যার নামে আর.জি.কর মেডিকাল কলেজ অ্যাণ্ড হসপিটাল, সেই চিকিৎসক আর.জি.কর বা রাধাগোবিন্দ কর (২৩ আগষ্ট, ১৮৫২/১৮৫৩ — ১৯ ডিসেম্বর ১৯১৮) মেডিকাল কলেজে ভর্তি হয়ে একবছর পড়ে, কলেজ ও পড়াশুনো ছেড়ে দেন। যৌবনের ধর্মে তিনি বিপথগামী হলেও, আদর্শের টানেই আবার পড়াশুনোর জগতে প্রায় এক দশক পর ফিরে আসেন (১৮৮০/১৮৮১)। এই সময়ের মধ্যে তিনি কলকাতায় নাটকের দলেও ভিড়েছিলেন; দীনবন্ধু মিত্রের লেখা ‘লীলাবতী’ নাটকে অভিনয় করেন। এই সময়ের মধ্যেই তিনি বিনা দোষে পুলিশি অত্যাচারে কারাগারে বন্দী হন। আর এই সময়ের মধ্যেই তিনি বিপত্নীক হন। অবশেষে জনসেবা করার মানসিক প্রাবল্যে পুনরায় চিকিৎসা বিজ্ঞান পড়তে ফিরে আসেন। তিন বছরে পড়া শেষ করার পর ১৮৮৩ সালে তিনি বিলেত গেলেন এবং এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.আর.সি.পি ডিপ্লোমা নিয়ে ফিরলেন। তারপর কর্মময় জীবন, মনে রাখার মত কাজ। আজকের আর.জি.কর মেডিকাল কলেজ তাঁরই উৎসাহে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
১৯৪৮ সালের ২ মার্চ মেডিকাল এডুকেশন সোসাইটি অফ বেঙ্গলের সভায় এর নাম ‘আর. জি. কর মেডিকাল কলেজ ও হাসপাতাল’ রাখা হলেও ১৯১৯ সালের ১৭ এপ্রিল সোসাইটির সভায় ডা. নীলরতন সরকারের প্রস্তাব অনুসারে তার নাম রাখা হয়েছিল ‘কারমাইকেল মেডিকাল কলেজ’।
তারও আগে ১৯১৬ সালের ৫ জুলাই বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল এই কলেজটির উদ্বোধন করেছিলেন ‘বেলগাছিয়া মেডিকাল কলেজ’ নামে। সেইসময় এটিই ছিল ভারত সরকার অনুমোদিত প্রথম বেসরকারি মেডিকাল কলেজ। এই বেলগাছিয়া মেডিকাল কলেজ ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে First MB এবং ১৯১৯ সালে Final MB মানের অনুমোদন পায়।
তার আগে ১৯০৪ সাল থেকে এই বেসরকারি মেডিকাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ‘দি ক্যালকাটা মেডিকাল স্কুল অ্যাণ্ড দি কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অ্যাণ্ড সার্জনস অফ বেঙ্গল’। এখানে দুটি শাখায় পড়ানো হত। প্রথম, বাংলা ভাষায় মেডিকাল শিক্ষা দেবার চার বছরের মেডিকাল স্কুল বিভাগ। আর ইংরাজিতে শিক্ষা দেওয়ার পাঁচ বছরের মেডিকাল কলেজ বিভাগ।
১৮৮৭ সালের আগষ্ট মাস থেকে ‘ক্যালকাটা স্কুল অব মেডিসিন’ থেকে তার অ্যালোপ্যাথি বিভাগ আলাদা করে নিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘ক্যালকাটা মেডিকাল স্কুল’। এই স্কুলের সঙ্গে ১৮৯৫ সাল থেকে চালু হওয়া ‘কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অ্যাণ্ড সার্জনস অফ বেঙ্গল’ যুক্ত হয় ১৯০৪ সালে। তারই সংযুক্ত নাম ‘দি ক্যালকাটা মেডিকাল স্কুল অ্যাণ্ড দি কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অ্যাণ্ড সার্জেনস অফ বেঙ্গল।
ড. কল্যাণ চক্রবর্তী