শ্রদ্ধা ওয়ালকর খুনে অভিযুক্ত তাঁর প্রেমিক আফতাব আমিন পুনাওয়ালাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হোক। আফতাবের পরিবারের সদস্যদেরও তদন্তের আওতায় আনা উচিত। শুক্রবার এমনই দাবি করলেন শ্রদ্ধার বাবা বিকাশ মদন ওয়ালকর। বিকাশের আক্ষেপ, পুলিশ আরও আগে তৎপর হলে তাঁর মেয়ে বেঁচে থাকত।
শ্রদ্ধা হত্যাকাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর এই প্রথম সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন বিকাশ। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘এই হত্যাকাণ্ডের যথাযথ তদন্ত করে দেখা উচিত। এবং ওঁকে (আফতাবকে) ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত। ওঁর পরিবারের লোকেদেরও শাস্তি পাওয়া দরকার।’’
বিকাশের দাবি, গোড়ায় মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ জানালেও পুলিশ তৎপর হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘মহারাষ্ট্রের মানিকপুর এবং বসই থানার অসহযোগিতায় আমাকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। সময় মতো পুলিশি পদক্ষেপ করা হলে আমার মেয়েটা হয়তো বেঁচে থাকত। আমার মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে, তা যেন অন্য কারও সঙ্গে না হয়।’’
শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকের আগে মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিকাশ। এই মামলায় দোষীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে বিকাশকে আশ্বাস দিয়েছেন ফডণবীস। যদিও বিকাশের দাবি, ‘‘তুলিঞ্জ, বসই এবং নালাসোপারা থানার পুলিশ তদন্তে দেরি করছে। এখন অবশ্য দিল্লি এবং বসই পুলিশ যথাযথ তদন্ত করছে।’’
১৮ মে দক্ষিণ দিল্লির মেহরৌলি এলাকার ছতরপুরের একটি ভাড়াটে ফ্ল্যাটে ২৭ বছরের শ্রদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ উঠেছে তাঁর লিভ-ইন সঙ্গী আফতাবের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, খুনের পর শ্রদ্ধার দেহ ৩৫ টুকরো করেন তিনি। এর পর সেই টুকরোগুলি ভরে রাখার জন্য একটি ৩০০ লিটার ফ্রিজ়ও কেনেন তিনি। খুনের পর ১৮ রাত ধরে ছতরপুর পাহাড়ির জঙ্গলে ওই টুকরোগুলি ফেলতে যেতেন আফতাব। এ সবই আফতাব তদন্তকারীদের কাছে স্বীকার করেছেন বলে দাবি। যদিও এই স্বীকারোক্তির পক্ষে প্রমাণ জোগাড় করছেন তদন্তকারীরা।
শ্রদ্ধাকে খুনের অভিযোগে ১২ নভেম্বর আফতাবকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। প্রথমে ৫ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছিল আফতাবকে। ১৭ নভেম্বর তা বাড়িয়ে আরও ৫ দিন করে আদালত। এর পর থেকে বিচারকের নির্দেশে তাঁকে জেল হেফাজতে রাখা হয়েছে। শুক্রবার আরও ১৪ দিনের জন্য আফতাবের জেল হেফাজতের মেয়াদ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ইতিমধ্যেই আফতাবের পলিগ্রাফ এবং নার্কো অ্যানাসিলিস পরীক্ষা করানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
শ্রদ্ধার সঙ্গে একত্রবাসের সময় তাঁকে মারধরের অভিযোগও উঠেছে আফতাবের বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে পুলিশের কাছে আফতাবের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেন শ্রদ্ধা। অভিযোগপত্রে শ্রদ্ধার দাবি ছিল, মারধরের কথা আফতাবের পরিবারের লোকজন জানতেন। তবে পরে স্থানীয় থানা জানিয়েছিল যে, মা-বাবার সঙ্গে কথাবার্তার পর শ্রদ্ধা লিখিত ভাবে থানায় জানান যে, তাঁদের মধ্যে আর ঝগড়ঝাঁটি হচ্ছে না।
তদন্তকারীদের দাবি, একটি চিঠিতে শ্রদ্ধা লিখেছিলেন, ‘‘আজ আমাকে গলা টিপে মারার চেষ্টা করা করেছে ও (আফতাব)। আমাকে ভয় দেখায়, ব্ল্যাকমেল করে যে আমাকে মেরে ফেলবে। টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে দেবে। ছ’মাস হয়ে গেল আমাকে মারধর করছে। তবে পুলিশের কাছে যাওয়ার সাহস নেই।’’
গত বছরের মাঝামাঝি শ্রদ্ধার সঙ্গে শেষ বার কথা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বিকাশ। এ ছাড়া, আফতাবের সঙ্গে গত সেপ্টেম্বরে তাঁর ফোনে কথা হয়েছিল। সে সময় শ্রদ্ধার মোবাইল বন্ধ আসছে বলে জানিয়েছিলেন তাঁর এক বন্ধু। বিকাশ বলেন, ‘‘ওই সময় আফতাবকে বলেছিলাম, ‘শ্রদ্ধা তোমার সঙ্গে আড়াই-তিন বছর রয়েছে। সে যদি কোথাও চলে যায়, সেটা আমাকে জানানো কি তোমার দায়িত্ব নয়?’ ও বলেছিল, শ্রদ্ধা কোথায় চলে গিয়েছে, তা জানে না।’’