করোনা-পর্বে মলনুপিরাভির-এর নাম আগেও শোনা গিয়েছিল। বলা হয়েছিল, করোনার সঙ্গে লড়তে শুধু টিকার উপরই নির্ভর করতে হবে না, আসছে মুখে খাওয়ার ওষুধও। করোনার মতো রোগের ক্ষেত্রে ওরাল মেডিসিনের হদিশ পাওয়াটা ছিল একটা আবিষ্কারের মতো। করোনার তিনটি ঢেউ এসে চলে গিয়েছে। এবার চুতুর্থ ঢেউ আসার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিশ্ব জুড়ে। এই প্রেক্ষিতে ফের শোনা গেল মলনুপিরাভির ওষুধটির কথা। বিখ্যাত ‘ল্যানসেট’ জার্নালে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের রোগভোগের সময়টা কমিয়ে আনে এই ওষুধের প্রয়োগ। করোনা টিকা গ্রহণকারী ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষের মধ্যে ওষুধটির পরীক্ষা চালানোর পর এই ফল পাওয়া গিয়েছে।
করোনার চিকিৎসায় বিশ্বে প্রথম অনুমোদিত ওষুধ হল, ‘মলনুপিরাভির’। এই ওষুধ করোনায় সংক্রমিত রোগীর মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি অর্ধেক কমিয়ে দেয় বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। মলনুপিরাভির নিয়ে আগের গবেষণাগুলি থেকে প্রাপ্ত তথ্যকে আরও সংহত করার লক্ষ্য নিয়ে সম্প্রতি নতুন গবেষণা করা হয়েছে। আগের গবেষণাগুলিতে বলা হয়েছিল, মলনুপিরাভির ওষুধটি হালকা থেকে মাঝারি ধরনের করোনা আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে কার্যকর, তাঁদের হাসপাতালে ভর্তির হার কমাতে কার্যকর এটি। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মলনুপিরাভির গ্রহণকারী রোগীদের সুস্থ হওয়ার সময় প্রায় চার দিন কমে এসেছে। অর্থাৎ, অন্য করোনা রোগীদের তুলনায় তাঁরা চার দিন আগে সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে এই ওষুধ সংক্রমণের মাত্রা কমানোর ক্ষেত্রেও কার্যকারিতা দেখিয়েছে। তবে করোনা রোগীদের দ্রুত সুস্থ করলেও মৃত্যুর হার কিংবা হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি কমাতে এই ওষুধের কার্যকারিতা কতটা, তা জানা যায়নি।
মূলত করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা বয়সের কারণে বা শারীরিক জটিলতার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকিতে ছিলেন, কিংবা যাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করতেই হত, তাঁদের উপরই প্রয়োগ করা হয়েছিল। ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে রেখে দিনে দু’বার করে টানা পাঁচ দিন এই মলনুপিরাভির দেওয়া হয়েছিল।
গবেষণার ফলাফল বলছে, ব্রিটেনে এই ওষুধ সমগ্র জনগোষ্ঠীর জন্য তেমন উপযোগী হবে না। তবে চরম পরিস্থিতির ক্ষেত্রে এটি সে দেশের উপর থেকে চাপ সাময়িক কমাতেই পারে। মার্কিন ওষুধনির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘মার্কে’র তৈরি এই ওষুধটি যথেষ্ট ব্যয়বহুলও। ইংল্যান্ডের এক প্রাক্তন চিকিৎসা কর্মকর্তা মলনুপিরাভির নিয়ে বলেছেন, টিকার সুরক্ষা এতই বেশি যে, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি কিংবা মৃত্যুহার কমাতে মলনুপিরাভির ওষুধের বাড়তি কার্যকারিতা তেমন দেখা যায়নি। তবে এই ওষুধ খেলে শরীর থেকে উপসর্গ এবং ভাইরাস দূর হওয়ার সময়টা যে কমবে, সেটা তিনিও স্বীকার করেছেন।