‘বাম-মুক্ত হবে ত্রিপুরা বিধানসভা’, বিজেপির রথযাত্রার উদ্বোধনে ঘোষণা করলেন অমিত শাহ

চলতি বছরের বিধানসভা ভোটে বাম মুক্ত হবে ত্রিপুরা বিধানসভা। বৃহস্পতিবার উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগরে বিজেপির ‘রথযাত্রা’ (যার পোশাকি নাম, ‘জন বিশ্বাস যাত্রা’)-র উদ্বোধন করতে গিয়ে একথা বললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, “২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটেই ত্রিপুরা বিধানসভা পুরোপুরি বাম মুক্ত হবে।’’ সেই সঙ্গে তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে আগামী বিধানসভা ভোটে বিজেপির স্লোগান— “উন্নত ত্রিপুরা, শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা, সমৃদ্ধ ত্রিপুরা”!

ত্রিপুরার প্রাক্তন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যসভার সাংসদ বিপ্লব দেবের গোমাতি জেলার বাড়িতে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের হামলার অভিযোগ ঘিরে মঙ্গলবার বিকেল থেকে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে রাজ্যে। সেই আবহে শাহের এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রায় এক দশক ধরে ‘কংগ্রেস মুক্ত ভারত’ গড়ার কথা বলে চলেছেন। সাম্প্রতিক কালে এই প্রথম বিজেপির শীর্ষ স্তরের কোনও নেতার মুখ থেকে অন্য কোনও রাজনৈতিক শক্তিকে নির্মূল করার কথা শোনা গেল।

ধর্মনগরের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম থেকেও ‘জন বিশ্বাস যাত্রা’র সূচনা করেন শাহ। ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রের মোট ১,০০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে এই রথ। বিধানসভা ভোটের বাকি আর মাস দু’য়েক। তার আগে ত্রিপুরায় দল ছাড়ছেন একের পর এক বিজেপি বিধায়ক ও নেতা। এই পরিস্থিতিতে সে রাজ্যে পদ্মের হাল ধরতে শাহ সক্রিয় হয়েছেন বলে দলের একটি সূত্রের খবর। ওই সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের দাবি, জঙ্গি গোষ্ঠী এনএলএফটি-কে মূল স্রোতে এনে ত্রিপুরায় শান্তি ফিরিয়েছে বিজেপি।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে জনজাতি সম্প্রদায়ের সংগঠন আইপিএফটি-র সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপি ত্রিপুরায় ক্ষমতায় এসেছিল। আড়াই দশকের বাম শাসনের অবসান হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাঙালি সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বিপ্লব দেব। কিন্তু গোড়া থেকেই সরকারের অন্দরে টানাপড়েন শুরু হয়। পাশাপাশি, বিপ্লবের বিরুদ্ধে একাধিক বার আলটপকা মন্তব্যের অভিযোগ ওঠে।

২০২১ থেকে বিজেপি পরিষদীয় দলে ভাঙনও দেখা দেয়। পরিস্থিতি সামলাতে চলতি বছরের মে মাসে বিপ্লবকে সরিয়ে মানিক সাহাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি বদলায়নি। এ পর্যন্ত ত্রিপুরায় বিজেপির ৬ জন বিধায়ক ইস্তফা দিয়ে দল ছেড়েছেন। তাঁদের মধ্যে সুদীপ রায় বর্মন, আশিস সাহা, দিবাচন্দ্র রাঙ্খল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। বুর্বমোহন ত্রিপুরা যোগ দিয়েছেন বিরোধী জনজাতি দল তিপ্রা মথায়। আশিস দাস তৃণমূলে যোগ দিলেও পরবর্তী সময়ে জোড়াফুল শিবির ত্যাগের কথা ঘোষণা করেন। এই পরিস্থিতিতে উত্তর-পূর্বের বাঙালি অধ্য়ুষিত রাজ্যে শাহ কতটা সফল হন, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে ভোট পণ্ডিতদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.