দেশের মানুষের আমোদ উপভোগের এখন আর কোনও সীমা পরিসীমা থাকছে না। বিনোদনের ভরপুর পসরা সাজিয়ে বামপন্থীরা নিত্য নতুন হাজির হচ্ছেন ভারতবর্ষের মানুষের সামনে। আপাতত দুটি মজার কাহিনি বলা যাক। প্রথমত, চন্দ্রযান ল্যান্ডার বিক্রমের চাঁদের মাটি ছোঁয়ার দু’ কিলোমিটার আগে ইসরোর সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর বামপন্থীরা যেভাবে বিজয়োল্লাসে মেতেছিল, পাকিস্তান-বাংলাদেশও লজ্জা পাবে। দ্বিতীয়ত, জে এন ইউ-তে টুকরে গ্যাঙের জয় ও সেইসূত্রে ‘ভারত তেরি টুকরে হোঙ্গে’র অপরিণত স্বপ্ন চাগিয়ে ওঠা। এর ফলে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে যে সর্বাত্মক ভাড়ামির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে ভারতবাসী নিষ্কলুষ বিনোদন উপভোগের সুযোগ পাচ্ছেন।
রগড়টা অন্য জায়গায়। জে এন ইউ-এর সভাপতি পদে নির্বাচিত প্রার্থীর নাম ঐশী ঘোষ। সাংবাদিক সম্মেলনে তাগাবাঁধা হাতে তাকে‘বিপ্লব’করতে দেখা গিয়েছে। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো হাসাহাসি শুরু হয়েছে যে দেশে বামপন্থার একী হাল! একে নিরীশ্বরবাদের মুখোশ, তার ওপরে মুসলিম লিগের দোসর, এরপর বিজ্ঞান টিজ্ঞান, যুক্তিবাদ টুক্তিবাদের দোহাই-অজুহাত উড়িয়ে কিনা হিন্দুধর্মের ‘কুসংস্কার’ তাগাবাঁধা, তাবিজ-কবচও কিছু লুকানো আছে কিনা ভাগবানই জানেন, অন্য সময় হলে আগুনখেকো বিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর কমিউনিস্টরা এত অনাচার যেন নিতনা। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি বিচারে তারা মানিয়ে নিতে জানেন। এমনিতে এখন বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর যা হালত তাতে কদিন বাদে নির্বাচন কমিশন এদের দেউলিয়া ঘোষণা করে দিতে পারে, তারপর যাদুঘরে যাওয়া ছাড়া অন্যত্র গত্যন্তর নেই।
তবে কিনা দল মরলেও আদর্শ মরে না, বামপন্থী টুকরো ভারতকে টুকরো করতে জোটবদ্ধ হয়ে জে এন ইউ-এর মাধ্যমে ফের তা প্রমাণ করলেন। পাঠকের অবগতির জন্যবলি, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। বামপন্থীদের সবসময় দাপট ছিল ঠিকই, কিন্তু পরিস্থিতির বিচারে পার্থক্য আছে। আগে দুটি বামপন্থী ছাত্র-সংগঠন পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতো। একটি নকশালপন্থী আইসা, অন্যটি এস এফ আই, সিপিএমের ছাত্র-সংগঠন। এছাড়া সিপিআই-এর এ আই এস এফ, এস ইউ সি-র এ আই ডি এস ও এরাও নানান পারমুটেশন-কম্বিনেশনে ছাত্র-সংসদ নির্বাচনে মাঠে নেমে পড়ত। স্বাধীনতার পরে চীন যুদ্ধ ও আর তারও পরে জরুরি অবস্থাকে কেন্দ্র করে এদেশের কমিউনিস্টরা হরেক প্রজাতিতে বিভক্ত হয়, মূল ভাগ দুটি একদল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় থেকে বিপ্লব করতে অর্থাৎ দেশের পরিকাঠামোর সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অবাধে লুঠপাট চালাবে। এ রাজ্যে ৩৪ বছরের ক্ষমতাসীনেরা তার প্রমাণ।
