বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (০৯/১২/১৮৮০ — ০৯/১২/১৯৩২)

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (০৯/১২/১৮৮০ — ০৯/১২/১৯৩২) ছিলেন এমন একজন বাঙালি চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক, সমাজ সংস্কারক এবং প্রগতির বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব যিনি নারীকে অলঙ্কার পরিত্যাগ করে নারী-স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ডাক দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “এই যে আমাদের অলঙ্কারগুলি– এগুলি দাসত্বের নিদর্শন। … কারাগারে বন্দিগণ লৌহনির্ম্মিত বেড়ী পরে, আমরা স্বর্ণ রৌপ্যের বেড়ী পরিয়া বলি ‘মল’ পরিয়াছি। উহাদের হাতকড়ী লৌহনির্ম্মিত, আমাদের হাতকড়ী স্বর্ণ বা রৌপ্যনির্ম্মিত ‘চুড়ি!’… অশ্ব হস্তী প্রভৃতি পশু লৌহশৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকে, সেইরূপ আমরা স্বর্ণশৃঙ্খলে কণ্ঠ শোভিত করিয়া বলি ‘হার’ পরিয়াছি!” আমরা তাঁকে বাংলা ভাষার পক্ষেও সরব-সওয়াল হতে দেখি। তিনি নারীকে আর্থ-রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের পক্ষে সওয়াল করছেন, “আমরা লেডীকেরাণী হইতে আরম্ভ করিয়া লেডীমাজিস্ট্রেট, লেডীব্যারিস্টার, লেডীজজ — সবই হইব!… উপার্জ্জন করিব না কেন?… যে পরিশ্রম আমরা “স্বামী”র গৃহকার্য্যে ব্যয় করি, সেই পরিশ্রম দ্বারা কি স্বাধীন ব্যবসায় করিতে পারিব না?” যুগের মাপকাঠিতে দাঁড়িয়ে এমন কথা বলার মতো মুসলিম নারী সেই সময় ছিলেন না বললেই চলে। ১৯১১ সালে তিনি কলকাতার বুকে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন ‘Sakhawat Memorial Govt. Girls’ High School’ যা একটি উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানরূপে বাঙালির কাছে পরিগণিত। নারীশিক্ষা ও সচেতনতাই যে একমাত্র নারীর মর্যাদা এনে দিতে পারে, তার অন্যতম পথ প্রদর্শক ছিলেন তিনি। তাঁর জন্ম ও প্রয়াণ যুগপৎ-দিবসে তাঁকে অন্তরের শ্রদ্ধা জানাই। বাংলাদেশ ডাকবিভাগ তাঁর স্মরণে দুটি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছিল, তা প্রস্তুত পোস্টের সঙ্গে পরিবেশিত হল।
— অরিত্র ঘোষ দস্তিদার এবং কল্যাণ চক্রবর্তী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.