শুক্রবারই নতুন পে কমিশনের কথা জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, কমিশনের সব সুপারিশ মেনে নেবে সরকার। কী হারে বেতন বাড়বে তাও বলেছেন। কিন্তু বলেননি স্টেট ট্রাইব্যুনালের রায় মানবেন কিনা। বলেননি রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ নিয়ে কী ভাবনা সরকারের। বরং, বলেছেন– আদালতের বিষয়টি তিনি দেখে নেবেন।
এখানেই যত চিন্তা। দীর্ঘ মামলার শেষ প্রথমে কলকাতা হাইকোর্ট ও পরে স্যাট রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের দাবি মেনে নিয়েছে। জানিয়েছে, ডিএ কর্মচারীদের অধিকার, কোনও দয়ার দান নয়। মুখ্যমন্ত্রী আদালতের বিষয়টি দেখে নেবেন বলে কি ফের মামলার পথে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন!
এখন রাজ্য সরকার ১২৫ শতাংশ ডিএ দেয়। নতুন বেতন কাঠামোয় বেসিকের সঙ্গে মিশে যাবে সেই ডিএ। আপাতত আলাদা করে কোনও ডিএ থাকছে না বেতনে। তবে নতুন করে ঘোষণা করতেই পারে রাজ্য সরকার। ফি বছর ১ জানুয়ারি থেকে নতুন ডিএ লাগু হয়। আগামী ১ জানুয়ারি নতুন পে কমিশন চালু হওয়ার কথা। কর্মীদের আশঙ্কা সেই সঙ্গে নতুন ডিএ আর রাজ্য সরকার ঘোষণা করবে না। অনেকই মনে করছেন, এটা যেন ‘নাকের বদলে নরুন পেলাম’ হয়ে গেল। এমন সময়ে নয়া বেতন কমিশন ঘোষণা হচ্ছে যাতে নিয়মমাফিক প্রাপ্য ডিএ থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।
এই সব চিন্তাতেই নয়া বেতন কাঠামো প্রাপ্তির উৎসবের আবহেও উঁকি দিচ্ছে শঙ্কার মেঘ। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্যাট। কিন্তু, রাজ্য সরকার স্যাটের এই নির্দেশ মেনে নেবে তো? নাকি ফের আইনি লড়াইয়ের পথে গিয়ে দীর্ঘসূত্রিতায় মহার্ঘ ভাতা আটকে দেবে সরকার? আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিচ্ছে না কর্মী সংগঠনগুলি। বিরোধী সংগঠনগুলি খোলাখুলিই বলছে এ বিষয়ে। আর শঙ্কার কথা মাথায় রেখেই শাসক দলের কর্মী সংগঠনের নেতারা বলছেন, স্যাটের রায় যাতে মেনে নেওয়া হয় সেই পরামর্শ দেওয়া হবে।
স্যাট তার রায়ে বলেছিল, চলতি বেতন কমিশনের কার্যকাল শুরু হওয়ার আগের ১০ বছরে অনিয়মিত ভাবে ডিএ দেওয়ার কারণে রাজ্য সরকারি কর্মীরা যে টাকা কম পেয়েছেন, বকেয়া হিসেবে ধরে সেই টাকা মিটিয়ে দিতে হবে। কিন্তু এখন যে ভাবে বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে নেওয়ার ঘোষণা করা হল তাতে আশঙ্কা বাড়ছে। কেউ কেউ যা বেড়েছে বেড়েছে বলে খুশি থাকতে চাইলেও অধিকাংশ রাজ্য সরকারি কর্মচারীর মনে ক্ষোভ রয়েই গেল।
সব মিলিয়ে বেতন কমিশন মেলার পরেও পুরোপুরি স্বস্তিতে নেই সরকারি কর্মচারী মহল। কর্মীদের আশঙ্কা, সহজে রাজ্য সরকার স্যাটের রায় মেনে নেবে না। হাইকোর্টে এবং স্যাটে শুনানি চলাকালীন যে ভাবে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার দাবির বিরোধিতা করেছে রাজ্য সরকার, সে কথা কারও অজানা নয়। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া এবং ১০ বছরের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ সেই সরকার মেনে নেবে কি? প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে কর্মী মহলে। বেতন কমিশন চালু করতে গিয়ে যে অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা রাজ্য সরকারের উপরে এল, তার পরে বকেয়া ডিএ-কে অনেকেই দিবাস্বপ্ন মনে করছেন।