ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া এখন আরও কঠিন। তার জন্য ভারতীয় ক্রিকেটারদের ইয়ো ইয়ো টেস্টের পাশাপাশি উত্তীর্ণ হতে হবে ডেক্সা পরীক্ষায়। তার পরেই সুযোগ মিলবে জাতীয় দলে। ক্রিকেটারদের চোট পাওয়ার সম্ভাবনা কমাতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিসিআই।
ডেক্সা পরীক্ষা কী?
এটি একটি বিশেষ পদ্ধতি যার মাধ্যমে মানুষের শরীরে হাড়ের ঘনত্ব মাপা হয়। একটি স্ক্যান করা হয়, যেখানে ‘ডুয়াল এনার্জি এক্স-রে’ শরীরে প্রবেশ করে। তার মাধ্যমে হাড়ের ঘনত্ব মাপা যায়। অর্থাৎ, কোনও ক্রিকেটারের হাড়ের ঘনত্ব কতটা তা এই পরীক্ষা থেকে জানা যায়। যে ক্রিকেটারের হাড়ের ঘনত্ব কম, সেই ক্রিকেটারের চোট পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সে ক্ষেত্রে ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার আগে তাঁদের হাড়ে ঘনত্ব বাড়াতে হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন খেলায় এখন ডেক্সা পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। বিদেশের ফুটবলে এই পরীক্ষা অনেক আগে থেকেই হচ্ছে। এ ছাড়া অ্যাথলিটরাও এই পরীক্ষা করিয়ে থাকেন। শরীর সুস্থ রাখতে, প্রতিপক্ষকে টেক্কা দিতে নিজের শরীর সম্পর্কে ধারণা থাকা খুব প্রয়োজন। তার জন্য এই পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।
কোথায়, কী ভাবে এই পরীক্ষা করা হবে?
এটি ১০ মিনিটের একটি পরীক্ষা। এই পরীক্ষার জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্র দরকার। ইতিমধ্যেই বিসিসিআই সেই যন্ত্র আনানোর পরিকল্পনা করছে। বেঙ্গালুরুতে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে হবে এই পরীক্ষা। প্রতিটি সিরিজ়ের আগে পরীক্ষা করে দেখা হবে। এই পরীক্ষা করার সময় ক্রিকেটারদের শরীরে যন্ত্রণা বা অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা হবে না বলে জানানো হয়েছে।
আরও কী কী জানা যাবে এই পরীক্ষায়?
হাড়ের ঘনত্ব ছাড়াও শরীরে মেদের পরিমাণ ও পেশির ক্ষমতাও মাপা যায় এই পরীক্ষার মাধ্যমে। শরীরে মেদের পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা থাকা ক্রিকেটারদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেটারদের শরীরে মেদের পরিমাণ অন্যগুলির তুলনায় ১০ শতাংশের কম থাকা উচিত। ঠিক তেমনই ফুটবলারদের শরীরে মেদের পরিমাণ সাধারণত ৫ থেকে ৮ শতাংশ থাকা উচিত। মেদ যত কম থাকবে শরীরে পেশি তত বেশি হবে। ফলে শারীরিক ক্ষমতা তত বাড়বে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে এ বার ক্রিকেটাররা নিজেদের শরীরের এই দিক সম্পর্কেও সচেতন হবেন।
রবিবার বোর্ডের বৈঠকে ছিলেন বিসিসিআই সভাপতি রজার বিন্নী, সচিব জয় শাহ, প্রাক্তন নির্বাচক কমিটির প্রধান চেতন শর্মা, ভারতীয় দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও কোচ রাহুল দ্রাবিড়। সেখানেই এই নতুন ফিটনেস টেস্ট নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারতীয় দলের বেশ কয়েক জন ক্রিকেটার লাগাতার চোট পাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম যশপ্রীত বুমরা, দীপক চাহার, রবীন্দ্র জাডেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দর। এই ক্রিকেটাররা না থাকায় সমস্যায় পড়েছে ভারত। অধিনায়ক রোহিত প্রকাশ্যে চোট নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তার পরেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
এই প্রসঙ্গে ভারতীয় দলের প্রাক্তন ফিটনেস কোচ রামজি শ্রীনিবাসন বলেছেন, ‘‘২০১১ সালেই আমি এই পরীক্ষার কথা বলেছিলাম। কিন্তু তখন সেটা শুরু করা যায়নি। এই পরীক্ষা থেকে শরীরের অনেক খুঁটিনাটি জানা যায় যা থেকে ক্রিকেটারদের মূল্যায়ণ করতে সুবিধা হয়। ক্রিকেটাররাও নিজেদের শরীর সম্বন্ধে সচেতন থাকতে পারেন।’’
এ ছাড়া বোর্ডের বৈঠকে ইয়ো ইয়ো টেস্ট নিয়েও বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইয়ো-ইয়ো টেস্টের মানদণ্ড বাড়িয়ে ১৬.১ থেকে ১৬.৫ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, অতীতে ভারতীয় দলে ঢুকতে গেলে ইয়ো-ইয়ো টেস্ট বাধ্যতামূলক ছিল। বিরাট কোহলি, জাডেজার মতো কিছু ক্রিকেটার দারুণ ফল করতেন। আবার অনেকে সেই পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে জাতীয় দলে ঢুকতে পারেননি। গত কয়েক বছর ধরে সেটি বন্ধ ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে চোটের যে বাড়াবাড়ি দেখা যাচ্ছে, তার কারণেই এই পরীক্ষা ফেরানো হয়েছে বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।