তাওয়াং সীমান্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক, ভারতের প্রতিক্রিয়ার পরেই বলল চিনা বিদেশ দফতর

অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াঙের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) ভারতীয় এবং চিনা সেনার সংঘর্ষ নিয়ে নয়াদিল্লির তরফে প্রতিক্রিয়ার পর মুখ খুলল বেজিং। চিনা বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন মঙ্গলবার বলেছেন, ‘‘সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে কূটনৈতিক এবং সামরিক স্তরে নিরবচ্ছিন্ন আলোচনা চলছে। পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল।’’

তবে গত শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) তাওয়াঙে চিনা ফৌজের এলএসি লঙ্ঘন বা হামলা সম্পর্কে ভারতের অভিযোগের কোনও কথা বলেননি ওয়াং। ২০২০ সালের জুনে লাদাখের গালওয়ানের পর এ বার অরুণাচলের তাওয়াঙে চিনা ফৌজের হামলা নিয়ে মঙ্গলবারই লোকসভায় বিবৃতি দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সেখানে সরাসরি চিনা ফৌজের বিরুদ্ধে ‘এলএসি লঙ্ঘনের চেষ্টা’র অভিযোগ তুলেছেন তিনি।

২০২০ সালের গালওয়ান-কাণ্ডের মতো প্রাণহানি না ঘটলেও শুক্রবার রাতের ওই সংঘর্ষের ঘটনায় দু’পক্ষেরই বেশ কয়েক জন সেনা আহত হয়েছেন। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, কোনও ভারতীয় সেনার জখম গুরুতর নয়। গালওয়ানের মতোই তাওয়াঙেও দ্বিপাক্ষিক সেনাস্তরের ‘রুল অব এনগেজমেন্ট’ মেনে কোনও পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি।

ভারতীয় সেনার তেজপুরের ৪ নম্বর কোরের একটি সূত্র জানিয়েছে, সে রাতে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) তাওয়াং সেক্টরের ইয়াংৎসে এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতের এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করলে ভারতীয় সেনা ‘দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিরোধ’ করে। সে সময় হাতাহাতি এবং লাঠি-পাথর নিয়ে সংঘর্ষে দু’পক্ষেরই বেশ কয়েক জন আহত হন।

প্রায় ৩০০ চিনা সেনা তাদের থাং লা শিবির থেকে ইয়াংৎসে নদী পার হয়ে তাওয়াং সেক্টরে অনুপ্রবেশ করেছিল। কিন্তু ভারতীয় সেনা প্রস্তুত থাকায় তারা সুবিধা করতে পারেনি। এর পরে সেনার ঊর্ধ্বতন স্তরের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছনো (ডিসএনগেজমেন্ট)-র বিষয়ে ঐকমত্য হয়। ইতিমধ্যে তা কার্যকরও হয়েছে।

২০২০ সালের ১৫ জুন পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে অনুপ্রবেশকারী চিনা ফৌজকে ভারতীয় বাহিনী বাধা দেওয়ায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। সংঘর্ষে মোট ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিলেন। আমেরিকা-সহ বিভিন্ন পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট চিনা সেনার নিহতের সংখ্যা ছিল আরও বেশি। যদিও তা প্রকাশ্যে শিকার করেনি বেজিং।

গালওয়ান-কাণ্ডের পরেও চিনাবাহিনীর এলএসি লঙ্ঘনের বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারিতে উত্তর সিকিমের নাকু লায় অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে চিনা ফৌজ। অন্তত ২০ জন চিনা সেনা ওই সংঘর্ষে জখম হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তারা শেষ পর্যন্ত পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিল। নাকু লার সংঘর্ষে জখম হয়েছিলেন ৪ ভারতীয় জওয়ানও। ভারতীয় সেনা ওই ঘটনাকে ‘মামুলি গোলমাল’ বলেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.