রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন কেন্দ্রে কড়া নিরাপত্তায় রবিবার টেট আয়োজন করা হয়েছে। পরীক্ষা দিতে চলেছেন মোট ৬ লক্ষ ৯০ হাজার ৯৩২ জন। টেটের শুরুতেই বিক্ষিপ্ত ভাবে তাল কাটল কয়েকটি এলাকায়।
বোলপুরে একটি টেট পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে রবিবার সকালে পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ দেখান বলে খবর। তাঁদের অভিযোগ ছিল, কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার্থীদের ব্যাগ রাখার বন্দোবস্ত করে দেননি। ব্যাগ রাখার বিষয়ে কোনও রকম সহযোগিতাও করা হচ্ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন প্রার্থীরা। এতে ওই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসা প্রার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। যার ফলে তাঁরা বেশ কিছু ক্ষণ পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে রাস্তা অবরোধ করে রাখেন।
বিক্ষোভ অবশ্য বেশি বাড়তে দেননি কর্তৃপক্ষ। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট স্কুলের তরফে চাকরিপ্রার্থীদের ব্যাগ রাখার বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়। অবরোধ উঠে যায় তার পর।
ধূপগুড়িতেও পরীক্ষার্থীদের ব্যাগ রাখা নিয়ে সমস্যা হয়। সকাল সকাল পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন পরীক্ষা দিতে আসা অনেকে। বাইরে থেকে আসা পরীক্ষার্থীরা বেশিরভাগই সঙ্গে ব্যাগ নিয়ে এসেছেন। সেই ব্যাগে কেউ এনেছেন খাবার, কেউ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। কিন্তু সেই ব্যাগ পরীক্ষাকেন্দ্রে কোথাও রাখার ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ। পরীক্ষার্থীদের যে কারণে পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে একটি দোকানে টাকার বিনিময়ে ব্যাগ রাখতে হয়েছে। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন তাঁরা। পরীক্ষাকেন্দ্রে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন।
টেটের জন্য হুগলি থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদ, রাজ্যের নানা জেলায় সকাল থেকে পরীক্ষার্থীদের ভিড় লক্ষ করা গিয়েছে। স্টেশনগুলিতে রবিবার সকালে বাড়তি ভিড় দেখা যায়। বহরমপুর শহরে টেটের জন্য ব্যাপক যানজট তৈরি হয়েছে।
ধূপগুড়িতে বিদ্যাশ্রম দিব্যজ্যোতি বিদ্যানিকেতন হাই স্কুলের বাইরে প্রায় ২০০ পরীক্ষার্থী লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ১১টার পরেও। বেসা ১১টায় পরীক্ষাকেন্দ্রের দরজা বন্ধ করে দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা যায়নি।
টেটে একই সমস্যার মুখে পড়েছেন কলকাতার পরীক্ষার্থীরাও। হিন্দু, হেয়ার, যাদবপুর বিদ্যাপীঠের মতো একাধিক স্কুলে পরীক্ষার্থীরা ব্যাগ রাখার জায়গা না পেয়ে হয়রানির শিকার হন বলে অভিযোগ। স্কুল বা বোর্ডের তরফে কারও ব্যাগের কোনও দায়িত্ব নেওয়া হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে। রবিবার সকাল সকাল ব্যাগ নিয়ে সমস্যা দেখা দেয় হিন্দু, হেয়ার, যাদবপুর বিদ্যাপীঠ, চেতলা বয়েজ, টাকি বয়েজ, টাকি গার্লস-সহ প্রায় সব পরীক্ষাকেন্দ্রেই। অভিযোগ, কোথাও কোথাও রাস্তার দোকানে পরীক্ষার্থীরা ব্যাগ রাখার সাময়িক ব্যবস্থা করে নেন। কোথাও স্কুলের মূল ফটকের বাইরে পুলিশের সামনে ব্যাগ রেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকেন প্রার্থীরা।
কলকাতার টাকি বয়েজ স্কুলে সময়ের পরেও কয়েক জন পরীক্ষার্থী এলে তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। পর্ষদের তরফে বেলা ১১টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোথাও কোথাও তার পরেও পরীক্ষার্থীরা এসে পৌঁছন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে টেটের পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের সময়সীমা ১১.৪৫ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
টেটের প্রশ্নপত্র থানা থেকে কড়া পুলিশি প্রহরায় পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা দেখা দেয় বর্ধমানের ডঃ ভূপেন্দ্রনাথ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে। সেখানে প্রশ্নপত্রের বাক্স কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে তোলার পর গাড়ি খারাপ হয়ে যায়। তার পর পুলিশের তরফে অন্য একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
বর্ধমানের কলেজে আবার চোখে পড়ে বেসরকারি সংস্থার তৎপরতা। পর্ষদ নিযুক্ত এই সংস্থার কর্মীরা পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার মুখে পরীক্ষার্থীদের ছবি,অ্যাডমিট কার্ড-সহ প্রয়োজনীয় নথি যাচাই করছে। বায়োমেট্রিক পরীক্ষার দায়িত্বেও আছেন তাঁরা।
টেটকে কেন্দ্র করে জেলায় জেলায় নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে পরীক্ষা চলাকালীন ইন্টারনেট পরিষেবা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
রাজ্যজুড়ে মোট ১ হাজার ৪৬০টি কেন্দ্রে টেটের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। পরীক্ষার্থীদের বায়োমেট্রিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকাল ১১টার মধ্যে সমস্ত পরীক্ষাকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এই প্রথম টেটের ওএমআর শিটের কার্বন কপি বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষার সময় নজরদারির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।