ক্যারাটের প্যাঁচে স্বপ্ন জয়, জাতীয় স্তরে সেরার শিরোপা পেল দুর্গাপুরের পিউ

শুরুটা ছিল নিছকই আত্মরক্ষার কৌশল জানার পাঠ। টানা কয়েক বছরের পরিশ্রমে সেটাই হয়ে দাঁড়ায় ভালোবাসা। মেয়ে বলে পাড়া-প্রতিবেশীর বাঁকা চাউনি যতই থাকুক, অনুশীলনে ভাটা পড়েনি কখনও। সেই ভালোবাসারই দাম পেল দুর্গাপুরের এই মেয়ে।

ঘাম ঝরানো প্রতিটা দিনের পরিশ্রমের স্বীকৃতি উঠল হাতে। ক্যারাটে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় বাংলায় সেরার শিরোপা পেল দুর্গাপুর বিসি রায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বিবিএ-র ছাত্রী পিউ প্রামাণিক।

জেলা ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় সফলতা আগেই এসেছিল। জাতীয় স্তরে ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল স্বপ্ন। তার জন্য অনুশীলনও চলছিল জোরকদমে। লুধিয়ানায় আয়োজিত ‘Ptako Open National Karate Championship’-এ দেশের নানা প্রান্ত থেক আসা ৪০০ প্রতিযোগীর মধ্যে বাংলা থেকে ছিল পিউ।

প্রথম পুরস্কার জিতে নিয়েছে সেই। পিউ বলেছে, “জাতীয় স্তরের পরে আন্তর্জাতিক নানা টুর্নামেন্টই এখন আমার লক্ষ্য। তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। দেশে তো বটেই, সুযোগ পেলে আন্তর্জাতিক স্তরেও বাংলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করব।”

দুর্গাপুরের ‘অল ইন্ডিয়া আশিহারা ক্যারাটে অর্গানাইজেশন’-এ ক্যারাটের প্রশিক্ষণ চলছে টানা সাত বছর ধরে। জেলা স্তরে ইতিমধ্যেই নানা পদক জিতে নিয়েছে পিউ। জানিয়েছে, ক্যারাটের শিক্ষক তাদের শেখান কী ভাবে আত্মরক্ষা করতে হয়, কী ভাবে সুযোগ সন্ধানীকে শরীরের বিশেষ বিশেষ জায়গায় আঘাত করে ঘায়েল করতে হয়। ভয় না পেয়ে, ঘাবড়ে না গিয়ে, উপস্থিত বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে কী ভাবে বিপরীত পক্ষকে মোক্ষম পাঞ্চে কুপোকাৎ করে দিতে হয়।

“প্রতিদিনই শুনি মেয়েদের উপর নানা রকম অত্যাচার চলছে। রাস্তাঘাটে খুব একটা নিরাপদ নয় মেয়েরা। আমাদের মতো ছাত্রীদের প্রায় দিনই ইভটিজারদের পাল্লায় পড়তে হয়। অনেকেরই সাহসে কুলায় না, তাই প্রতিবাদ করতে পারে না তারা। আর প্রতিবাদ না করায় দিন দিন ছাত্রীর শ্লীলতাহানি, ছিনতাই, ইভটিজারদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে,” পিউয়ের কথায়, নিজেকে রক্ষা করা শুধু নয়, বিপদে পড়লে অন্যকে বাঁচানোও উদ্দেশ্য তার।

আত্মরক্ষার স্বার্থে বর্তমানে বেশিরভাগ মেয়েরাই ক্যারাটে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। শুধু প্রশিক্ষণই নয়, প্রশিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা দক্ষতার পরিচয় দিয়ে পাড়ি দিচ্ছে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে। দুর্গাপুরের পিউর ইচ্ছে তেমনই। তার সাফল্যে গর্বিত দুর্গাপুর ডঃ বিসি রায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। অ্যাকাডেমি অব প্রফেশনাল কোর্সেসের প্রিন্সিপাল ডঃ সৌরভ দত্ত বলেছেন, “পিউ শুধু আমাদের কলেজের নয়, গোটা রাজ্যের গর্ব। তার মতোই মেয়েদের আত্মরক্ষার পাঠে এগিয়ে আসা উচিত।”

সাধারণ ঘরের মেয়ে ক্যারাটে শিখে কী হবে? এই কথা প্রায়শই শুনতে হয় মেয়েদের। পিউ জানিয়েছে, সেই থেকেই ক্যারাটে প্রশিক্ষণকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরে নিয়েছিল সে। স্বপ্নের উড়ান শুরু সেই থেকেই। আগামী দিনে আরও বড় লক্ষ্য জয় করতে চায় পিউ।

চৈতালী চক্রবর্তী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.