তিনি বিশ্বমাতা। তিনি সৎ-এর মা, অসৎ-এরও মা। তিনি শরতের মা, আমজাদেরও মা। তিনি জগজ্জননী! তাই তিনি পশুপাখিরও মা। মা সারদার স্নেহ-আদর থেকে বঞ্চিত হয় নি মনুষ্যেতর প্রাণীরাও। এমনই স্নেহময়ী!
মায়ের এক পোষা চন্দনা ছিল। তিনি তার নাম দিয়েছিলেন ‘গঙ্গারাম’। এতই আদর দিয়েছিলেন, এতই যত্ন করতেন, পানটুকুও চিবিয়ে দিতে হত। নইলে ‘মা’, ‘মা’ বলে সমানে ডেকে চলতো ওইটুকু পাখি, বাড়ি মাথায় করতো। সারদা মা-কে তখন জিভে করে পান খাওয়াতে যেতে হতো পাখিটিকে।
ভক্তকূলের অহর্নিশ ডাকে গঙ্গারাম ‘মা’ বলতে শিখেছিল। সারদা দেবী তাকে পড়াতেন ‘রামকৃষ্ণ-রাম, রাম’। সে কতই না বুলি! মা এ ঘর থেকে ও ঘরে বেরিয়েছেন কী গঙ্গারাম ডেকে উঠতো। পূজা সেরে বেরিয়েছেন, তো তখনও ডাক। পূজার প্রসাদি ফলমিষ্টিটুকুর আশায় ডেকে উঠতো সে।
কিছু ভক্ত তো রীতিমতো ঈর্ষা করতো পাখিটিকে। আদিখ্যেতা! সবটুকু তুই নিবি, মায়ের মনোযোগ! আমরা কেউ নই! কেউ আফসোস করে বলে উঠতেন, “আহা! যদি গঙ্গারাম হয়ে জন্মাতে পারতাম, তো বেশ হতো!” মা নিয়মিত যত্ন করতেন এই বিহঙ্গ-সুন্দরকে। তার ডাকে সাড়া না দিয়ে পারতেন না। তাকে ভরপেট রেখে তবেই অন্য কাজে রত হতেন মা সারদা।
শুধুই কী পাখি! এক দুষ্ট বেড়াল, এক বাছুরের ডাকে মায়ের প্রাণ আকুল হত। ছুটে যেতেন বাছুরেরও ‘হাম্বা’ ডাক শুনে। বন্ধন হীন করে তাকে চারণে মুক্তি দিতেন। আর বেড়ালটি মায়ের পায়ে লুটিয়ে পড়লে সে দেখার মতো ব্যাপার হতো। কেউ কখনও এসব মনুষ্যেতর প্রাণীকে শাস্তি দিতে পারতেন না।
ছবিটি এঁকেছেন ” শ্রী শীর্ষ আচার্য।