সন্দীপ: হ্যাঁ এখন তো একটু ব্যস্ত বটেই। শেষ মুহূর্তে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ, আরও নিঁখুত কী ভাবে করা যায়, সব কিছু ঝালিয়ে নেওয়া চলছে।
প্রশ্ন: এখন তো ছবি মুক্তির আগে প্রচার একটা মস্ত বড় অংশ। আপনাকেও যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে হচ্ছে?
সন্দীপ: হ্যাঁ, এখন তো ছবি একটা পণ্য। তাই প্রচারটা একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শুটিংয়ের সময় যত না পরিশ্রম, তার তুলনায় বেশি পরিশ্রম হয় পোস্ট প্রোডাকশনের সময়। আবার তার চেয়েও বেশি খাটুনি প্রচারের সময়! গত কয়েকটা ছবির অভিজ্ঞতার পর এখন এটাতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি (হাসি)।
প্রশ্ন: ‘হত্যাপুরী’ প্রযোজনার দায়িত্বে ছিল এসভিএফ, তার পর হাতবদল, হয়ে বিদেশের প্রযোজকের কাছে। মাঝের এই সময়টাতে কি সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে?
সন্দীপ: না, আসলে এই এই হাতবদলটা খুবই দ্রুত হয়েছে। কারও সঙ্গে সম্পর্কে এতটুকু তিক্ততা আসেনি। একটা আশঙ্কা ছিল ছবিটার ক্ষেত্রে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। তবে সেটাও উতরে দেওয়া গিয়েছে। কারণ যে অংশগুলোর আউটডোর শুটিং ছিল সেগুলো ইনডোরেই সেরে ফেলেছিলাম। তাই সময়ের অপচয়ও হয়নি।
প্রশ্ন: সন্দীপ রায় কি নতুন প্রযোজককে খুঁজলেন, না কি প্রযোজক নিজে এলেন তাঁর কাছে?
সন্দীপ: আজকাল খবর তো দ্রুত ছড়িয়ে যায়। তাই জানাজানি হতেই প্রচুর প্রযোজকের ফোন আসতে থাকে। বেশ মজাই লাগছিল ফোনগুলো পেয়ে! ‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’-র আগে কেউ এগিয়ে আসেনি, এখন দেখলাম অনেকে এগিয়ে এল। ফ্লোরিডাবাসী অঞ্জন ঘোষাল আমার ছবির প্রযোজক সম্পর্কে আমার শ্যালক (স্ত্রীর মামাতো ভাই)। কথা ছিল কাজ করব একসঙ্গে, অবশেষে সেটা হল বলে আমি খুশি।
প্রশ্ন: বইয়ে বাংলা ও ইংরেজি দুটো ভাষাই ফেলুদার দখলে। আপনার ছবির নতুন ফেলুদা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত কি ততটা সড়গড় বাংলায়?
সন্দীপ: ইন্দ্রনীলকে পছন্দ করার পর অনেকেই কথা শুনিয়েছিল আমাকে। কারণ ছিল, ওর বাংলাটা অনেকটাই প্রবাসী বাঙালিদের মতো। সেটা কিন্তু পুরোটা ঠিক নয়। ২০১৫ সালে ফেলুদা হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে প্রথম আমার কাছে আসে ইন্দ্রনীল। সেই সময়কার আর এখনকার ইন্দ্রনীলের মধ্যে বিস্তর ফারাক। অনেকটা উন্নতি করেছে। শুধু ফেলুদার কিছু নির্দিষ্ট লব্জের সময় এক বার আড়চোখে তাকিয়ে নিত আমার দিকে। ও নিজেকে প্রস্তুত করেই ফ্লোরে এসেছিল। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ও কাউকে অনুকরণ করেনি।
প্রশ্ন: এই প্রজন্মের পরিচালকরা ওটিটির পর্দার ফেলুদাকে নিয়ে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। আপনার নজরে তাঁরা কতটা সফল ?
সন্দীপ: আমি আসলে কারও কাজই দেখে উঠতে পারিনি সে ভাবে। আমার মনে হয়, বড় পর্দায় ফেলুদার যে প্রভাব, সেটা টেলিভিশন বা ওটিটি-র পর্দায় হওয়াটা অসম্ভব।
প্রশ্ন: ‘হত্যাপুরী’-র ট্রেলার মুক্তির পর থেকে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে ছবিটা নিয়ে, আপনি কি অবগত সেই বিষয়ে?
