রাজ্য প্রশাসন-পুলিশে দুর্নীতি, সরকারের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ করতে তদন্তে দুর্নীতি দমন শাখা

ভাবমূর্তি সাফসুতরো রাখা প্রশাসনের একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া এবং চতুর্দিক থেকে যখন অভিযোগের তির নিরন্তর ধেয়ে আসতে থাকে, তখন সেই মূর্তি সাফাই প্রক্রিয়া পৃথক তাৎপর্য পায়। সেই প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবেই বাড়ি তল্লাশি থেকে মামলা রুজু করার মতো তৎপরতা চলছে রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশের অভিযোগ বিদ্ধ বেশ কিছু অফিসারের বিরুদ্ধে। এবং রাজ্যের সেই সব কর্তা-অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্তের এই প্রক্রিয়া চালাচ্ছে রাজ্যেরই ‘অ্যান্টি করাপশন ব্রাঞ্চ’ (এসিবি) বা দুর্নীতি দমন শাখা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এসিবি-র এই সক্রিয়তা আকস্মিক কিছু নয়। শিক্ষায় নিয়োগ-দুর্নীতি থেকে শুরু করে গরু ও কয়লা পাচারের মামলায় রাজ্যের মন্ত্রী, কিছু সরকারি আধিকারিক, এক শ্রেণির পুলিশকর্তার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তিতে কালি লেগেছে বলে বিরোধী শিবির যখন সরব, সেই সময়ে কালি মোছার পালা গতি পেয়েছে সঙ্গত কারণেই।

দুর্নীতি ঠেকাতে তাই নিচু তলার পুলিশ আধিকারিক থেকে সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিচ্ছে রাজ্য প্রশাসন। এসিবি সূত্রের খবর, কয়েক বছর ধরে কয়েকশো সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছে তাদের কাছে। সেখানে মূলত আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন সম্পত্তির মালিক হয়ে বসার অভিযোগ করা হয়েছিল। তা নিয়ে এসিবি-র তদন্তকারীরা প্রাথমিক তদন্ত করে সরকারের কাছে রিপোর্টও পেশ করেন। তার ভিত্তিতেই রাজ্য সরকারের ১৭ জন অফিসার-কর্মীর বিরুদ্ধে ‘প্রিভেনশন অব করাপশন অ্যাক্ট’ বা দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলা রুজু করেছে এসিবি।

চলছে হানাদারিও। গত শুক্র ও শনিবার বর্ধমানের কেতুগ্রাম, বর্ধমান শহর, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা এবং উত্তরবঙ্গে অভিযুক্তদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে এসিবি সূত্রের খবর। ওই অভিযুক্তদের মধ্যে পাঁচ জন পুলিশ অফিসারও আছেন। তদন্তকারীদের দাবি, গত সোমবার উত্তরবঙ্গে তিন পুলিশ আধিকারিকের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু এসিবি-র তদন্তকারীরা কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিকের বাড়িতে তল্লাশি করতে পারেননি। তাঁদের বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় থানায় ইতিমধ্যে বিষয়টি জানিয়েছে এসিবি।

এক তদন্তকারী অফিসার জানান, কিছু কর্তা-অফিসারের বিরুদ্ধে ২০১৯ থেকেই অভিযোগ জমা পড়তে শুরু করেছিল। এখন কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করার অনুমতি মিলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, দুর্নীতিতে যুক্ত অন্তত ৪০০ সরকারি আধিকারিকের তালিকা রয়েছে এসিবি-র হাতে। সেই তালিকায় বড় সংখ্যায় রয়েছেন পুলিশের লোকজন।

তদন্তকারীরা জানান, অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ডেকে পাঠানোর পরে তাঁরা বিষয়সম্পত্তির তালিকা এবং আয়ের উৎস সংক্রান্ত বিভিন্ন নথিপত্র জমা দিয়েছেন। সেগুলি খতিয়ে দেখা হয়েছে। তাঁদের কয়েক জনের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তাঁদের জমিজমা বা আবাসন রয়েছে কি না, থেকে থাকলে সেই সম্পত্তি কেনার জন্য প্রয়োজনীয় টাকার উৎস কী, খোঁজ চলছে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেরও নথিপত্র নেওয়া হয়েছে। এক গোয়েন্দাকর্তা জানান, তল্লাশিতে যা মিলেছে, তা খতিয়ে দেখার পরেই তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.