কাছাড় জেলার কালাইনে এক ইটভাটার চুল্লিতে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ঘটেছে। ঘটনাস্থলে ৫ বছরের শিশু সহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। পরে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরও তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন। মর্মান্তিক এই ঘটনায় কম করেও কুড়িজন গুরতর জখম হয়েছেন। নিহত শিশুর নাম রাহাত ফারহানা (শামিম আহমেদ)। বয়স ৫ বছর। অপর মৃতদের আবু সুফিয়ান (২৮), রাহাত ফারহান, সুনীল পাসোয়ান (৪৫) এবং মেদনি পাসোয়ান (৪৬) বলে শনাক্ত করা হয়েছে। ঘটনা আজ শুক্রবার বিকাল সাড়ে চারটা নাগাদ সংঘটিত হয়েছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা কালাইন এলাকাজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্যের পাশাপাশি শোকাকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইটভাটার ভেতরে বহু শ্রমিক আবদ্ধ হয়ে পড়েন। পুলিশ, সিআরপিএফ, দমকল বাহিনীর জওয়ানরা তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ায় তাঁদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
জানা গেছে, ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া কালাইনের লক্ষ্মীপুর দ্বিতীয় খণ্ডে এসএবিআই নামক ইটভাটায় প্রতি বছরের মতো এবার ইট তৈরির কাজ শুরু হয়। মাটি পোড়ানোর শুরুতে শিন্নির (ধর্মীয় পূজানুষ্ঠান) আয়োজন করা হয়েছিল। যথারীতি চিমনির চুল্লিতে প্রচুর পরিমাণে কয়লা-জ্বালানি কাঠে আগুন জ্বালিয়ে চিমনির উত্তাপ বাড়ানোর কাজ চলে। কিন্তু আচমকা সাড়ে চারটা নাগাদ চুল্লিতে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ওঠে ইটভাটা চত্ত্বর।
এ বছরের সূচনালগ্নে চিমনির চুল্লিতে ভয়ঙ্করভাবে বিস্ফোরণের ফলে দুর্ঘটনাটি সংঘটিত হয়। বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজে কেঁপে ওঠে সমগ্র এলাকা। মুহূর্তের মধ্যে কালাইন থেকে অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর দুটো গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয় দমকল বাহিনীকে। দমকলের গাড়িতে সামান্য সময়ের মধ্যেই জল ফুরিয়ে যায়। আকস্মিক এই ঘটনায় অকুস্থলে দু-জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া কুড়ি জনের অধিক শ্রমিক সহ উপস্থিত মানুষ মারাত্মকভাবে জখম হয়েছেন। এই খবর লেখা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলছে। ইটভাটার আরও কয়েকজন আবদ্ধ রয়েছেন বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
মৃত ব্যক্তি ভৈরবপুর মসজিদের ইমাম (মোল্লা) হিসেবে কর্মরত আবু সুফিয়ানের বাড়ি স্থানীয় বুরুঙ্গা গেণ্ডামারায়। অপরজন পাঁচ বছরের নাবালক শিশু রাহাত ফারহানা (শামিমা আহমেদ)-এর বাড়ি কালাইন তারাপুরে বলে খবর পাওয়া গেছে। ভৈরবপুর মসজিদের ইমামের মৃত্যুতে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন গ্রামের বহুজন।
ঠিক কী কারণে ভয়ানক বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। অভিশপ্ত ইটভাটার মালিকের নাম আলতাফ হুসেন বড়ভুইয়াঁ। তাঁর বাড়ি পার্শ্ববর্তী ভৈরবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনস্থ আজোমারা গ্রামে। বিস্ফোরণের ঘটনায় ইটভাটার চিমনির শিকড় (মাটির তৈরি দেওয়াল) ভেঙে গেছে।
জখম ব্যক্তিদের তজমুল আলি (৬৩), সাহাদুল ইসলাম (৪০)। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় গুরতর জখমদের মধ্যে আনুমানিক ৪০, ১০ এবং ৮ বছরের তিন জন রয়েছেন। কালাইন এফআরইউ হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. মৈত্রেয়ী সুর ভৌমিক জানান, দু-জনকে মৃত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং ১০ জনের অবস্থা সংকটজনক থাকায় তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।