বিজেপিতে যোগদানের পর থেকেই মুকুল রায়কে নাম না করে “গাদ্দার” বলে সম্বোধন করে আসছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারের লোকসভা নির্বাচনে তার দল থেকেই এমনই একঝাঁক “গাদ্দার”-কে প্রার্থী করেছেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছেন কোচবিহারের প্রার্থী পরেশ চন্দ্র অধিকারী, বহরমপুরের প্রার্থী অপূর্ব সরকার মুর্শিদাবাদের প্রার্থী আবু তাহের খান, রায়গঞ্জের প্রার্থী কানাইয়ালাল আগারওয়াল, দার্জিলিংয়ের প্রার্থী অমর সিংহ রাই। রয়েছেন আরও এক “গাদ্দার” মানস ভুঁইয়াও।

অপূর্ব সরকার, কানাইয়া লাল আগারওয়াল ও আবু তাহের খান ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু গত তিন বছরের সময় কালে এই বিধায়করা শিবির বদল করে মমতার দলে নাম লিখিয়েছেন। পুরস্কারস্বরূপ এই সমস্ত বিধায়কদের লোকসভার টিকিট দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা পরেশ চন্দ্র অধিকারী গত বছর শেষের দিকে তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূলে যোগদানের দিন কয়েক আগেই নিজের মেয়ের এসএসসি-তে চাকরি পাকা করেছিলেন পরেশ। এমনটাই অভিযোগ উঠেছিল, যদিও সেই অভিযোগ খণ্ডন করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এই “গাদ্দার” ফরওয়ার্ড ব্লক নেতাকে কোচবিহার লোকসভায় টিকিট দিয়ে পুরস্কৃত করছেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী। আর অমর সিং রায় দার্জিলিং কেন্দ্রে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিধায়ক ছিলেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং, তাঁকে দার্জিলিং থেকে প্রার্থী করেছিলেন। এদের মতই মানস ভুঁইয়াইও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের হয়ে সবং থেকে বিধায়ক হন। শুধু তাই নয়, সেবার ভোট প্রচারে বেরিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে জড়িয়ে ধরে “আমার মুখ্যমন্ত্রী” বলে বাজার গরম করেছিলেন এই চিকিৎসক রাজনীতিক। ভোট পরবর্তী সময় কংগ্রেসের দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে মুখ্যমন্ত্রী দেওয়া বিধানসভার পাবলিক একাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন মানস ভুঁইয়া। এই নিয়ে বিবাদের জেরে আব্দুল মান্নান ও অধীর চৌধুরীর সঙ্গে মতানৈক্য দেখা দিলে, তিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ‌ দেন। নিজের জন্য রাজ্যসভার আসনের বন্দোবস্ত করার পাশাপাশি, স্ত্রী গীতা ভূঁইয়ার জন্য সবং বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিট মমতার থেকে আদায় করে নিয়েছিলেন মানস। কিন্তু প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সময় এদের “গাদ্দার” বলা তো দূরঅস্ত, নিজের এই সমস্ত প্রার্থীদের দলের “শ্রেষ্ঠ সৈনিক” বলে আখ্যা দেন মমতা।

প্রসঙ্গত, বিধানসভা ভোটে যে সমস্ত এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন অপূর্ব ,তাহের, অমর, কানইয়া-রা। আবারও, সেইসব বিধানসভা কেন্দ্রেই তাঁদের ভোট চাইতে যেতে হবে। এক দলের নামে ভোট চেয়ে, অন্য দলে গিয়ে এলাকাবাসীর প্রশ্নের মুখে পড়াটাই স্বাভাবিক এমন জনপ্রতিনিধিদের। এইসব “গাদ্দার”দের ভোট চাওয়ার নতুন কী মন্ত্র বাতলে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। কারণ তৃণমূলের দেওয়া রাজ্যসভার সদস্যপদ পদত্যাগ করে বিজেপিতে গিয়ে যদি মমতার কাছে “গাদ্দার’ হন মুকুল। তাহলে অপূর্ব সরকার, আবু তাহের বা কানাইয়ালাল-রা কেন “গাদ্দার” হবেন না? আমজনতার নজরে, এমন প্রশ্ন উঠছে।

নীল রায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.