আজকের দিনে –রবীন্দ্রে এবং রবীন্দ্র-সাহিত্যে নিবিড় সান্নিধ্য ছিল প্রশান্ত চন্দ্র মহালনবিশের।

আজকাল তথাকথিত বড় বড় বিজ্ঞানীদের সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতি তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। যারা সাহিত্য সংস্কৃতির লোক তাদের সঙ্গেও বিজ্ঞান জগতের মানুষের দূরের সম্পর্ক। যে আপাত সম্পর্ক দেখা যায়, তার মধ্যে আদৌও কোনো গভীরতা নেই। আমি কোনো কৃষিবিজ্ঞানীকে দেখি নি যিনি ঐতিহ্য, লোকসংস্কৃতি, সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিভাগে কোনোদিন কি এমন কোনো অধ্যাপক নিযুক্ত হয়েছেন, যিনি রবীন্দ্র সাহিত্য নিবিড় পাঠ করেছেন? দেখতে চেয়েছেন আবেদকের সাহিত্য প্রীতি ও গবেষণা? বরং কৃষি-আশ্রিত সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে কেউ চর্চা করলে কৃষিবিজ্ঞানীরা সামনে পিছনে বিস্তর সমালোচনা করেন। কিন্তু রাশিবিজ্ঞানের সর্বকালের সেরা মানুষটি ছিলেন রবীন্দ্র সাহিত্যের তন্বিষ্ট পাঠক, গবেষক। তিনি প্রশান্ত চন্দ্র মহালনবিশ। ১৯৩১ সালের ১৭ ই ডিসেম্বর কলকাতার বনহুগলিতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট । বিশ্বমানের এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভারতের গর্ব। কিন্তু আজ কি এমন বিজ্ঞানী সেখানে আছেন যিনি বিজ্ঞানেও খ্যাতিসম্পন্ন, পাশাপাশি বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও লোকসংস্কৃতিতেও জারিত, সম্পৃক্ত! বিজ্ঞানচর্চা করবো বলে সাহিত্যচর্চা না করবো কেন! সাহিত্য সংস্কৃতি সমাজের দর্পণ। তা মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। মানুষের জন্যই বিজ্ঞান। বিজ্ঞানচর্চা যদি কেবল পারিতোষিক পাবার জন্য করি, নিজের পদ অলংকরণের প্রয়াস হিসেবে বহাল রাখি, তাহলে না বিজ্ঞানের সাধক হতে পারবো, না মানুষের সেবা করতে পারবো। চকচক করলেই সোনা হয় না। মানুষ ব্যবহার করতে না পারলে সে সোনাই নয়! মনে রাখবেন প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান ভাণ্ডার ছিল কাব্যের সম্ভারে সুসজ্জিত। প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা ছিলেন যথার্থ সাহিত্যিক। বিজ্ঞানীকে কবিও হতে হবে।

@কচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.