ভারতবর্ষ তখন আঁধারে ডুবে; ঔপনিবেশিক শাসন; চারিদিকে প্রবল পরাক্রমী পীড়ন নীতি। পরাধীনতার বিপ্রতীপে তাই বাধ্য হয়ে শুরু হয়েছে সহিংস আন্দোলন। জন্ম নিয়েছেন এক একজন মৃত্যুঞ্জয়ী বীর। তীব্র প্রত্যয় তাঁদের “আঁধার রজনী ভয় কি জননী/ আমরা বাঁচাব এ-মহাদেশ”। উপস্থিত হলেন অকুতোভয় আরও দুই তরুণ; বা বলা যেতে পারে কৈশোরের শেষ ধাপ। উপলব্ধি “সিংহবাহিনী জননী মোদের/ দেব সেনাপতি তনয় যার।” সত্যিই তো! যে ঐশী-ইঙ্গিতে চলে সৃষ্টি, যার ইচ্ছেতে স্থিতি ও লয়, তাঁর সন্তান হয়ে আমরা ভয় পাবো কেন? সাহস এজন্যই যে “তাহারি তো ছেলে আমরা সকলে/ মোদের কণ্ঠে মায়ের জয়।” মা বলতে দেশমাতা, ভারতমাতা। সেই মায়ের পরাধীনতায় যাদের অহরহ অস্বস্তি, তাদের একজন হলেন অগ্নিযুগের বিপ্লবী, স্বাধীনতা আন্দোলনের এক তরতাজা তরুণ প্রফুল্ল চাকী (১০ ডিসেম্বর ১৮৮৮ – ২ মে ১৯০৮)। আজ তাঁর জন্মদিন। মুজফফরপুর অভিযানে তিনি বিপ্লবী ক্ষুদিরামের সঙ্গী ছিলেন। দুই কিশোর মারার পরিকল্পনা করলেন কিংসফোর্ড-কে, যিনি প্রেসিডেন্সি বিচারালয়ে ছিলেন পক্ষপাত-দুষ্ট এক মুখ্য হাকিম। যিনি বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে যাবতীয় মামলায় অতি সক্রিয় হয়ে কঠোর সাজা শোনাতেন। বিচারক বলা যায় না তাকে; বলতে হয় হাকিম-রূপী এক কসাই। পরিকল্পক হলেন প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসু; যাবতীয় প্রস্তুতিও নিলেন। কিন্তু ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যাবেলা কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়ে ভুলবশত দুইজন ব্রিটিশ মহিলাকে হত্যা করে ফেলেন তাঁরা। ঘটনার পর পালিয়ে গেলেও রেহাই পান নি। গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা বুঝে প্রফুল্ল আত্মহত্যা করলেন। কোনো কোনো ঐতিহাসিক অবশ্য বলেন, পুলিশ তাঁকে নৃশংসভাবে খুন করে দিয়েছে; আত্মহত্যার ঘটনা একেবারেই সাজানো। এদিকে ক্ষুদিরামকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। বিচারে ফাঁসির আদেশ দিল আদালত। তবুও মৃত্যু তাঁদের অমরত্বকে চাপা দিতে পারলো না। দেশপ্রেমের এই তীব্র তারুণ্য ভারতবাসীর মনে আজও প্রেরণা, ভারতমাতার পুজোয় আজও অনল-অগ্নিকুণ্ড।
অরিত্র ঘোষ দস্তিদার এবং কল্যাণ চক্রবর্তী।