রোহিত শর্মা চোট পাওয়ায় ভারতীয় দলে নেওয়া হয়েছিল অভিমন্যু ঈশ্বরনকে। বাংলার ওপেনার দলে সুযোগ পেলেও প্রথম একাদশে জায়গা পাননি। তিনি যে রকম ছন্দে রয়েছেন তাতে ২৭ বছরের অভিমন্যু অবশ্যই সুযোগ পাওয়ার দাবি রাখেন। পাবেন কি?
ভারতীয় টেস্ট দলে ওপেনার হিসাবে রয়েছেন রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল এবং শুভমন গিল। প্রথম একাদশে সুযোগ পেতে হলে এই তিন জনের অন্তত দু’জনকে বাদ যেতে হবে। রাহুলের ছন্দ নিয়ে খুশি নয় দল। ইতিমধ্যেই সাদা বলের সিরিজ়ে সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে তাঁকে। ছন্দে ফিরতে না পারলে দল থেকেও বাদ পড়তে পারেন। রোহিতও ছন্দে নেই। রান পাচ্ছেন না। যদিও দলের অধিনায়ককে এখনই বাদ দেওয়া হবে বলে মনে হয় না। তাই ছন্দে থাকা অভিমন্যুকে অপেক্ষা করতে হতে পারে।
টানা পাঁচটি ম্যাচে শতরান করলেন অভিমন্যু। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে টানা চারটি শতরান তাঁর। লিস্ট এ-তে করেছিলেন আরেকটি। বিজয় হজারে ট্রফির শেষ ম্যাচে শতরান করেছিলেন অভিমন্যু (১২২)। রাঁচীতে সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে সেই শতরান দিয়ে শুরু। এর পর বাংলাদেশে গিয়ে ভারত ‘এ’ দলের হয়ে পর পর দু’টি ম্যাচে শতরান (১৪১ এবং ১৫৭) করেন তিনি। দেশে ফিরে বাংলার হয়ে রঞ্জি দলে যোগ দেন। নাগাল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৭০ রানের ইনিংস খেলেন অভিমন্যু। এ বার নিজের মাঠে দেহরাদূনে উত্তরাখণ্ডের বিরুদ্ধেও শতরান। অপরাজিত রয়েছেন ১৪১ রানে।
রঞ্জিতে চলতি ম্যাচ বাদ দিয়ে এখনও পর্যন্ত ৭৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন অভিমন্যু। উত্তরাখণ্ডে জন্ম হলেও তিনি খেলেন বাংলার হয়ে। বাংলার অধিনায়কও তিনি। এ বারের রঞ্জিতে যদিও মনোজ তিওয়ারি নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ৭৯টি ম্যাচে অভিমন্যুর সংগ্রহ ৫৭৪৬ রান। ১৯টি শতরানও হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবারেরটি ধরলে ২০টি। লিস্ট-এ ক্রিকেটে ৭৮টি ম্যাচে ৩৩৭৬ রান করেছেন। রয়েছে সাতটি শতরান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও শতরান করেছেন একটি। আইপিএলে বরাবরই ব্রাত্য অভিমন্যু। নিলামে নাম দিলেও এখনও পর্যন্ত কোনও দলই কেনেনি তাঁকে। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত রান করে চলেছেন।
নির্বাচকদের নজরে যে তিনি রয়েছেন তা বোঝাই যাচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সুযোগ পাওয়ায়। ভারতের পরের টেস্ট সিরিজ় ঘরের মাঠে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ় নির্ধারণ করবে ভারত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলতে পারবে কি না। এমন একটি সিরিজ়ে রোহিত থাকবেনই। রাহুল এবং শুভমনকেও রাখা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জায়গা পাওয়া মুশকিল অভিমন্যুর। তবে আগামী দিনে অভিমন্যু যদি এই ছন্দ ধরে রাখতে পারেন তা হলে সুযোগ যে একেবারে আসবে না তা বলা যায় না।
অভিমন্যুকে দীর্ঘ দিন ধরেই দেখছেন সৌরাশিস লাহিড়ী। বাংলা দলের সহকারী কোচ তিনি। সৌরাশিস বলেন, “দারুণ ছন্দে রয়েছে অভি (দলে এই নামেই পরিচিত অভিমন্যু)। গত মরসুমেও রানের মধ্যে ছিল। এ বার টানা পাঁচটি শতরান। আশা করছি আগামী দিনেও এমন ছন্দ ধরে রাখতে পারবে ও।” ২০১৩ সালে বাংলার হয়ে প্রথম শ্রেণির দলে অভিষেকের সময় অধিনায়ক ছিলেন লক্ষ্মীরতন শুক্ল। এখন তিনি বাংলার কোচ। মরসুম শুরুর আগে ইডেনে গ্যালারির নীচের অংশে কংক্রিটের মেঝেতে অভিমন্যুকে ভেজা ক্যাম্বিস বলে থ্রো ডাউন দিচ্ছিলেন লক্ষ্মী। কখনও আবার প্লাস্টিক বলে। সেই সময় লক্ষ্মী বলেছিলেন, “যে যে ক্রিকেটারের কিছু কিছু জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে সেইগুলো মেরামত করার জন্যই এমন অনুশীলন।” সেই সব অনুশীলন যে অভিমন্যুর কাজ দিয়েছে তা বলাই যায়। অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন তিনি।
অনেকের মনে আশঙ্কা এই মুহূর্তে ভারতীয় দলে সুযোগ না পেলে ছন্দ চলে যেতে পারে অভিমন্যুর। তার আগে ভারতীয় দলের দরজা তিনি খুলতে পারেন কি না সেই দিকেই নজর থাকবে বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের।