর্ড।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্প্রতি শাহরুখ দীপিকা অভিনীত পাঠান সিনেমার এক দৃশ্য নিয়ে বিতর্ক চলছে।সেখানে দীপিকা পাড়ুকনের গেরুয়া রঙের বিকিনি পরে গান হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভারতের সেন্সর বোর্ড ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছে পাঠান সিনেমার বেশ কিছু দৃশ্য কেটে বাদ দেওয়ার জন্য। পাঠান ছাড়াও আদি পুরুষ, কালি,পদ্মাবৎ, ব্রহ্মাস্ত্র লক্ষ্মীর মত একাধিক সিনেমা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই সিনেমাগুলির বিরুদ্ধে হিন্দুদের
ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগ উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.