গোল করে বিশ্বকাপে রেকর্ড, ম্যাচেও জয় পর্তুগালের, তবু মন কি ভরাতে পারলেন রোনাল্ডো?

তিনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। দেশ বা ক্লাব, যে কারও হয়েই মাঠে নামুন না কেন, ভক্তরা তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকে গোলের জন্য। এই বাঁ প্রান্ত ধরে একের পর এক ড্রিবল করে গোলের দিকে এগিয়ে যাবেন, বা কর্নারের সময় অন্যদের থেকে বেশি উঁচুতে উঠে হেডে গোল করবেন, সেটা দেখতেই অভ্যস্ত রোনাল্ডো ভক্তরা। কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে গোল করলেন রোনাল্ডো। কিন্তু সেই দৌড় দেখা গেল না। গোলের দু’টি সহজ সুযোগ নষ্ট করলেন। তাই গোল করলেও মন কি ভরাতে পারলেন সিআর৭? প্রশ্ন উঠছে।

ঘানার বিরুদ্ধে প্রথম ১০ মিনিট সে ভাবে দেখা যায়নি রোনাল্ডোকে। আসলে এখন তিনি আর উইংয়ে খেলেন না। খেলেন প্রধান স্ট্রাইকার হিসাবে। তাই বক্সের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করেন। এই ম্যাচেও সেটা দেখা গেল। পর্তুগাল শুরুতে সে রকম সুযোগ তৈরি করতে না পারায় রোনাল্ডোকেও দেখা যায়নি। ১০ মিনিটের মাথায় প্রথম সুযোগ পান রোনাল্ডো। গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি সিআর৭। বক্সের বাইরে বলের দখল হাতছাড়া করেন ঘানার ডিফেন্ডার কুডুস। ব্রুনো ফার্নান্ডেজ বলা বাড়ান ফাঁকায় থাকা রোনাল্ডোর উদ্দেশে। মধ্যে ঢুকে গোলরক্ষকের উপর দিয়ে মারার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু পারেননি। দু’মিনিট পরে আবার গোল করার সুযোগ পান রোনাল্ডো। এ বার হেডে। কিন্তু ঠিক জায়গায় বল লাগাতে পারেননি। তাই পোস্টের বাইরে দিয়ে বল বেরিয়ে যায়। কয়েক বছর আগে হলে ১০০ বারের মধ্যে ৯৯ বার সেই দু’টি গোল করতেন রোনাল্ডো। কিন্তু এখন পারছেন না।

প্রথমার্ধে হাতে গোনা কয়েক বার গোলের কাছে দেখা গেল তাঁকে। বার বার ঘানার ডিফেন্ডারদের কাছে আটকে যাচ্ছিলেন। আগে প্রতিপক্ষ তাঁকে জোনাল মার্কিংয়ে রাখলে গতি আর শিল্পের মেলবন্ধনে সেই মার্কিং ভেঙে বেরিয়ে যেতেন রোনাল্ডো। কিন্তু এখন পারছেন না। বয়সের ভারে গতি অনেকটা কমেছে। তাই বক্সের আশপাশেই থাকছেন।

৩১ মিনিটের মাথায় অবশ্য ঘানার গোলে বল জড়ান রোনাল্ডো। ঘানার বক্সে বল তোলেন ফেলিক্স। ঘানার অধিনায়ক জিকুর কাছ থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে গোল করেন রোনাল্ডো। কিন্তু ফাউলের কারণে সেই গোল বাতিল করেন রেফারি। গোল বাতিল হওয়ায় রোনাল্ডোকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল স্পষ্টতই হতাশ হয়েছেন।

দ্বিতীয়ার্ধে বক্সের মধ্যে রোনাল্ডোকে ফাউল করেন ঘানার সালিসু। পেনাল্টি পায় পর্তুগাল। গোল করতে ভুল করেননি রোনাল্ডো। কিন্তু পেনাল্টি নেওয়ার আগে তাঁকে চেহারা অন্য কথা বলছিল। আগে পেনাল্টি নেওয়ার সময় যে আত্মবিশ্বাস তাঁর চোখেমুখে দেখা যেত তা উধাও। উল্টে দেখে মনে হচ্ছিল, যথেষ্ট চাপে রয়েছেন তিনি। বার বার দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন। চোখ বন্ধ করছিলেন। গোলরক্ষকের ডান দিক দিয়ে টপ কর্নারে বল রাখেন তিনি। ঠিক দিকে ঝাঁপিয়েও ধরতে পারেননি ঘানার গোলরক্ষক।

দলের সবার সঙ্গে কি উষ্ণ সম্পর্ক নেই রোনাল্ডোর? পর্তুগালের দ্বিতীয় গোলের পরে ছবিটা ধরা পড়ল। হোয়াও ফেলিক্স গোল দেওয়ার পরে গোটা দল যখন উল্লাস করছে তখন খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে রোনাল্ডো। মুচকি হাসলেন। কিন্তু উল্লাসে গা ভাসালেন না। গোলের মূল কাণ্ডারি ব্রুনো ফের্নান্দেসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খুব একটা ভাল নয় বলে গুঞ্জন। মাঝমাঠে বল পেয়ে ফের্নান্দেস যখন ফেলিক্সের দিকে বল বাড়ান তখন বাঁ দিক দিয়ে উঠছিলেন রোনাল্ডো। তাঁকে বল না দেওয়াতেই কি একটু বিরক্ত হলেন সিআর৭।

গোটা ম্যাচে পেনাল্টিতে একটি গোল করা ছাড়া খুব বেশি কিছু করতে পারেননি রোনাল্ডো। গোলের পাসও বাড়াতে পারেননি। পুরো ৯০ মিনিট তাঁকে মাঠে রাখেননি কোচ। ৮৮ মিনিটে তুলে নেন। ম্যাচ হয়তো রোনাল্ডোরা জিতলেন। কিন্তু রোনাল্ডো-সুলভ খেলা কি খেলতে পারলেন তিনি? ঘানার রক্ষণের কাছেই যদি বার বার আটকে যান তা হলে বড় দলের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর হতে পারবেন রোনাল্ডো? জয়ের আনন্দের মধ্যেও কি ছোট্ট একটা কাঁটা খচখচ করছে পর্তুগাল সমর্থকদের মনে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.