বর্ষবরণের রাতে ২০ বছরের তরুণী অঞ্জলি সিংহের দেহ গাড়ির তলায় আটকে ১৩ কিলোমিটার টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা এখনও ভয় ধরাচ্ছে দিল্লিবাসীকে। তদন্তে নয়া তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। ৯টি পুলিশ কন্ট্রোল ভ্যান ওই গাড়িটিকে ধরার জন্য অনুসরণ করেও ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে ৫টি পুলিশের গাড়ি রাস্তাতেই ছিল। প্রত্যক্ষদর্শী দীপক দাহিয়া গাড়ির তলায় একটি দেহ আটকে থাকতে দেখে পুলিশকে ফোন করেন। রাত ২টো ১৮ মিনিটে পুলিশকে প্রথম ফোন করা হয়। প্রথম ফোনের ঠিক দু’মিনিট পর আবার পুলিশের কাছে ফোন যায়। এক প্রত্যক্ষদর্শী ৩টে ২৪ মিনিট নাগাদ পুলিশকে পর পর দু’বার ফোন করেন। পুলিশকে ফোন করে তিনি জানান যে, রাস্তায় একটি চলন্ত গাড়ির তলায় এক মহিলার দেহ আটকে থাকতে দেখেছেন তিনি।
তার প্রায় ১ ঘণ্টা পর আরও এক প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশকে দু’বার ফোন করে একই কথা বলেন। খবর পাওয়ার পর ৯টি পুলিশের গাড়ি দিল্লির সড়কে নেমে গাড়িটি অনুসরণ করার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। কুয়াশা বেশি থাকার কারণে গাড়িটি খুঁজে পায়নি বলে দাবি পুলিশের। সব মিলিয়ে আপৎকালীন নম্বরে মোট ৬ বার এবং পুলিশের অন্য নম্বরে মোট ২০ বার ফোন করা হয়েছিল বলে সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে।
অঞ্জলির মৃত্যুর ৩ দিন পর তাঁর বান্ধবী নিধি সংবাদমাধ্যমে বলেন, “গাড়িটা ধাক্কা মারতেই আমি এক দিকে ছিটকে পড়ে যাই। আর গাড়ির সামনে পড়ে যায় অঞ্জলি। ও গাড়ির নীচে আটকে গিয়েছিল। আরোহীরা বুঝতে পেরেছিল যে, গাড়ির নীচে কেউ আটকে রয়েছে। ওরা তার পরেও ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার বন্ধুর উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয়। অঞ্জলি চিৎকার করছিল। এই দৃশ্য দেখে আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে ওখান থেকে চলে গিয়েছিলাম। ভয় পেয়ে বাড়িতে গিয়ে কাউকে কিছু বলিনি। শুধু কাঁদছিলাম।”
নিধির দাবি, গাড়ির চাকার নীচে এক জন চাপা পড়েছে বুঝেও গাড়িটিকে ঘাতকেরা এক বার সামনে নিয়ে যান, এক বার পিছনের দিকে। অঞ্জলি গাড়ির নীচে উপুড় হয়ে পড়েছিলেন। ওঁর পা আটকে গিয়েছিল। বার কয়েক গাড়িটিকে সামনে-পিছনে করার সময় চাকার তলায় আটকে থাকা অঞ্জলি যন্ত্রণায় চিৎকার করছিলেন। তা সত্ত্বেও গাড়িটি থামাননি বলে জানান নিধি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অঞ্জলির মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মৌলানা আজাদ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসকদের একটি বোর্ড অঞ্জলির দেহের ময়নাতদন্ত করার পর মঙ্গলবার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পুলিশের কাছে জমা করেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে যে, অঞ্জলির মাথার ঘিলু ছিল না। মাথার খুলিগহ্বরও খোলা অবস্থায় ছিল। শিরদাঁড়ার বেশ কয়েকটি জায়গা ভেঙে গিয়েছিল বলে দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর। অঞ্জলির দেহের পাঁজরগুলি বুকের পিছন দিক দিয়ে উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিল।
আট পাতার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, অঞ্জলির সারা দেহ ধুলোমাটিতে মাখা ছিল।কয়েক কিলোমিটার চালানোর ফলে অঞ্জলির দেহে পোড়া দাগ লক্ষ করা গিয়েছে। এই ধরনের পোড়া দাগকে ‘ব্রাশ বার্ন’ বলা হয়। গাড়িটি চলতে থাকায় রাস্তার সঙ্গে অঞ্জলির দেহের চামড়ায় ঘষা লেগে এই পোড়া দাগ তৈরি হয়েছে। সারা দেহে ৪০টি ক্ষত পাওয়া গিয়েছে। তবে তাঁকে কোনও ভাবে যৌন হেনস্থা করা হয়নি বলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হতে পরীক্ষার জন্য তরুণীর লালারসের নমুনা এবং জিন্সের ছেঁড়া অংশ সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে বলে চিকিৎসকদের বোর্ডের তরফে জানানো হয়।