গত ৫ ডিসেম্বর ২০২২ সোমবার মিনার্ভা থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হল সুপ্রতীম সরকারের কাহিনী অবলম্বনে সংস্কার ভারতী রেপার্টরী নাটক ‘ নাম সুশীল ’ । নাট্যরূপ -তপন গাঙ্গুলী , নির্দেশনা- সুপ্রীতি ভদ্র ।

স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে রচিত এই নাটকে এমন একজন দেশপ্রেমিক স্বাধীনতা সংগ্রামীর কথা ব্যাক্ত হয়েছে যাঁর কথা এতদিন আমাদের তেমন ভাবে জানা ছিল না । পরাধীনতার নাগপাশে বন্দী দেশমাতার শৃঙ্খল মোচনে অত্যাচারী ইংরেজ শাসকের বন্দুকের মুখে বুক চিতিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন শত শত যুবক যুবতী । ব্রিটিশের জেলখানায় নিদারুণ অত্যাচার হাসিমুখে সহ্য করেছেন শত শত বিপ্লবী । যাঁদের মধ্যে অনেকের কথা আমাদের চেনা জানার মধ্যে থাকলেও অনেকেই অচেনার গণ্ডীর মধ্যেই রয়ে গিয়েছেন । তেমনই একজন বিপ্লবী … সুশীল সেন ( সেনগুপ্ত ) ।
তীক্ষ্ণ মেধার সুশীল সেন ১৮৯১ সালে শিলং এ জন্ম গ্রহণ করেন । তাঁর পিতা কৈলাশ চন্দ্র সেন ছিলেন শিলং এর আইজি কারা বিভাগের প্রধান করণিক । শৈশব থেকে কৈশোরে পা রাখেন দেশব্যাপী ব্রিটিশ বিরোধিতার আবহে । ১৯০৫ সালে তিনি সিলেটের জ্ঞানেন্দ্রনাথ ধরের গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন । ১৯০৬ সালে সিলেটে অনুষ্ঠিত সুরমা ভ্যালি পলিটিক্যাল কনফারেন্সে বিপিনচন্দ্র পালের বক্তৃতা শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি কলকাতায় চলে আসেন । ভর্তি হন ন্যাশানাল স্কুলে এবং সেই সঙ্গে বিপ্লবী বিপিন বিহারী গাঙ্গুলীর কাছে জিমন্যাস্টিকের পাঠ নেওয়া শুরু করেন । মহান বিপ্লবী বারীন ঘোষ , অরবিন্দ ঘোষ প্রমুখেরা ঠিক করেন , অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যা করার জন্য সুশীল সেন এবং প্রফুল্ল চাকী কে পাঠাবেন বিহারের মুজঃফরপুরে । কিন্তু হঠাৎই সুশীল সেনের পিতা মরণাপন্ন হওয়ায় বারীন ঘোষ , অরবিন্দ ঘোষ তাঁকে জোর করে পাঠিয়েদেন সিলেটে ।


পরবর্তী জীবনে চব্বিশ বছরের যুবক সুশীল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে আরও সক্রিয় ভাবে জড়িয়ে পড়েন বাঘাযতীনের সঙ্গে । সন ১৯১৫ নদীয়ার এক গোপন সশস্ত্র অভিযান চালাতে গিয়ে ব্রিটিশ বাহিনীর গুলীতে আহত হয়ে নিজেই মৃত্যুবরণ করেন সুশীল সেন । ‘ নাম সুশীল ’ নাটকে সুশীল সেনের এই আত্মত্যাগের কথা সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন সংস্কার ভারতী রেপার্টারীর শিল্পীরা । নাম ভূমিকায় পঙ্কজ ভৌমিকের অভিনয় ছিল অনবদ্য এই সঙ্গে কিংসফোর্ডের চরিত্র চিত্রনে প্রবীর মণ্ডল এবং পুলিশ অফিসার প্রবীর ঘোষের অভিনয় অত্যাচারী ইংরেজ শাসকের কথা আমাদের নতুন করে মনে করিয়ে দিল । এছাড়া বারীন ঘোষের ভূমিকায় শোভন রায়চৌধুরী , হেমচন্দ্র — সঞ্জয় দাস , অরবিন্দ — মদনমোহন মল্লিক , প্রফুল্ল চাকীর ভূমিকায় বিভাস নস্করের অভিনয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । সামগ্রীক ভাবে নাটকের সকল চরিত্রেরই চরিত্র চিত্রন ছিল যথাযথ । এখানে উল্লেখযোগ্য নাটকের শুরুতে দর্শকমন্ডলীর মধ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উপর পুলিশের লাঠিচার্যের দৃশ্যের অবতারণা করে পরিচালক সুপ্রীতি ভদ্র চমক দিয়েছেন এছাড়াও বেশ কিছু নাট্য মুহূর্ত খুব ভালো লাগলো , যেমন আদালত চত্তরের দৃশ্যপট বা সব শেষে সুশীলের মৃত্যুদৃশ্য ছিল খুব মর্মস্পর্শী । জয়ন্ত মুখার্জীর আলোর দৃশ্যায়ণ বেশ ভালো লাগলো । সামগ্রীক ব্যবস্থাপনা ছিল যথাযথ । এটাই ছিল এই নাটকের প্রথম মঞ্চায়ণ ।

কাহিনী : সুপ্রতীম সরকার ,
নাট্যরূপ : তপন গাঙ্গুলী
নাট্য নির্দেশনা : সুপ্রীতি ভদ্র

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.