[ইংরেজি নববর্ষের উন্মাদনায় বাঙালি ভুলে গেছে পয়লা জানুয়ারি ছিল বিজ্ঞান সাধক আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্মদিন। তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বোসন-গল্পের ঝাঁপি খুললেন ড. কল্যাণ চক্রবর্তী। ]
বোসন গল্প কেমন হবে তার একটি নমুনা দিয়েই আঙটপাট শুরু করি। মাত্র তিন/চারটি শব্দ দিয়ে গল্পের আভাস দিতে হবে।
তুমি । তুমিই ! আমি ?
কল্যাণ চক্রবর্তী।
গল্পে কি কি থাকে? ঘটনা প্রবাহ এবং পরিণতি। যেহেতু মাত্র ৩-৪টি শব্দের মধ্যে বোসন – গল্পটি লিখতে হবে এবং খুব ছোট্ট করে ক্লাইমেক্সও আনতে হবে, কাজেই প্রতিটি শব্দই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরণের গল্পে যতি চিহ্নর ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং সুচারু হওয়া দরকার। আর দেখতে হবে যেন রয়ে যায় : ‘শেষ হইয়াও না হইল শেষ’ অথবা ‘নিঃশেষে শেষ'(Happy Ending)
উদাহরণের গল্পের দিকে একবার তাকাই –
তুমি। তুমিই !!! আমি ?
এখানে “তুমি।” = A symbolic description of one character. আমার ‘তুমি’র পরিচয়, তার স্বরূপ, সেই ‘তুমি’র সাথে আমার সম্পর্ক। আমাদের অনেক না বলা কথা, ঘটনা, সবই ইঙ্গিতে, নিঃশব্দে, রূপক-সংকেতে পরিবেশিত হল একটিমাত্র কথায়।
” তুমিই !!! “= Your last activity towards me. এমনটি তুমি কি করে করতে পারলে? তারই উপস্থাপনা হল।
“আমি?” = My fate. আমি তবে এখন তোমার কে? কোথায় যাব আমি? তোমার নতুন ‘ তুমি ‘ র ইঙ্গিত রইলো তৃতীয় শব্দে।
হ্যাঁ, এইভাবেই লিখে ফেলুন মাত্র ৪ টি শব্দের মধ্যে।
বোসন গল্প। বোসন গল্প। বোসন গল্প।
এবার জানাই বোসন গল্পের সংজ্ঞা, স্বরূপ, বৈশিষ্ট্যের কথা। কেন বোসন গল্পের অবতারণা? বোসন- গল্পের সন্ধানে
(১)
বাঙালী কণা-পদার্থবিদ ড. সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নাম থেকেই ‘বোসন’ কণার নামকরণ। কোয়ান্টাম পরিসংখ্যানের ভিত্তি রচনা করেছিলেন তিনি যা আইনস্টাইনের দ্বারা সারা বিশ্বে মান্যতা পেয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সময়ে তাঁর লালিত তত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছিল জার্মানীর ‘ Zeitschrift fur Physik’ পত্রিকায়। প্ল্যাঙ্ক-বিকিরণ তত্ত্বের ব্যাখ্যায় তিনি জন্ম দিয়েছিলেন নব উদ্ভাবিত সংখ্যায়ন — Bose-Einstein Statistics। যে সমস্ত কণিকা এই Statistics মেনে চলে তারাই হল ‘বোসন’।
(২)
সাম্প্রতিক কালে ফ্রান্স- সুইডিশ সীমান্তে সার্ণের Large Hadron Collider ল্যাবরেটরির গবেষণা সমগ্র পৃথিবীর নজর কেড়েছে। বিশ্বের ১০০টি দেশের ১০০০ বিজ্ঞানী – ইঞ্জিনিয়ার মিলে তৈরি করেছেন মাটির ১৭৫ মিটার নিচুতে ৫৪ মাইল পরিধি বিশিষ্ট সুড়ঙ্গ। উদ্দেশ্য, পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্র ও অনুমানের প্রমাণ পাওয়া, মহাবিশ্বের উৎপত্তি এবং বোসন-কণার অস্তিত্ব আবিষ্কার।
(৩)
বিজ্ঞানীরা আশা প্রকাশ করেছেন তারা শীঘ্রই বোসন কণার একটি প্রকার তথা পদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেলের প্রস্তাবিত মৌলিক কণা Higgs Boson/ Higgs Particle/ God Particle-এর স্বরূপ সন্ধান ও আবিষ্কার করে ফেলবেন। যা বিজ্ঞানের অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করে দেবে। এই ঈশ্বর-কণা ( আসলে ঈশ্বর-নিকুচি কণা, Goddamn Particle) -র নেই ঘুর্ণন, ইলেক্ট্রিক চার্জ, বর্ণ পরিবর্তন।এটি ভরযুক্তকরণ কণা, ভর দান করাই এর কাজ। এরা না থাকলে কণা হবে ভারহীন। এ এক রহস্যময় সৃজণের গল্প।
(৪)
বোসন কণা যে কবি-সাহিত্যিক-গল্পকারদের মনেও বাসা বেঁধেছে। বোসনের সূক্ষ্মতা, রহস্যময়তা আছে বলেই তারা সৃষ্টির রসদ জোগাতে পারেন। নিছক শব্দের নাড়াচাড়ায় তাদের কারিগরীতে জন্ম নেয় সাহিত্যের পুষ্প-পল্লব। সাহিত্যিকদের মনোভূমির এই একক যদি না থাকত, তবে দেখতাম শব্দের লাশকাটা শরীর — নির্ভার, নির্জলা, নিরাভরণ সত্ত্বা। আমরা মনে করি, বিশ্বাস করি কবি-সাহিত্যিকদের মনের গহনে গহনে, তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে, রক্ত-জালকের শাখা-প্রশাখায় রয়েছে সাহিত্য কাঠামোর বোসন কণা। যা থেকে অবয়ব পায় পূর্ণ গল্পের শরীর।
(৫)
সার্ণের গবেষণা ক্ষেত্রের মতই ফেসবুকের এই গবেষণাগারে আমরা সেই ঈশ্বর-কণার স্বরূপ সন্ধানে ব্রতী হয়েছি, সাহিত্যিকদের মনের ল্যাবরেটরিতে।
বোসন গল্পের আরো কিছু উদাহরণ :
বোসন -গল্প :
উপরে উঠব। লিফ্ট্ বানাও।
ডা. শুভদীপ চ্যাটার্জী।
আমি। তুমি। এবার সে ।
সুপ্রিয় রায়।
(এখানে নায়ক, নায়িকা/ প্রতিনায়ক, সঙ্গে তৃতীয় সম্ভাবনা। সে কি সন্তান? সে কি ত্রিকোণ প্রেম? সে কি খল নায়ক? না কি সে মৃত্যু!)
জন-সমুদ্র ! কাল্লো-সাদ্দা ! ‘ঘুমোলেন’ ? ‘ওষুধ ‘ ?
রাজেন্দ্র ভট্টাচার্য।
(নোটবন্দীকে কেন্দ্র করে)