অন্যদিকে আরেক দল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বাইরে থেকে দেশ লুঠ করবে অর্থাৎ খুন-জখম ইত্যাদি অগণতান্ত্রিক উপায়ে দেশে ক্ষমতা কায়েম করবে। যাইহোক, ছাত্র রাজনীতিতে এই দুই গোষ্ঠীর সদ্ভাব তেমন ছিল না। বিশেষত অগণতান্ত্রিক নকশালরা গণতান্ত্রিক বাম-গোষ্ঠীকে শ্রেণীশত্রু বলেই । মনে করতো। জে এন ইউ-এর এই পরস্পর বিরোধী বাম গোষ্ঠীর চালচিত্রটা বদলে যেতে থাকে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর। স্বাধীনতার আগে পরে মানুষকে ভুল বোঝানোর, ও নেহর গোষ্ঠীর যে পৃষ্ঠপোষকতা তারা লাভ করেছিল তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গণতান্ত্রিক-অগণতান্ত্রিক দুই প্রজাতির বামপন্থীরাই প্রমাদ গোনে। ভারতের মানুষ কুলোর বাতাস দিয়ে এই দেশদ্রোহীদের তাড়িয়েছেন। তবু ‘দল মরলেও আদর্শ মরে ’ গোছের তত্ত্ব টেকাতে এস এফ আই, ডিএস এফ, আইসা, এ আই এস এফ জোট বেঁধে এখন লড়াই করে প্রধান প্রতিপক্ষ অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের বিরুদ্ধে। এবিভিপি-কে যেনতেনপ্রকারেণ জে এন। ইউতে ঠেকাতে তাদের হবেই, কারণ সারা দেশে এবিভিপির জয়জয়কার, এমনকী বামপন্থীদের শিবরাত্রির সলতে কেরলেও, তারা জে এন ইউ-তে জিতলে আর টুকরে গোষ্ঠীর আদর্শ থাকে কোথায় ? চীন-পাকিস্তানও বা অক্সিজেন পায় কোথায়? তাই শ্রেণীশত্রুরা আপাতত এক হয়েছে। এদের কষ্টার্জিত জয় যা দেখে বামপন্থীদের প্রেমে হাবুডুবু ভাব, জয়ী সভানেত্রীর তাবিজ-কবচ নিয়ে কোনও কথা না বলার সনির্বন্ধ অনুরোধ, পারলে এই মুহূর্তে মোদী-অমিত শাহকে পাল্টে কারাট-ইয়েচুরিকে সাউথ ব্লকে বসিয়ে দেয়, এসব দেখে মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসবেন না কাঁদবেন, রাগবেন না চটবেন তাই ঠিক করে উঠতে পারছেন না। নির্মল আনন্দ আরও বাড়িয়েছে যে ছাত্র নির্বাচনে দেশদ্রোহীদের জয়ে বামপন্থীদের এত উচ্ছ্বাস তার প্রভাব জে এন ইউ ক্যাম্পাসের বাইরের রাস্তা নিউ মেহরউলি রোডেও পড়বে না, অথচ বামপন্থীরা তাবিচ-কবচ পড়া ঐশীকে এখনই প্রধানমন্ত্রী করে দেয়, কানহাইয়াকে রাষ্ট্রপতি।
এদিকে আবার এতদিন চাঁদ কেন, পোড়া রুটি দাও’মার্কা-বাম আদিখ্যেতায় কান পাতায় দায় হচ্ছিল। চঁাদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম দেশ হিসেবে ভারতের অভিযানে তাদের আপত্তি কোথায়, সেটা অ্যাদ্দিনে ধরা পড়ল। বোঝা গেল বিজ্ঞানে, মহাকাশচারী অভিযান ভারতের এমন সম্মান বামপন্থীদের হজম হবার নয়, তাদের পিতৃপুরুষ চীন পারেনি কিনা, তায় আবার হংকং-কেস খেয়ে বসে আছে। ফলে ভারতের চন্দ্র অভিযানের আপাত ব্যর্থতায় তাদের দাঁত নখ বেরোবেই। ভারতবাসীর এখন দায় শুধু এই দেশদ্রোহীদের প্রকৃত স্বরূপ চিনে নেওয়া। এবং এদের পৃষ্ঠপোষক নেহরুপন্থী সস্কৃতিকে ঝেড়ে ফেলা।
বিশ্বামিত্র-র কলম
2019-09-15