উনিশের লোকসভা নির্বাচনের আর এক মাসও বাকি নেই। এর মধ্যেই ইভিএম মেশিন নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলো ২১টি বিরোধী দল। তাদের দাবি, ভোটের আগে দেশের শীর্ষ আদালতকে এটা সুনিশ্চিত করতে হবে, যে ইভিএম মেশিনে কোনও কারচুপি নেই। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ শুক্রবার এই মামলার শুনানি করবেন।
ইভিএম মেশিনে কারচুপির অভিযোগ বিরোধীদের অনেকদিনের। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার অভিযোগ করেছেন, ভোটিং মেশিনে কারচুপি করতে পারে বিরোধী। এমনকী লোকসভা নির্বাচনের আগে দলীয় কর্মীদের বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, মেশিন পরীক্ষা করার সময় ভালো করে দেখে নিতে। ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জেতার পরে একই অভিযোগ তুলেছিলেন সপা নেতা অখিলেশ যাদব ও বসপা নেত্রী মায়াবতী। মায়াবতী তো ব্যালট পেপার ফিরিয়ে আনারও দাবি জানিয়েছিলেন। আম আদমী পার্টি নেতা অরবিন্দ কেজরীওয়াল এর আগে বহুবার ইভিএম মেশিনে কারচুপির অভিযোগ করেছেন। এমনকী কংগ্রেসের তরফেও নির্বাচনী প্রচারে দাবি করা হয়েছে, নিজেদের হার বাঁচাতে ভোটিং মেশিনে কারচুপি করতে পারে বিজেপি।
আর তাই ইভিএম মেশিনকে সুরক্ষিত রাখার দাবি নিয়েই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে এই ২১টি বিরোধী দল। এদের মধ্যে আছে কংগ্রেস, তেলুগু দেশম পার্টি, এনসিপি, সপা, বসপা, আপ এবং বামপন্থী দলগুলি। শুধুমাত্র ইভিএম মেশিনের সুরক্ষা নয়, বিরোধী দলগুলি আরও দাবি করেছে অন্তত ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে ইভিএম-এর সঙ্গে ভিভিপ্যাট যুক্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, কমিশনের তরফে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, প্রত্যেক কেন্দ্র অনুযায়ী কত শতাংশ ভিভিপ্যাট ইভিএম-এর সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব হবে। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, আইএসআই যে তথ্য দেবে, সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে।
গত রবিবার উনিশের লোকসভা নির্বাচনের সূচি ঘোষণা করার সময় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা বলেছিলেন, বেশিরভাগ দলগুলিই ইভিএম-এর উপর নিজেদের বিশ্বাস দেখিয়েছে। কিন্তু তারপরেও এই মেশিনে যাতে কোনও কারচুপি না হয়, তা সুনিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন বিরোধীরা।
ভোট ঘোষণা হওয়ার পর প্রথমে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিরোধীরা। নির্বাচন কমিশনের তরফে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, বাইরে থেকে ইভিএম মেশিনে কারচুপি করার কোনও সম্ভাবনা নেই। যদি কেউ মেশিন চুরি করে তার মাদারবোর্ডে কিছু কারচুপি করে তাহলেই তা সম্ভব। তার আগে নয়। এমনকী কমিশনের তরফে এও জানানো হয়, বর্তমানে নির্বাচনে কোনও দল হেরে গেলে তার প্রথম লক্ষ্য হয় ইভিএম মেশিন। হেরে গেলেই ইভিএম মেশিনে কারচুপির অভিযোগ তোলা সোজা বলেই এটা করা হয়। কারণ, ইভিএম মেশিন তো আর নিজের সাফাই গাইবে না। এমনকী নির্বাচন কমিশনের তরফে চ্যালেঞ্জ করা হয়, কেউ ইভিএম মেশিন হ্যাক করে দেখাক। কিন্তু সেই চ্যলেঞ্জ নিতে কেউ এগিয়ে আসেনি।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এই ইভিএম সংক্রান্ত মামলার শুনানি করবেন। এখন দেখার ভোটিং মেশিন নিয়ে বিরোধীদের করা অভিযোগ দেশের শীর্ষ আদালতের সামনে ধোপে টেকে কি না।