বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধা অর্থাত্ এ ক্ষেত্রে বাঁকা পথে নিযুক্ত ‘গ্রুপ ডি’ বা চতুর্থ শ্রেণির স্কুলকর্মীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ বন্ধ করার দায়িত্ব চেপেছে প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাঁধে। কিন্তু স্কুলের শুরু, শেষ, টিফিন আর পিরিয়ডের ঘণ্টা বাজাবে কে? এর সুরাহা হচ্ছে না। রাজ্যের অনেক স্কুলে এমনিতেই চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নেই।
যে-সব স্কুলে আছে, সেখানে ১৬৯৪ জনের গ্রুপ ডি পদে অবৈধ নিয়োগ হয়েছে বলে জানিয়েছে আদালত। ওই তালিকাভুক্ত সকলের চাকরি চলে গেলে স্কুলগুলিতে ঘণ্টা বাজাবে কে? কর্মী-সঙ্কটে রাজ্যের বহু স্কুলের পরিকাঠামোই ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্কুলে প্রধানত পিয়নের কাজ করেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা। ক্লাসে ক্লাসে নোটিস দিয়ে আসা, প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নির্দেশ পালন করা, শ্রেণিকক্ষের দরজা-জানলা খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে ঘণ্টা বাজানোটা ওই কর্মীদের অন্যতম প্রধান কাজ। অনেক স্কুলের শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, কিছু স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী না-থাকায় চুক্তির ভিত্তিতে অল্প টাকায় কর্মী রাখতে হচ্ছে।
শিক্ষা দফতর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ডিআই বা জেলা স্কুল পরিদর্শকদের জানিয়েছে, ১৬৯৪ জনের মধ্যে গ্রুপ ডি পদে যত অবৈধ চাকরি প্রাপক আছেন, তাঁদের নোটিস দিতে হবে। ঘুরপথে নিযুক্ত চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের নাম, লিঙ্গ পরিচয়, স্কুলের নাম-সহ তালিকা প্রকাশ করেছে শিক্ষা দফতর। নোটিসে জানানো হয়েছে, ওই সব কর্মীর নিয়োগ অবৈধ। পরবর্তী ব্যবস্থার কথা পরের শুনানিতে জানানো হবে।
তারকেশ্বর মহাবিদ্যালয়ের (উচ্চ মাধ্যমিক) প্রধান শিক্ষক সত্যজিত্ বসু জানান, তাঁর স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মীর নাম ওই তালিকায় আছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্কুলে ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি। স্কুল খোলার পরে জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছ থেকে নোটিস এলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ ওই প্রধান শিক্ষক জানান, অবৈধ নিয়োগের ফলে তাঁর স্কুলের একমাত্র চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর যদি চাকরি চলে যায়, তা হলে কম টাকায় চুক্তিভিত্তিক গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগ করতেই হবে। সত্যজিত্ বলেন, ‘এখন যিনি গ্রুপ ডি কর্মী, তিনি কামাই করলে আমাকেই স্কুলের দরজা বন্ধ বা ঘণ্টা বাজানোর কাজ করতে হবে। দরকারে করবও। কিন্তু দিনের পর দিন করতে হলে মুশকিল।’ ওই স্কুলপ্রধান জানান, তাঁর স্কুলের গ্রুপ ডি কর্মী খুবই কাজের। প্রতিটি কাজ হাসিমুখে করেন। ”কিন্তু ওঁর নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি থাকলে অবশ্যই সমর্থন করার প্রশ্ন নেই,’ বললেন সত্যজিত্। কলকাতার জগদ্বন্ধু ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক অভিজিত্ ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমাদের তিন জন গ্রুপ ডি কর্মীর মধ্যে দু’জনের নাম ওই ১৬৯৪ জনের তালিকায় আছে। বিষয়টি বিচারাধীন, তাই মন্তব্য করব না। তবে দু’জন কর্মী চলে গেলে স্কুল চালাতে কিছু অসুবিধে তো হবেই।’
এক ধাক্কায় ১৬৯৪ জনের চাকরি চলে গেলে স্কুলগুলির পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষা দফতর কোনও পরিকল্পনা করেছে কি? এক শিক্ষাকর্তা বলেন, ‘আদালত পরে কী নির্দেশ দেয়, দেখি। তবে দুর্নীতির সঙ্গে আপসের প্রশ্ন নেই।’ ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, ‘ওই ১৬৯৪টি পদ ফাঁকা হলে গ্রুপ ডি কর্মীর প্রতীক্ষা-তালিকায় থাকা চাকরিপ্রার্থীদের অবিলম্বে নিয়োগ করতে হবে। নইলে স্কুলগুলির কাজকর্ম ব্যাহত হতে পারে।’