মহিলাদের পুড়িয়ে মারা, যৌন নির্যাতন, অ্যাসিড হামলা, ধর্ষণ এবং গণধর্ষণের মতো ঘটনায় রাজ্যে যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, তা পর্যাপ্ত নয় বলে স্বীকার সরকারের। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বাড়ানো প্রয়োজন এবং শীঘ্রই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে রাজ্য আদালতে জানিয়েছে। এমনকি এ বিষয়ে সংশোধনী বিল আসতে চলেছে বিধানসভায়। এক জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে কলকাতা হাই কোর্টে এমনটাই জানাল রাজ্য। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, মহিলাদের উপর হওয়া বিভিন্ন ধরনের অত্যাচারের প্রেক্ষিতে যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় তাতে বদল আনা হবে। ন্যাশনাল লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি (নালসা)-র তালিকা মেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ভাবনাও রয়েছে রাজ্যের। নালসার ঠিক করা ক্ষতিপূরণের তালিকাও তিনি আদালতের সামনে তুলে ধরেন।
মামলাকারীদের অভিযোগ দেশের বাকি রাজ্যের তুলনায় বাংলায় সব ক্ষেত্রেই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কম। রাজ্যে ক্ষতিপূরণ কম বলে স্বীকারও করে নিয়েও রাজ্যের পক্ষে বলা হয় দেশের সব রাজ্যে না হলেও অনেক রাজ্যেই নালসার তালিকা মানা হয়। এর পরেই জানানো হয়, খুব তাড়াতাড়ি বাংলাতেও তা মানা হবে।
মহিলাদের উপর অ্যাসিড হামলায় এখন এ রাজ্যে সর্বনিম্ন তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। সেখানে নালসা বলেছে, ২০ শতাংশ ক্ষতি হলে তিন লাখ টাকা এবং ৫০ শতাংশের বেশি ক্ষতিগ্রস্তের জন্য সর্বোচ্চ আট লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এমনকি মহিলাদের পুড়িয়ে মারার ক্ষেত্রেও একই ক্ষতিপূরণের কথা বলা হয়েছে। ধর্ষণ এবং গণধর্ষণের ঘটনায় নালসা সর্বনিম্ন চার লাখ এবং সর্বোচ্চো পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করেছে। এই ধরনের ঘটনায় বাংলায় ক্ষতিপূরণের অঙ্ক কমপক্ষে তিন লাখ টাকা। মৃত্যুতে এ রাজ্যে ন্যূনতম ক্ষতিপূরণ দু’লাখ টাকা রয়েছে। নালসা বলেছে, এই ঘটনায় ন্যূনতম পাঁচ লাখ এবং সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি ঘটনায় রাজ্যের সঙ্গে নালসার ক্ষতিপূরণের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।
রাজ্যের কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় হাই কোর্টে। একটি ঘটনায় তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানায় রাজ্য। জনস্বার্থ মামলকারীর আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত আরও বেশি ক্ষতিপূরণের দাবি করেন। তাঁর দাবি, এ রাজ্যে ক্ষতিপূরণ কম দেওয়া হয়। রাজ্য জানায়, মহিলাদের উপর হওয়া ঘটনাগুলিতে কতটা ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রয়োজন তা নিয়ে ২০১৮ সালে একটি সূচি তৈরি করে নালসা। এ সংক্রান্ত বিষয়ে ২০১৭ সালের নিজস্ব আইন মেনে ক্ষতিপূরণ দেয় এ রাজ্য। তবে এই আইন সংশোধন করা নিয়ে বিধানসভায় শীঘ্রই প্রস্তাব আনা হবে। অর্থাৎ, মহিলাদের উপর হওয়া বিভিন্ন ঘটনায় ক্ষতিপূরণ বাড়াতে পারে রাজ্য।
প্রসঙ্গত, হাঁসখালি গণধর্ষণের ঘটনায় এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী অনিন্দ্যসুন্দর দাস। তাঁর বক্তব্য, ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে কোনও মাপকাঠি হতে পারে না। ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা বিচার করে ক্ষতিপূরণ ধার্য করা উচিত। যদিও এ নিয়ে উচ্চ আদালত এখনও কোনও নির্দেশ দেয়নি। ওই মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।