সন্দীপ: হ্যাঁ, জানি। আসলে যখন এই প্রজেক্টটার কথা ঘোষণা হয়, তখনই অনেকে বাতিল করে দিয়েছিল। এই ছবি কেন জমবে না, তার নানা রকম ব্যাখ্যা দিয়েছিল। তবে টিজ়ার মুক্তির পর সেই ধারণা খানিকটা হলেও বদলেছে। ট্রেলার মুক্তির পর ধারণাটা আরও পাল্টেছে। ছবি মুক্তি পর সম্ভবত ধারণাটা পুরোটাই বদলাবে।
প্রশ্ন: আপনি এত খবর পান কোথা থেকে? সোশ্যাল মিডিয়াতে নেই, ব্যক্তিগত কোনও ফোনও ব্যবহার করেন না?
সন্দীপ: খবর দেওয়ার লোকের অভাব নেই, আমার থেকেও অনেক ভাল করে খুঁটিয়ে বলতে পারেন তাঁরা।
প্রশ্ন: এ বার তো ফেলুদার হাতে ফোন দেখা যাবে?
সন্দীপ: হ্যাঁ, তোপসে আর ফেলুকে ফোন দিলাম এ বার। আসলে এখনকার প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্য করতেই এই সিদ্ধান্ত। তবে সারা ক্ষণ হাতে ফোন থাকবে ফেলুদার, তেমনটা নয়।
প্রশ্ন: সন্দীপ রায়কেও লোকে নাকচ করে দেয়! খারাপ লাগে না?
সন্দীপ: একটু মনখারাপ হয়, তবে বেশি মনখারাপ করলে কাজ করা যাবে না। প্রত্যাখ্যান আসলে জোর বাড়ায়। আরও বেশি করে ভাবলাম, নাহ্! এই তিন জনকে (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, অভিজিৎ গুহ এবং আয়ুষ) নিয়েই করতে হবে।
প্রশ্ন: ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের আগে আবিরকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছিলেন। সেটা হল না কেন?
সন্দীপ: একই অভিনেতা দুটো বৈগ্রহিক চরিত্র করলে, সেটা খুব একটা যে ভাল হয়, আমি বিশ্বাস করি না। আবিরের প্রতি আমার দুর্বলতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও মনে হয়েছে, ওকে নেওয়াটা ঠিক হবে না। নিলে ওর প্রতি অবিচার করা হত।
প্রশ্ন: ফেলুদার স্বত্ব আপনি ওটিটি-সহ অন্য বেশ কিছু মাধ্যমে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
সন্দীপ: আমার মনে হয়েছে, একটু ছড়ালে মন্দ হবে না। অনেকেই ফেলুকে নিয়ে কাজ করতে চাইছিল। সেটা দিলে খুব একটা ক্ষতি হবে না। কিন্তু শঙ্কু আমার হাতেই রেখেছি। এ ছাড়া বড় পর্দায় তো এখনও আমার হাতেই রয়েছে, সেই দিক থেকে নিশ্চিন্ত।
প্রশ্ন: সত্যজিৎ রায়ের পর আপনি যে ভাবে ফেলুদাকে বড় পর্দায় নিয়ে এসেছেন, আপনার পর এই ব্যাটন কে ধরবেন?
সন্দীপ: আমার মনে হয়, এই ধারা বহন করার লোকের অভাব হবে না। তবে আমার এখনও অনেক কাজ করা বাকি।
প্রশ্ন: ছেলে সৌরদীপ কি বাবা-দাদুর জুতোতেই পা গলাবেন?
সন্দীপ: আমি কখনই কিছু চাপাইনি। তবে ‘হত্যাপুরী’ ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের অনেকটা দেখভাল করছে। সাহায্য করছে ভীষণ। ওর আগ্রহও রয়েছে ওই দিকেই। তবে শুধু পরিচালনা নয়, সিনেমার অন্যান্য ক্ষেত্রে, যেমন ভিএফএক্স-এর প্রতি বিশেষ ঝোঁক রয়েছে ওর।
প্রশ্ন: আপনি যে ভাবে একটা সময় সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে থেকেছেন, কাজ শিখেছেন, সেই ছায়া কি দেখতে পান ছেলের মধ্যে?
সন্দীপ: হ্যাঁ, দেখতে তো পাই সৌরদীপের মধ্যে সেটা। তবে কখনও নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে খুব বেশি কিছু বলে না। পরিচালনায় ওর আগ্রহ যদি নিজে থেকেই বাড়ে, তা হলে ভালই হবে।
প্রশ্ন: ‘হত্যাপুরী’-র পর কি আবার ফেলুদা ফিরবে?
সন্দীপ: যদি ফেলুদার অনুরাগীরা এই ত্রয়ীকে পছন্দ করেন, নিশ্চয়ই ফিরবে।