বছরের প্রথম দিনে শুশুনিয়ায় প্রকৃতির মনোরম শোভার সঙ্গে আদিবাসী সংস্কৃতির স্বাদ

রবিবার ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিনটি বাঁকুড়ার পর্যটন কেন্দ্র শুশুনিয়া, বিহারীনাথ, মুকুটমণিপুর, বিষ্ণুপুর, গাংদূয়া সহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে তিল ধারনের জায়গা নেই।

জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র শুশুনিয়া পাহাড়। আজ বছরের প্রথম দিনে এখানে আসা পর্যটকরা পাহাড়ের মোহময় রূপ দর্শনের সঙ্গে শুনতে পাচ্ছেন দ্রিমি দ্রিমি মাদলের আচ্ছন্ন করা বোল। এই শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে আদিবাসী গ্রাম শিউলিবোনা। এখানে বসেছে সারা ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায়ের ২৭ তম মিলন মেলা ‘খেড়োয়াল তুকৌ।’ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের আদিবাসীরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও কৃষ্টি আদান প্রদান করার জন্য এখানে এসে হাজির হয়েছেন। পাহাড়ে চডুইভাতি করতে আসা পিকনিক পার্টিদের গন্তব্য তাই পাহাড় ছেড়ে শিউলিবোনা গ্রাম। পাহাড় থেকে গ্রাম পর্যন্ত চলেছে পর্যটকদের পায়ে হাঁটা মিছিল।

গ্রামে পৌঁছেই দেখা গেল বুনো কুড়চি ফুল, গাছের পাতা আর বিভিন্ন রাজ্যের ট্রেডিশনাল পোষাকে সজ্জিত আদিবাসী পুরুষ রমনীদের কোমর দোলানো নাচের সঙ্গে নানান সুরের মুর্ছনা। পাহাড়তলির যে গ্রামটি এখনও ঘন জঙ্গলে ঘেরা। চারিদিকে নাম না জানা হরেক রকম বুনো ফুলের সৌরভ আর পাখির কলকাকলিতে পূব আকাশে লাল সূর্য ওঠে। কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই হিংস্র জন্ত জানোয়ারের ডাক শোনা যায়। আবার এই গ্রামটিতে ডিজিটাল ভারতের আধুনিক প্রযুক্তির সব উন্নত পরিষেবা পাওয়া যায় শাল পিয়ালের ঘন জঙ্গলে বসেও। ব্যাঙ্ক থেকে, পোষ্ট অফিস, হাসপাতাল, স্কুল, কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, উন্নত চাষের জন্য মাটি পরীক্ষাগার, টেলিফোন এক্সচেঞ্জের সমস্ত পরিষেবা মেলে এখানে। আর এটা সম্ভব করেছে শময়িতা মঠ। বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটি ব্লকের অমরকানন শময়িতা মঠ ২৭ বছর আগে এই গ্রামটিকে দত্তক নিয়ে কাজ শুরু করে এই জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন। বিশ্বের নানান দেশ থেকে এখানে আসছেন পর্যটক থেকে গবেষকরা।

শময়িতা মঠের সম্পাদক ঋষি ঋদ্ধা অনাহতা বলেন, মঠের প্রতিষ্ঠাতা প্রভুজি ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি এই গ্রামে পদার্পণ করেছিলেন। সেদিন গ্রামের মানুষ তাঁকে ধরতি বাবা বলে বরণ করে নিয়েছিলেন। তারপর মঠ কর্তৃপক্ষ গ্রামটিকে দত্তক নেন। সেই থেকে প্রতিবছর ১ জানুয়ারি আদিবাসী মিলন মেলা খেড়োয়াল তুকৌ আয়োজন হচ্ছে। দেশের প্রান্তিক মানুষের মিলন ক্ষেত্র এই শিউলিবোনা গ্রামে এখন এই মিলন মেলা সর্বজনীন উৎসবের রূপ নিয়েছে।

ঋষি ঋদ্ধা অনাহতা বলেন, আগে একদিনের মেলা হত। এখন বর্ষ শেষ ও নতুন বছর শুরুর দিন দুটিতে এই উৎসব হয়। এর আসল উদ্দেশ্য হল আদিবাসী প্রান্তিক মানুষের সারা বছরের ক্লান্তির অবকাশ দেওয়া। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যের আদিবাসীদের এখানে এসে তাদের সংস্কৃতির বিনিময় করার সুযোগ করে দেওয়া।

কলকাতা থেকে পরিবার ও বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে এসেছেন সুব্রত কুন্ডু। তিনি বলেন, শহুরে সংস্কৃতিতে অবক্ষয় শুরু হয়েছে। এখানে এসে মাটির গন্ধ পেলাম। সেই সঙ্গে এখানের মঠ কর্তৃপক্ষ আদিবাসীদের দিয়ে যে সব পন্য প্রস্তুত করেছেন সেই সব রাসায়নিক বর্জিত শাক সবজি, মশলাপাতি, নির্ভেজাল মধু, খেজুর গুড়, আচার কেনার বিপনীও পেলাম। পাশাপাশি বাচ্চাদের আনন্দ দেবার নানান উপকরণও পেলাম এখানে এসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.